লকার সুবিধা কী, কীভাবে রাখা হয় মূল্যবান সামগ্রী
Published: 31st, January 2025 GMT
মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদ রাখতে ব্যাংকের সেফ ডিপোজিট লকার ব্যবহার করেন অনেকে। সাধারণভাবে স্বর্ণের গহনা, জমির দলিল, মেয়াদি আমানতের স্লিপসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার জন্য লকার ভাড়া নেওয়া হয়। প্রতিটি ব্যাংকের বাছাই করা কিছু শাখায় এ সুবিধা থাকে। আপনি যে ব্যাংকে লকার ভাড়া নিতে চান, সেখানে অবশ্যই একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ব্যাংকের লকার ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। দেশে নতুন করে এটি আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর লকার থেকে স্বর্ণ, নগদ ডলার, ইউরোর মতো সামগ্রী উদ্ধার করে তা জব্দের পর। তাঁর এ লকার ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাণিজ্যিক ব্যাংকের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ভল্ট। বহুস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে লকার এলাকায় প্রবেশ করতে হয়। ভল্টের ভেতরে আলাদা রুমে থাকে লকার ব্যবস্থা। প্রতিটি ব্যাংকের লকারের মূল ফটকের চাবি শুধু ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তার কাছে থাকে। এসব লকার খোলার জন্য অবশ্যই দুটি চাবির প্রয়োজন হয়, যার একটি গ্রাহক এবং অপরটি ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তার কাছে থাকে। একক চাবি দিয়ে কখনোই এই লকার খোলা যায় না। আবার লকার আটকাতেও দুটি চাবির প্রয়োজন হয়। ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তার কাছে থাকা চাবি ‘মাস্টার কি’ হিসেবে পরিচিত। প্রতি লকার খোলার সময় প্রথমে এই মাস্টার কি দিয়ে ঘোরাতে হয়। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তা সেখান থেকে বেরিয়ে এলে গ্রাহক নিজের চাবি দিয়ে লকার খোলেন। সেফ ডিপোজিট লকারে কী রাখা হচ্ছে, কোথাও ঘোষণা দেওয়ারও দরকার নেই। কৌটা, বাক্স বা কাপড়ে মুড়িয়ে যিনি ভাড়া নেন, তিনিই জানেন এতে কী আছে। লকার নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট একটি ফরম পূরণ করে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। প্রতিবার প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় একটি রেজিস্ট্রারে লিখতে হয়। সংরক্ষিত সম্পদের জন্য নিজের পছন্দের যে কোনো ব্যক্তিকে নমিনি করতে হয়। চাইলে যৌথভাবেও লকার ভাড়া নেওয়া যায়। কোনো কারণে চাবি হারিয়ে গেলে কাছের থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করে এরপর শাখাকে দ্রুত সময়ে জানাতে হয়।
প্রতিটি ব্যাংকে সাধারণভাবে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের লকার থাকে। ব্যাংক ও আকারভেদে লকারের ভাড়া নির্ধারিত হয়। সরকারি ব্যাংকের লকার চার্জ তুলনামূলক কম। সাধারণত বার্ষিক হারে চার্জ নেয় ব্যাংক। ব্যাংকের লকারে কোনো ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, নেশাজাতীয় দ্রব্য, টাকা-পয়সা রাখা যাবে না বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে। অবশ্য গ্রাহক ছাড়া লকারের মালপত্র ও তার পরিমাণ সম্পর্কে ব্যাংকের জানার অবকাশ নেই। এমনকি গোপনীয় স্থান হিসেবে লকার রুমে ক্লোজ সার্কিট বা সিসি ক্যামেরাও রাখা হয় না। অবশ্য নিরাপত্তার জন্য লকার রুমে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে সিসি ক্যামেরা থাকে। এই সুযোগ নিয়ে অনেকেই স্বর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলের পাশাপাশি নগদ ডলার, ইউরোর মতো জিনিস রাখছে। সাধারণভাবে একজন ব্যক্তি বিদেশ ভ্রমণ শেষে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার নগদ রাখতে পারেন। এর বেশি ডলার রাখা বেআইনি। কয়েক বছর ধরে অনেকেরই এই নিয়ম না মানার অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই এখন বিনিয়োগের উপাদান হিসেবে ডলার, ইউরোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা কিনে রাখছেন। ২০২১ সাল থেকে ডলারের দর হুহু করে বাড়ার পর বেআইনিভাবে নগদ ডলার কিনে বিভিন্নভাবে সংরক্ষণের নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এতদিন সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না। তবে গত ২৬ জানুয়ারি এস কে সুরের লকারে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ, এফডিআরের কাগজ পাওয়ার পর নতুন করে বিষয়টি সামনে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট এরিয়ায় স্থাপিত লকারকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত বিবেচনা করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বাইরে কেউ সেখানে কিছু রাখতে পারেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালকদের জন্য এ সুবিধা দেওয়া হয়। অবসরের পরও ২০ বছর পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন সামগ্রী রাখা যায়। অবশ্য লকার থেকে মালপত্র আনা-নেওয়ার ঝামেলা বিবেচনায় খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তা তা ব্যবহার করেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকারেও কী রাখা হচ্ছে, তার ঘোষণা দিতে হয় না।
সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) লকারে মিলেছে ১ হাজার ৫ গ্রাম স্বর্ণের গহনা, নগদ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআরের নথি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্যমান ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। লকার যেহেতু ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়, যে কারণে দুদক কর্মকর্তাদের এটি খোলার আগে আদালতের আদেশ আনতে হয়েছিল। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডিতে এস কে সুরের বাসায় অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় তাঁর নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে লকার থাকার তথ্য পায় সংস্থাটি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। পরদিন আদালতে আবার জব্দ তালিকা উপস্থাপন করে দুদক।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাইডাস সেন্টারের শীত মেলায় কী কী পাওয়া যাচ্ছে
ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে