কৃষক সমাবেশের জন্য ‘৬৫ লাখ টাকা’ চেয়ে আবেদন, চিঠি ভাইরাল
Published: 23rd, January 2025 GMT
কুড়িগ্রামে কৃষক সমাবেশ আয়োজনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩০ হাজার কৃষকের খাবারের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে করা আবেদনের চিঠি ঘিরে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চিঠিতে ভিআইপিদের জন্য আরো ৫০ হাজার এবং স্টেজসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষক নাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
আগামী ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণাও।
বরাদ্দ চেয়ে করা আবেদনের চিঠিতে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে মাধ্যম করে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ৩০ হাজার কৃষকের প্রতিজনকে ২০০ টাকা করে ৬০ লাখ ও অন্যান্য খরচ বাবদ সাড়ে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশের জন্য মোট ব্যয় ধরা ধরা হয়েছে এসব টাকা
আহ্বায়কের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “বিনীত নিবেদন এই যে, কৃষক-জেলে-তাঁতিরা যুগ-যুগান্তের বঞ্চিত ও ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠী। তাদের দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে আগামী ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে উপস্থিত থাকবেন রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের সব জেলার কৃষকরা। আশা রাখি, লক্ষাধিক কৃষক এতে উপস্থিত হবেন।
আমরা তাদের মধ্যে মাত্র ৩০ হাজার কৃষককে এক বেলা আহার করাতে ইচ্ছুক। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)।”
চিঠির নিচের ছকে যেখানে ব্যয় বিবরণীতে লেখা আছে- ৩০ হাজার কৃষক-জেলেদের খাবারে জন্য ২০০ টাকা হারে ৬০ লাখ, ভিআইপি ১০০ জনের খাবারের জন্য ৫০০ টাকা হারে ৫০ হাজার টাকা এবং স্টেজ, সাউন্ড সিস্টেম, গেট, লাইটিং, বসার ব্যবস্থা, তোরণ ও অন্যান্য ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক সমাবেশে উদ্বোধক হিসেবে উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কারাবন্দি নেতা কনক রহমান, জাতীয় নাগরিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, লেখক ও সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান, রাখাল রাহা, পাভেল পার্থ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি আহমেদ ইসহাক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাছির উদ্দিন, কৃষক দেলোয়ার জাহানসহ জাতীয় ও স্থানীয় সংগঠক ও বুদ্ধিজীবীরা। এসব অতিথির উপস্থিতির কথা জানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।
জেলে-তাঁতি-কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটির আয়োজনে আগামী ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছে সফি আলম রাজা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
ইমতে আহসান শিলু নামে এক সাংস্কৃতিক সংগঠক তার ফেসবুক পোস্টে চিঠিটি দিয়ে লেখেন, “বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে মো.
এ বিষয়ে ইমতে আহসান শিলুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “এটা কৃষকের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।”
কুড়িগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ তার ফেসবুকে লেখেন, “সমাবেশ করবেন আপনারা, খরচের টাকা চেয়ে আবেদন করবেন সরকারের কাছে। এটা কোন ধরনের আবদার।”
ভাইরাল হওয়া চিঠির বিষয়ে নাহিদ হাসান নলেজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “হাট-ঘাটের ইজারা বাতিল, কৃষকদের উৎপাদিত পণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও চরের মানুষের নদী ভাঙনের বিষয় নিয়ে একটি ঐতিহাসিক কৃষক সমাবেশের আয়োজন করেছি। এই কৃষক সমাবেশ পাবনার কৃষক, কক্সবাজারের লবন চাষীরাসহ সারাদেশ থেকে লোজন আসবেন। আমরা তো সরকারের কাছে আবেদন করতেই পারি। আমরা কৃষকদের একবেলা খাওয়াতে চাই। যদি সরকার দেয় দেবে। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্র পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা ডিম ও খিচুরি খাওয়াইতে চাইছিলাম। কিন্তু সরকারের লোকজনই বলেছে, যে ৬০ টাকা হবে কেন? আপনারা মুরগি দিয়ে খাওয়ান। এতে কৃষক প্রতি গড়ে ২০০ টাকা করে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। মহাসমাবেশে ৩০ হাজারের অধিক লোক হবে। এই ৩০ হাজার কৃষকের জন্য ৬০ লাখ টাকা লাগছে। তার সঙ্গে ডেকোরেটরের ভাড়া, উপজেলা পরিষদে অতিথিরা খাবেন। সবমিলে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাজেট দিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “টাকা কি আমরা পেয়েছি? সরকার আমাদের টাকা দিলে দেবে, না দিলে নাই। আবেদন করেছি মাত্র। একটি আবেদন নিয়ে শিশু সুলভ কথাবার্তা আমি হাস্যকর ঘটনা বলে মনে করছি।”
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ও মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা আসবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন কৃষক মহাসমাবেশের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান নলেজ। তিনি বলেন, “তারা না আসলেও সমবাবেশ হবে।”
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, “আমাদের কাছে চিঠি আসায় তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ দেবে কি দেবে না সেটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।”
ঢাবা/বাদশাহ/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ ত থ ক ৫০ হ জ র ২০০ ট ক উপদ ষ ট সরক র র ব যবস থ ফ সব ক র জন য ৬০ ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল