দিনভর নাটক, নতুন অভিজ্ঞতার পর বিপর্যস্ত ও বিরক্ত দলের এক হয়ে ওঠার গল্প
Published: 27th, January 2025 GMT
তাসকিন আহমেদ হাসছেন। প্রশ্নটা বিব্রতকর। যেকোনো পেশাদার খেলোয়াড়ের জন্য হতাশাজনক। কিন্তু ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার’ অবস্থানে থাকায় সুদর্শন পুরুষের মুখে হাসি ছাড়া আর যে কোনো উপায় নেই!
‘‘আমার জীবনে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো। ম্যাচের দিন আমরা হোটেল পরিবর্তন করলাম। মাঠে আসার দুই ঘণ্টা আগে শুনলাম বিদেশি ক্রিকেটার কেউ আসবেন না।’’ ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এ-ও সম্ভব?
দুর্বার রাজশাহী দলে খেলে দিনভর যে নাটকের সাক্ষী হতে হয় অধিনায়ককে…এরপর মাঠে নেমে পারফর্ম করে, দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জেতাতেও হয়। নিজের প্রতি বীরত্ব দেখানোর জন্যও তাকে আবার হাসতে হয়।
হাসতে হাসতেই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সত্যি বলতে, দিনের শুরু থেকে সব খেলোয়াড়দের অনেক ড্রামা দেখেছি। পরবর্তীতে শুনেছি টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়েছে, টাকা দিয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু, কেউ গেট-ই খুলেনি। শেষ পর্যন্ত আমরা স্থানীয় ক্রিকেটাররাই ছিলাম।’’
ম্যাচের দিন সকালে টিম হোটেল পরিবর্তন। ২০১৩ সাল থেকে পেশাদার ক্রিকেট খেলা তাসকিনের প্রথম অভিজ্ঞতা। গতকাল সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে জানতে পারেন রুম ছেড়ে দিতে হবে। অগত্যা বেরিয়ে পরেন নতুন গন্তব্যে। সেখানে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া করছিলেন। তখনই খবর আসে, দলের বিদেশি ক্রিকেটাররা মাঠে যাবেন না পারিশ্রমিক পাননি বলে। নিজে সতীর্থদের বুঝিয়েও রাজী করাতে পারেননি। পরে বোর্ড থেকে ফোন করে আশ্বস্ত করায় স্থানীয় ১১ ক্রিকেটারকে নিয়ে মাঠে নামতে হয় রাজশাহীকে।
স্থানীয় শক্তিতে বলিয়ান হয়ে মাঠে সত্যি-ই দুর্বার রাজশাহী। টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সকে ২ রানে হারিয়ে দেয়। অগোছালো দলে এই জয় স্বস্তির পরশ আসলেও কীভাবে সম্ভব হয়েছে তা জানাতে গিয়ে খোলা মনে তাসকিন বলেছেন, ‘‘টিম অ্যাফোর্ট, সবার অবদান ও দিল (হৃদয়) থেকে চেষ্টা করার রিওয়ার্ডটা শেষে পাওয়া গেছে। শুরুর দিকে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিরক্ত ছিলাম। কিন্তু, পরে তো দেখলেনই। জিতে গেলাম আল্লাহর রহমতে।’’
বিপিএল এমনিতেই সমালোচনায় ভরা। নবাগত দল দুর্বার রাজশাহীকে ঘিরে সমালোচনাটা আরো বেশি। অগোছালো পরিবারে নেই একটু স্বস্তি, পেশাদারিত্ব। আজ এই সমস্যা তো কাল ওই সমস্যা। নানা কারণে, নানা জটিলতায় আটকে থাকায় দলটিতে খেলার মানসিকতা ও পরিবেশ থাকে কিনা সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল তাসকিনকে। যিনি মাত্র তিন ম্যাচ আগে এনামুল হক বিজয়ের পরিবর্তে দলটির নেতৃত্ব পেয়েছেন।
তাসকিন যা বললেন তাতে দাঁড়ায়, ক্রিকেট আয় রোজকারের তাদের একমাত্র উপায় বলে খেলাটা এখন নিজেদের জন্যই তারা খেলছেন। সামনে তা-ই করবেন।
‘‘আমি আসলে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। উপভোগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কেননা ক্রিকেটই আমার ব্রেড অ্যান্ড বাটার। প্যাশন। মাঠে আমরা উপভোগ করেছি সবাই। স্থানীয় ক্রিকেটারদেরও কিন্তু তেমন বড় নাম নেই দু-তিনজন ছাড়া। বিদেশিরা তো খেলেননি। আমরা সবাই বলেছি, ‘‘লেটস ট্রাই’’। সবাই অনেক ইতিবাচক ছিল। আমি উপভোগ করেছি প্রতিটি মুহূর্ত। সাহস করে করে পরিবর্তন করেছি। যেই যখন বোলিং করেছে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছে। প্রত্যেকেই বুঝেছিল আমাদের হারানোর তেমন কিছু নেই। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে দেখতে পারি শেষ পর্যন্ত কি হয়। শেষে তো আমাদের পক্ষেই ফল এসেছে।’’
ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদের এমন অপেশাদারিত্ব সুলভ আচরণ ক্রিকেটারদের অনুভূতিতে আঘাত আনে জানিয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘‘সত্যি বলতে, শুধু আমি না দলের ভেতরে কেউই এরকম যখন ঘটে ভালো অনুভব করে না। বিপিএল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে আমাদের সবার একটা প্রত্যাশা থাকে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থেকে খেলব। যে পরিমাণে ক্রাউড হচ্ছে, আগের চেয়ে জমজমাট বিপিএল হচ্ছে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দলে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছিল।’’
খেলাটা এখন তাসকিনদের কেবল নিজেদের জন্যই, ‘‘সবাই মিলে একটা কথাই বারবার বলছিলাম যে, যেহেতু আমাদের সবার নিজেদের প্রমাণ করার জায়গা একটা, যতই সমস্যা হোক এগুলো একটা সাইডে রেখে মাঠে উপভোগ করতে হবে। সবার ব্রেড অ্যান্ড বাটার, ক্যারিয়ার, জাতীয় দল সবকিছু, নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ এটাই। তো এই জিনিসগুলোই আমাদের দলের সবাইকে বুষ্ট আপ করেছে। অনুভূতিটা অবশ্যই নাইস না। এর মধ্য দিয়েও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’’
রাজশাহীর ‘অভাবের সংসারে গোবরে পদ্মফুল’ ফোটানোর চেষ্টায় রাজশাহীর অধিনায়ক, ‘‘অনেক কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমার মনে হয় এতো সমস্যার মধ্য দিয়ে, এতো চাপের মধ্যে থেকে খেলাটা ভবিষ্যতে উপকারে আসবে। এতো চাপের মধ্যে ভালো খেললে সামনে খেলাটা সহজ হয়ে যাবে।’’
তাসকিন হাসেন। হাসতেই থাকেন। হাসির আড়ালে কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন। ওই কষ্টও আড়াল হয়ে যায় ক্ষণিকের জন্য। জয়ের আনন্দে। কিন্তু দাগটা থেকে যায়। হাসিতেও তা মুছে না।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।