কুড়িগ্রামে কৃষক সমাবেশ আয়োজনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩০ হাজার কৃষকের খাবারের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে করা আবেদনের চিঠি ঘিরে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চিঠিতে ভিআইপিদের জন্য আরো ৫০ হাজার এবং স্টেজসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। 

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষক নাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

আগামী ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণাও।

বরাদ্দ চেয়ে করা আবেদনের চিঠিতে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে মাধ্যম করে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ৩০ হাজার কৃষকের প্রতিজনকে ২০০ টাকা করে ৬০ লাখ ও অন্যান্য খরচ বাবদ সাড়ে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশের জন্য মোট ব্যয় ধরা ধরা হয়েছে এসব টাকা

আহ্বায়কের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “বিনীত নিবেদন এই যে, কৃষক-জেলে-তাঁতিরা যুগ-যুগান্তের বঞ্চিত ও ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠী। তাদের দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে আগামী ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে উপস্থিত থাকবেন রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের সব জেলার কৃষকরা। আশা রাখি, লক্ষাধিক কৃষক এতে উপস্থিত হবেন।

আমরা তাদের মধ্যে মাত্র ৩০ হাজার কৃষককে এক বেলা আহার করাতে ইচ্ছুক। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকা‌রের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)।”

চিঠির নিচের ছকে যেখানে ব্যয় বিবরণীতে লেখা আছে- ৩০ হাজার কৃষক-জেলেদের খাবারে জন্য ২০০ টাকা হারে ৬০ লাখ, ভিআইপি ১০০ জনের খাবারের জন্য ৫০০ টাকা হারে ৫০ হাজার টাকা এবং স্টেজ, সাউন্ড সিস্টেম, গেট, লাইটিং, বসার ব্যবস্থা, তোরণ ও অন্যান্য ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক সমাবেশে উদ্বোধক হিসেবে উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কারাবন্দি নেতা কনক রহমান, জাতীয় নাগরিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, লেখক ও সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান, রাখাল রাহা, পাভেল পার্থ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি আহমেদ ইসহাক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাছির উদ্দিন, কৃষক দেলোয়ার জাহানসহ জাতীয় ও স্থানীয় সংগঠক ও বুদ্ধিজীবীরা। এসব অতিথির উপস্থিতির কথা জানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।

জেলে-তাঁতি-কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটির আয়োজনে আগামী ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছে সফি আলম রাজা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

ইমতে আহসান শিলু নামে এক সাংস্কৃতিক সংগঠক তার ফেসবুক পোস্টে চিঠিটি দিয়ে লেখেন, ‍“বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে মো.

নাহিদ হাসান এর আহ্বানে কৃষকের জন্য খাবার বরাদ্দ ২০০ টাকা আর ভিআইপিদের খাবার ৫০০ টাকা।

এ বিষয়ে ইমতে আহসান শিলুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “এটা কৃষকের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।”

কুড়িগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ তার ফেসবুকে লেখেন, “সমাবেশ করবেন আপনারা, খরচের টাকা চেয়ে আবেদন করবেন সরকারের কাছে। এটা কোন ধরনের আবদার।”

ভাইরাল হওয়া চিঠির বিষয়ে নাহিদ হাসান নলেজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “হাট-ঘাটের ইজারা বাতিল, কৃষকদের উৎপাদিত পণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও চরের মানুষের নদী ভাঙনের বিষয় নিয়ে একটি ঐতিহাসিক কৃষক সমাবেশের আয়োজন করেছি। এই কৃষক সমাবেশ পাবনার কৃষক, কক্সবাজারের লবন চাষীরাসহ সারাদেশ থেকে লোজন আসবেন। আমরা তো সরকারের কাছে আবেদন করতেই পারি। আমরা কৃষকদের একবেলা খাওয়াতে চাই। যদি সরকার দেয় দেবে। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্র পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।” 

তিনি বলেন, “আমরা ডিম ও খিচুরি খাওয়াইতে চাইছিলাম। কিন্তু সরকারের লোকজনই বলেছে, যে ৬০ টাকা হবে কেন? আপনারা মুরগি দিয়ে খাওয়ান। এতে কৃষক প্রতি গড়ে ২০০ টাকা করে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। মহাসমাবেশে ৩০ হাজারের অধিক লোক হবে। এই ৩০ হাজার কৃষকের জন্য ৬০ লাখ টাকা লাগছে। তার সঙ্গে ডেকোরেটরের ভাড়া, উপজেলা পরিষদে অতিথিরা খাবেন। সবমিলে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাজেট দিয়েছি।” 

তিনি আরো বলেন, “টাকা কি আমরা পেয়েছি? সরকার আমাদের টাকা দিলে দেবে, না দিলে নাই। আবেদন করেছি মাত্র। একটি আবেদন নিয়ে শিশু সুলভ কথাবার্তা আমি হাস্যকর ঘটনা বলে মনে করছি।”

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ও মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা আসবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন কৃষক মহাসমাবেশের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান নলেজ। তিনি বলেন, “তারা না আসলেও সমবাবেশ হবে।” 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, “আমাদের কাছে চিঠি আসায় তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ দেবে কি দেবে না সেটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।”

ঢাবা/বাদশাহ/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ ত থ ক ৫০ হ জ র ২০০ ট ক উপদ ষ ট সরক র র ব যবস থ ফ সব ক র জন য ৬০ ল খ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের

দীর্ঘ ২২ বছর পর আবার চাকা ঘুরতে যাচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের। এরই মধ্যে কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার জনের। সরকারি মালিকানাধীন বস্ত্রকলটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। আজ সোমবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারখানাটি পরীক্ষামূলক চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিপিপিতে নেওয়ার পর রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের নাম বদলে রাখা হয়েছে বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি পুরোদমে চালু হলে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আজ দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএলের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল, গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টি লাইন ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান, গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান ও বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রাজশাহীতে অবস্থিত সরকারি এই টেক্সটাইল মিলটি ২২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি পিপিপিতে চালুর উদ্যোগ নেয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রায় ২৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাকে প্রাণ-আরএফএল উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানাটিতে তৈরি হবে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, জুতা ও তৈরি পোশাক। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটিতে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবরে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিসেম্বরে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয় গ্রুপটি। এরপর তিন মাসের মাথায় কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটি পুরোদমে চালু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে তারা উত্তরবঙ্গে এই বৃহৎ শিল্প প্রকল্প শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে রাজশাহীর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে।

আনিসুর রহমান বলেন, কারখানায় বর্তমানে সীমিত পরিসরে জুতা ও ব্যাগ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে রাজশাহীর প্রায় এক হাজার লোক কাজের সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হবে।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে কারখানা চালু করার প্রক্রিয়ায় কয়েক শ গাছ ও পুকুর ভরাটের বিষয়ে রাজশাহীতে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনও করেছে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তাঁরা সঠিক উপায় অবলম্বন করেই এগুলো করেছেন। বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন। তার বিপরীতে তিন হাজার নতুন গাছ লাগানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২২ বছর পর চালু হচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল
  • ২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের