বাক্প্রতিবন্ধী আসকর আলী (৬২) চলাফেরা করতে পারেন না। চোখেও দেখেন না ঠিকমতো। এই বয়সে সাধারণত মানুষ অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে স্ত্রী-সন্তান বা স্বজনের ওপর। আসকর আলীর তেমন কেউ নেই। ঘরবন্দি এই মানুষটার দিনযাপনের একমাত্র অবলম্বন অশীতিপর মা কয়েদ ভানু। অতিদরিদ্র মা-ছেলের নেই বসবাস করার মতো একখণ্ড জমি। অন্যের জায়গায় ছোট্ট একটা ঘরে কোনোমতে দিন কাটে তাদের। রোজগার করার মতো কেউ না থাকায় দিনে একমুঠো ভাত জুটবে কিনা, এ নিয়েও প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় মা-ছেলেকে।
তাদের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার দুর্গম গ্রাম কাশিয়াবাড়িতে। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে একটু রোদের উষ্ণতা পেতে ঘরের আঙিনায় খড়ের ওপর পাশাপাশি মা-ছেলে বসে আছেন। মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে শিশুর মতো শীতে জড়সড়ো হয়ে আছেন শীর্ণকায় আসকর আলী। বাক্প্রতিবন্ধী আসকর স্বভাবতই কথা বলতে পারেননি। তবে জীবনের প্রতি পাহাড়সমান অভিযোগ নিয়ে কিছু কথা বলেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মা কয়েদ ভানু।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই স্বামী আলতাফ হোসেন ছেড়ে যান কয়েদ ভানুকে। নিজেরই কোনো ঠাঁই নেই, সঙ্গে ছোট্ট দুটি মেয়ে আর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তখন তিনি যেন পড়েন অথই সাগরে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বয়সের ভারে ন্যুব্জ কয়েদ ভানু বলেন, ‘স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর ছোট তিন বাচ্চা নিয়ে রাস্তার ধারের খুপরি ঘরে, মানুষের গোয়াল, আবার কখনও ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় রাত কাটিয়েছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ওদের খাইয়েছি। মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিলেও অসুস্থ ছেলেকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। এমন নিষ্ঠুর জীবন যেন আর কারও না হয়।’
বয়স হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েক বছর হলো কয়েদ ভানু কাজ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাও করেছেন কিছুদিন। তবে এখন ভিক্ষা করার শারীরিক সক্ষমতাও তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি জানান, রান্নাবান্নার কাজও করতে পারেন না। মেয়েদের যেখানে বিয়ে হয়েছে, তাদেরও নুন আনতে পানতা ফুরায়। ফলে মা-ছেলেকে দেখার মতো কেউ নেই। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতাও ভাগ্যে জোটেনি। বয়স্ক ভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতাও পান না। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গৃহহীন, ভূমিহীন অনেকে নাকি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দাতে মা-ছেলের বহু রাত অর্ধাহারে, অনাহারে কাটলেও তারা কিছু পাননি।
সম্প্রতি মা-ছেলের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তামিম মিডিয়া’। সংগঠনটির উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম তামিম বলেন, বৃদ্ধ অসহায় মা-ছেলেকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দা থেকে এনে নিজেদের জায়গায় ঘর তুলে দিয়েছি। কিন্তু তাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার। তারা যেন প্রতিবন্ধী ভাতা ও বয়স্ক ভাতা পান, এটা নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী ইউএনও কামরুল ইসলাম বলেন, কয়েদ ভানুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি বৃদ্ধ মা-ছেলের পরিচর্যার জন্য সপ্তাহের তিন দিন নার্স পাঠানো হবে সেখানে।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ফজলুর রহমান
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম ঘোষণা করেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসন থেকে প্রাথমিকভাবে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আসন্ন নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে ভোটের মাঠে লড়বেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। তবে, ঘোষিত প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হতে পারে।’’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই লক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
ঢাকা/রাজীব