ঢাকা ওয়াসার জনবল কাঠামোয় পরিচালক বলে কোনো পদ নেই। অথচ সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দু’জনকে পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে দু’জন পরিচালকও রয়েছেন। তাদের একজন সংস্থাটিতে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে কর্মরত। শুধু এ দু’জনই নয়, তাকসিম আমলে এ রকম ডজনখানেক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। তাদের প্রায় সবাই আছেন বহাল তবিয়তে। এদের বেতন-ভাতা গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
সমকালের অনুসন্ধানে জনবল কাঠামোর বাইরে ১০ জনের সন্ধান মিলেছে। এদের প্রত্যেকেই উচ্চ বেতনে ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত। এ ঘটনায় ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে আসামি শুধু দু’জন কেন?

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান সমকালকে বলেন, অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূতভাবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের খোঁজা হচ্ছে। এ জন্য জনবল কাঠামো সংস্কারের জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ২৫২তম বোর্ড সভায় আট সদস্যের উপস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো.

আবুল কাশেমকে পরিচালক (উন্নয়ন) এবং আরেক সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে পরিচালক (কারিগরি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা সাড়ে চার বছর বেতন-ভাতা বাবদ ওয়াসার তহবিল থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা বেআইনিভাবে বেতন তুলেছেন। আবুল কাশেম ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ২৭১ টাকা এবং সহিদ উদ্দিন ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৭০৯ টাকা বেতন-ভাতা নেন। দফায় দফায় তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়। 
পরবর্তী সময়ে সহিদ উদ্দিনকে ডিএমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবুল কাশেমও ডিএমডি পদে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে করা হয়নি। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সহিদ উদ্দিনকে ডিএমডি (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর ৮ সেপ্টেম্বর আবুল কাশেমকে এমডির উপদেষ্টা হিসেবে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। উপদেষ্টার কোনো পদ নেই। 

এ ছাড়া একইভাবে তাকসিম আমলে অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূতভাবে মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা, ইকবাল রাকিবকে সহকারী আইন কর্মকর্তা ও মাকসুদুল হাসানকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন সাবেক এমডি। তাদের প্রত্যেকেরই বেতন-ভাতা অনেক বেশি। এর বাইরে তাদের গাড়ি, চালক ও জ্বালানিও সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। একইভাবে হিসাব বিভাগে ভ্যাট ও ট্যাক্স কর্মকর্তা হিসেবে লিটন রায়, মেঘনাথ কুমার ও রবি সিংকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান ফয়সাল আহমেদ ও সায়ন্ত পপি। তারাও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।
এদিকে ঢাকা ওয়াসার অর্গানোগ্রাম সংস্কারের জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এরপর জনবল কাঠামোবহির্ভূত নিয়োগের প্রসঙ্গটি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আলোচনায় ঘুরেফিরে আসে। তারা বলছেন, তাকসিম আমলে যাদের এভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, প্রত্যেকে তাঁর নিজের লোক। ঢাকা ওয়াসার নিয়মিত জনবলের ওপর তারা সব সময় ছড়ি ঘুরিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাকসিম এ খান পালিয়ে গেলেও তাঁর সিন্ডিকেট ‘রাজত্ব’ করছে। 
অবশ্য অর্গানোগ্রাম সংস্কার কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা ওয়াসার সচিব মসিউর রহমান খান সমকালকে বলেন, কমিটি ইতোমধ্যে দুটি বৈঠক করেছে। অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত হলে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যাবেন। এদিকে গত ৮ জানুয়ারি অর্গানোগ্রাম-বহির্ভূতভাবে সহিদ উদ্দিন ও আবুল কাশেমকে নিয়োগ দেওয়ায় এ দু’জন ছাড়াও সাবেক এমডি তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, ওয়াসা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান এবং পাঁচ বোর্ডের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনবল ক ঠ ম র র জন য ড এমড সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই