ইউরোপায় শীর্ষ আটে ম্যানচেস্টার ও টটেনহ্যাম
Published: 31st, January 2025 GMT
উয়েফা ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বের শেষ রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি, ২০২৫) রাতে। চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো ইউরোপার রাতেও ফুটবল বিশ্ব আরেকবার ১৮ ম্যাচের মহরণের সাক্ষী হলো। তবে বড় দলগুলো আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলায় এ রাতের ম্যাচগুলো ঘিরে উত্তেজনা ছিল কিছুটা কম।
এবারের ইউরোপা খেলা সবচেয়ে বড় দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শীর্ষ আটে থেকে সরাসরি পৌঁছে গেছে শেষ ষোলো। আরেক ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারও সরাসরি শেষ ষোলোর টিকিট পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৩২ দলের রবিন রাউন্ড পদ্ধতির গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে স্টুয়া বুখারেস্টকে ২–০ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর নেড়েচেড়ে বসে রেড ডেভিলরা। ম্যাচের ৬০ মিনিটে প্রথমে গোল করেন পর্তুগিজ ফুলব্যাক দিয়াগো ডালট। ৮ মিনিট পর ম্যাচের দ্বিতীয় ও শেষ গোলটি করেছেন কোবি মাইনু। এই ম্যাচ জিতে ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে ইউনাইটেড।
আরো পড়ুন:
রোনালদোর রেকর্ড, ‘রেকর্ডের রোনালদো’
নারী ফুটবলাররা বাটলারকে কোচ হিসেবে না চাওয়ার যত কারণ
আরেক ইংলিশ ক্লাব স্পার্স প্রিমিয়ার লিগে ধুঁকতে থাকলেও জয়ের দেখা পেয়েছে মহাদেশীয় দ্বিতীয় স্তরের এই আসরে। ড্যান স্কারল্যাট, ডামোলা এজাই এবং মিকি মুরের গোলে এলফসবোর্গের বিপক্ষে ৩–০ গোলের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে তারা। এই জয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে টটেনহাম শেষ করেছে চার নম্বরে থেকে।
টেবিলের শীর্ষ স্থানটি অবশ্য লাৎসিওর। যদিও বৃহস্পতিবার রাতে ইতালিয়ান ক্লাবটি ১–০ গোলে হেরে গেছে ব্রাহার কাছে। এই জয়ের ফলেও ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ২৫ নম্বরে থেকে আসর থেকে বাদ পড়েছে পর্তুগিজ ক্লাব ব্রাহা। অন্যদিকে প্রথম সাত ম্যাচে অপরাজিত থাকা লাৎসিও শেষ ম্যাচে হোঁচট খেয়েও, টেবিলে কোন পরিবর্তন হয়নি তাদের। টেবিলের তৃতীয় স্থানটি স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের।
ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর কয়েকটি অবশ্য সরাসরি শেষ ষোলোর টিকিট আদায় করতে পারেনি। যে তালিকায় এএস রোমা, আয়াক্স, পোর্তো ও রিয়াল সোসিয়েদাদের মতো ক্লাবগুলো। প্লে–অফ জিতেই শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করতে হবে তাদের।
শীর্ষ আটে থাকা ক্লাব গুলো সরাসরি শেষ ষোলোতে খেল্বে। এই তালিয়ায় আছে, লাৎসিও, অ্যাথলেটিক বিলবাও, ইউনাইটেড, টটেনহ্যাম, এইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট, লিও, অলিম্পিয়াকোস ও রেঞ্জার্স।
অন্যদিকে টেবিলের ৯ নম্বর থেকে ২৪ নম্বর দলগুলো দুই লেগের প্লে–অফ খেলবে। সেই ২৪টি দল হচ্ছে গ্লিমট, আন্ডারলেখট, স্টুয়া বুখারেস্ট, আয়াক্স, রিয়াল সোসিয়েদাদ, গ্যালাতাসারে, রোমা,ফেরেঙ্কভারোস, ভিক্টোরিয়া প্লজেন, পোর্তো, মিডজিল্যান্ড, ইউনিয়ন সাঁত–গিলিওস, এজেড আলকমার, পিএওকে, টুয়েন্টে ও ফেনেরবাচে।
আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে প্লে–অফের ড্র।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’