ফেসবুকে স্টক মার্কেটের একটি বিজ্ঞাপন দেখে অ্যাপসের মাধ্যমে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগের পর ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তাঁর বিনিয়োগের অর্থ বেড়ে ডিজিটাল ওয়ালেটে দেখায় ৬৪ লাখ ৫ হাজার ২৮৭ টাকা। কিন্তু একটি টাকাও তিনি তুলতে পারেননি। বিনিয়োগসহ লভ্যাংশের টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা তাঁকে আরও বিনিয়োগের পরামর্শ দেন। এ নিয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা হলে চক্রের বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডেমরা থেকে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তাররা হলেন পাপ্পু কুমার সেন ও মো.

কাওসার। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ১৫০টি সিম কার্ড, একটি হার্ডডিস্ক, মোবাইলসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী।

সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (সাইবার) সুমন কুমার সাহা বলেন, ভুক্তভোগী ফেসবুক ব্যবহারের সময় আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটের বিজ্ঞাপন দেখে লিংকে প্রবেশ করেন। এরপর অজ্ঞাত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তাঁর নম্বরে মেসেজ আসে। পরে আসামিরা ধাপে ধাপে নাম, এনআইডি, মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করিয়ে নেয়। তারা বাদীকে দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে। সেখানেও ভুক্তভোগীর পরিচিত অনেকে যুক্ত ছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ট্রেডিং বিষয়ে কথাবার্তা হয়। আসামিদের কথামতো ভুক্তভোগী বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ টাকা বিনিয়োগ করেন।

সুমন কুমার সাহা জানান, ওই অ্যাপসে ট্রেড করার পর ভুক্তভোগীর ডিজিটাল ওয়ালেটে প্রায় ৬৪ লাখ ৫ হাজার ২৮৭ টাকা দেখায়। পরে গ্রেপ্তার আসামিরা ভুক্তভোগীর সিটি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় হিসাব নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা ডিপোজিট করে। পরে আসামিদের কাছে তাঁর বিনিয়োগের টাকা ফেরত চাইলে তারা আরও বিনিয়োগ করতে বলে। একপর্যায়ে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, আসামিরা যোগসাজশে এনআইডি কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে সিম কার্ড সংগ্রহ করে। এ সিম কার্ড টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে। এসব নম্বর দিয়ে প্রতারণা করে আসছে চক্রটি। তারা ভুক্তভোগীদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কৌশলে দেশের বাইরে পাচার করছে। গ্রেপ্তার দু’জনকে আদালতে তোলা হলে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আজ শুক্রবার ইসরায়েল হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এতে জ্বালানির তেলের জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এ ছাড়া মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৪৩ ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৭ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছিল, যা কিনা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মানে হচ্ছে দুনিয়াজুড়ে সুপারমার্কেটে খাবারের দাম, গাড়িতে তেল ভরার খরচ, পরিবহন ব্যয়—সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনই বলা কঠিন, তবে সম্ভবত হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।’

হরমুজ প্রণালি বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো এই পথ দিয়েই তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও জানান, চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েলকে এ হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলা একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে তেহরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (তেহরান) যেন মার্কিন স্বার্থ বা ব্যক্তিদের লক্ষ্য না করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা বলেন, ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে শুধু তেলের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাবে না, আশপাশের অন্যান্য তেল উৎপাদকদের দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
  • গাইবান্ধায় যাত্রীদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে মারধরের শিকার স্টেশনমাস্টার
  • মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আটক
  • জ্বালানির দাম বাড়ল ৯ শতাংশের বেশি
  • ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা