আবাসিক সংকট সত্ত্বেও ছাত্রাবাস বন্ধ ১৪ বছর
Published: 21st, January 2025 GMT
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে আবাসিক সংকট প্রকট হলেও প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রাবাস বন্ধ প্রায় ১৪ বছর। পাঁচ বছর আগে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি ছাত্রাবাস তৈরি করা হলেও এখনও তা চালু করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সিট ভাগাভাগি নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কা, হলে বসবাসের পরিবেশ নেই, এমন নানা ছুতোয় ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য যে ছাত্র সংসদ, তারও নির্বাচন হয় না ২৮ বছর।
২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ছাত্রাবাসে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জেরে কলেজের শহীদ আখতার আলী মুন হল, শহীদ তিতুমীর হল এবং শের-ই-বাংলা হলে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। ফলে তিনটি ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ প্রশাসন। ছেলেদের জন্য তৈরি আখতার আলী মুন হলে ৯৬, শহীদ তিতুমীর হলে ৮০ এবং শের-ই-বাংলা হলে ৪০টি আসন। তবে তিনটি ছাত্রাবাস চালু হলে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর আবাসিক সংকট নিরসন হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দুই বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ২০১১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস তিনটি খুলে দিতে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে। অচিরেই ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে, এমন আশ্বাসে পার হয়ে গেছে আরও ১২ বছর। এর মধ্যেই ছাত্রীদের জন্য তৈরি রোকেয়া হলের পাশাপাশি ২৪৫ শিক্ষার্থীর জন্য ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে আরেকটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। সেটিও চালু করা হচ্ছে না। নতুন ছাত্রাবাসটি খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, সেখানেও কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। কবে নাগাদ এসব সংস্কার কাজ শুরু হবে, কলেজ প্রশাসন বলতে পারছে না।
কলেজ প্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ২৯ হাজার ছাত্রছাত্রীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালে। তখন ভিপি-জিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদে নিরঙ্কুশ জয় পায় ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিত প্যানেল। ১৯৯৮ সালে তপশিল ঘোষণার পর স্থগিত করা নির্বাচন ২৮ বছরেও আর হয়নি।
ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্র সংসদ সচল রাখার পক্ষে ছাত্রনেতারা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কলেজ শাখার সদস্য সচিব নিয়তি সরকার নিতু বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলে থাকার সুবিধা পেলে আর্থিক দৈন্যদশা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। ছাত্র সংসদ না থাকায় কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। দুর্নীতি করার সুযোগ পায় কলেজ প্রশাসন। ছাত্র সংসদ থাকলে এ সুযোগ পেত না।
ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ শাখার সভাপতি মো.
কলেজ ছাত্রদলের নেতা আতিকুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ ও ছাত্র রাজনীতি চর্চার পথ বন্ধ রাখলে উপযুক্ত নেতা তৈরি হবে না। তিনি দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচে হল তৈরি করে যদি শিক্ষার্থীদের উপকারে না আসে, তাহলে এসব অর্থ অপচয়ের শামিল।
এ বিষয়ে কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শওকত আলম মীর বলেন, আমি চাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব ছাত্রাবাসগুলো খুলে দিতে। এ জন্য কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। সেগুলো করে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেব। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেশের অন্যান্য কলেজে শুরু হলে এখানেও হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।