শিশু শ্রম নিরসনে সরকার বদ্ধ পরিকর : এম সাখাওয়াত হোসেন
Published: 30th, January 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সকল সেক্টরে শিশু শ্রম নিরসনে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর শ্রম ভবনে “জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ” এর ১২ তম সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাতে দেখা যায়। আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে ও ইটভাটাসহ বিভিন্ন সেক্টরে শিশু শ্রম বেশি পরিলক্ষিত হয়। যা অনাকাঙ্ক্ষিত।”
এ অবস্থার পরিবর্তনে জন্য সকল পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়াও তিনি বলেন, “শিশুশ্রম কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি পুরো বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও সংগঠনকে নিজ নিজ দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করা প্রয়োজন।”
উপদেষ্টা বলেন, “শিশু শ্রম নিরসনে কর্মশালা আয়োজন করে কমিটির কার্যপরিধি চূড়ান্ত করা হবে।”
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “আইএলও কনভেনশন-১৩৮ এ শিশুশ্রম বন্ধ সম্পর্কে বলা আছে। আমরা আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করছি। শিশুশ্রম নিরসনে কার্যক্রমগুলো নির্দিষ্ট করতে হবে। জাতীয় কমিটির মাধ্যমে ঠিক করবো, কোন সংস্থা কীভাবে কাজ করবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এনজিওগুলোও তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করবে।”
সভায় সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণী বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বিগত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, শিশুশ্রম নিরসনে বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম বিষয়ক উপস্থাপনা, শিশুশ্রম নিরসনে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটির কার্যক্রম সংক্রান্ত আলোচনা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শিশুশ্রম নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ এবং শিশুশ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।
সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ, আইএলও এর প্রতিনিধি, বিজিএমইএ , মানবাধিকার কমিশন, ইউনিসেফ , শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন , বাংলাদেশ ইমপ্লোয়ার্স ফাউন্ডেশন, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, অপরাজেয় বাংলাদেশ, শাপলা নীড়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় শ্রমিক দল, সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস সংহতি ফেডারেশন, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, শিশুপল্লি নিবাস, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, কারিতাস বাংলাদেশ এবং গ্রাম বাংলা এর প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।