সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেতে পারবেন শুধু কৃষক
Published: 23rd, January 2025 GMT
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে কৃষক ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না বলে আলোচনায় ঐকমত্যে এসেছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। গতকাল বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বিওপির সম্মেলন কক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের সৌজন্য বৈঠকে এ আলোচনা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে দুই দফা উত্তেজনা ও সীমান্তবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের পর এ বৈঠক হলো। এতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী বিভাগের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে এ রউফ এবং বিএসএফের পক্ষে ছিলেন মালদা সেক্টরের ডিআইজি অরুণ কুমার গৌতম। এ সময় মহানন্দা ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া, ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সুরজ সিংসহ উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিজিবি-বিএসএফ নিজ দেশের সীমান্তে কার্যক্রম চালানো এবং কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এ ছাড়া চারটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়। সেগুলো হলো– উভয় পক্ষ সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশি এবং ভারতীয় কৃষক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, সীমান্তে যে কোনো সমস্যা বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে সমাধান করা, উভয় দেশের গণমাধ্যমে সীমান্ত সম্পর্কিত অপপ্রচার কিংবা গুজব ছড়ানো বন্ধ করা এবং অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান থেকে নিজ দেশের জনগণকে বিরত রাখা।
এ বিষয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সাক্ষাৎ হয়েছে এবং উভয় বাহিনী সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলতে একমত।
এদিকে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উচনা সীমান্তে পতাকা বৈঠকের পর বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া বন্ধ করলেও নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেয়নি। গত মঙ্গলবার ভোরে বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে উচনা সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ৩০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ পিছু হটে। এর পর বিকেলে পতাকা বৈঠকে কাঁটাতারের বেড়া ও নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত নির্মাণসামগ্রী সরানো হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল বাছেদ বলেন, এর আগেও বিএসএফ দু’বার বেড়া দিতে এসেছিল। তখনও বিজিবির বাধায় তারা সরে গেছে। তবে কখন কী হয়, বলা যায় না। আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। এর একটা সমাধান চাই।
জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান হবে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে সীমান্ত এলাকা থেকে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বাড়ি থেকে রাজু ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে ওই সীমান্তে বিএসএফের গুলির কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় সদর থানা-পুলিশ। নিহত রাজু ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ঝুলিপাড়া এলাকায়। তিনি বিবাহিত এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়ে আছে।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, রাজু গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। এরপর তিনি কখন বাইরে গেছেন, স্বজনদের কেউ জানেন না। রাত তিনটার দিকে তাঁকে কে বা কারা বাড়ির বাইরে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। এ সময় তাঁর চিৎকারে স্বজনেরা ঘুম থেকে উঠে আহত অবস্থায় তাঁকে দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দেবীগঞ্জ উপজেলার কাছাকাছি গেলে তিনি মারা যান। পরে লাশ বাড়িতে আনা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, প্রথম দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাজু স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করে মারা গেছেন। পরে তিনি গিয়ে দেখেন, তাঁর দুটি পায়ের হাঁটু ও আশপাশে গুলির চিহ্ন। ভারত সীমান্তে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে তিনি মারা গেছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। কারণ, তাঁর পায়ে স্পষ্ট গুলির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সকালে বিষয়টি জানাজানির পর বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে ওই এলাকায় বিজিবির দুটি টহল দল দায়িত্বরত ছিল। তখন সীমান্তে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএসএফও গুলি করেনি বলে জানিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকে প্রথম দিকে তাঁদের জানানো হয়, তিনি হৃদ্রোগে মারা গেছেন। তবে তিনি যে আহত হয়েছেন, সেটা সীমান্ত এলাকায় হয়েছেন নাকি বাংলাদেশের ভেতরে হয়েছেন, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন আছে, সেটি তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে গুলি কারা করেছে বা কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।