মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ছয় মাস বয়সী যমজ মেয়ে শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা শান্তা বেগম। গতকাল বুধবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতে তিনি নিজের কাজের জন্য অনুতাপ করেন। শান্তা দাবি করেন, স্বামীর ওপর ক্ষোভ মেটাতে গিয়ে নিজ সন্তানদের পানিতে ছুড়ে ফেলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই দায় স্বামীর ওপর চাপাতে নাটক সাজান বলে বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীনগরের বিবন্দী গ্রামের বিলে ফেলে দেওয়া হয় যমজ মেয়ে লামিয়া ও সামিয়াকে। খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে মরদেহ হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন শিশু দুটির মা শান্তা বেগম ও বাবা সোহাগ শেখ। এ কারণে তাদের আটক করে পুলিশ। সোমবার রাত, মঙ্গলবার দিন ও রাতে দফায় দফায় তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রথমে হত্যার জন্য স্বামী সোহাগকে দোষারোপ করলেও এক পর্যায়ে অনুশোচনায় ভুগে নিজের দায় স্বীকার করেন শান্তা বেগম।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শান্তা বেগম বলেন, ঘটনার এক-দেড় ঘণ্টা আগে তিনি সন্তানদের জন্য দুধ, খাবার ও নিজের কিছু পণ্য কিনতে বলেন স্বামী সোহাগ শেখকে। ফোনেই তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে রাগারাগি করেন সোহাগ। তখন শিশু দুটি শান্তার কোলে ঘুমিয়ে ছিল। তাদের নিয়েই তিনি বসতঘরের ভেতর হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এক পর্যায়ে স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে লামিয়াকে ঘরের উত্তর পাশের জানালা দিয়ে পানিতে ছুড়ে ফেলেন। এর পর একইভাবে সামিয়াকেও পানিতে ছুড়ে ফেলেন।

শ্রীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিলেন শান্তা। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর নিজ গর্ভজাত সন্তান হত্যার অনুশোচনাবোধের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্বামী সোহাগকেও ফাঁসানোর ইচ্ছা জেগেছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা বেগম ঘটনার বর্ণনা ও কারণ জানিয়েছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে: মির্জ

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যদি ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তাহলে পোশাকশিল্প মাটিতে শুয়ে পড়বে, দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) আয়োজনে ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন জানি না। যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন ছিল। তবে সময় বোধহয় এখনও চলে যায়নি। আমাদের শিল্প যেন বেঁচে থাকে, কর্মসংস্থান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়—এই বিষয়টা সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।’’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংস্কার গভীরভাবে জড়িত। সংস্কার তো আমাদের মজ্জায়, সংস্কার আমাদের রক্তে, আমাদের জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। তাই আজকে যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে—এটা আমি মনে করব যে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এটা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা সংস্কার চাই না, সংস্কার রুখে দিচ্ছি। তাহলে এর চেয়ে বড় সত্যের অপরাধ তো আর কিছু হতে পারে না।’’

ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি মিটিংয়ে আমাদের প্রতিনিধি দল গেছে, আমাদের মতামত সংস্কার কমিটিগুলোর সামনে তুলে ধরেছি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘জুলাই সনদের প্রথম যখন কথা উঠল, তখনই আমরা আমাদের মতামত দিয়ে দিয়েছি। গতকাল রাতেও আবার মতামতপত্র দিয়েছি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’’

সীমান্ত হত্যা ও পুশইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনো হালকা ব্যাপার নয়। প্রতিদিন সীমান্তে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সুতরাং বিষয়টাকে আরও গুরুত্ব সহকারে জনমত সৃষ্টি করার ব্যাপারে গণমাধ্যমে নিয়ে আসার দরকার। সরকার যেন এ বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়।’’

নির্বাচন নিয়েও বিএনপি মহাসচিব এ সময় মন্তব্য করেন। তিনি ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজটা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি যে, এই নির্বাচন যেন সকলের কাছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়।’’

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ার পারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান//

সম্পর্কিত নিবন্ধ