যমজ মেয়ে শিশু হত্যায় মায়ের স্বীকারোক্তি
Published: 10th, July 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ছয় মাস বয়সী যমজ মেয়ে শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা শান্তা বেগম। গতকাল বুধবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতে তিনি নিজের কাজের জন্য অনুতাপ করেন। শান্তা দাবি করেন, স্বামীর ওপর ক্ষোভ মেটাতে গিয়ে নিজ সন্তানদের পানিতে ছুড়ে ফেলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই দায় স্বামীর ওপর চাপাতে নাটক সাজান বলে বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীনগরের বিবন্দী গ্রামের বিলে ফেলে দেওয়া হয় যমজ মেয়ে লামিয়া ও সামিয়াকে। খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে মরদেহ হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন শিশু দুটির মা শান্তা বেগম ও বাবা সোহাগ শেখ। এ কারণে তাদের আটক করে পুলিশ। সোমবার রাত, মঙ্গলবার দিন ও রাতে দফায় দফায় তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রথমে হত্যার জন্য স্বামী সোহাগকে দোষারোপ করলেও এক পর্যায়ে অনুশোচনায় ভুগে নিজের দায় স্বীকার করেন শান্তা বেগম।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে শান্তা বেগম বলেন, ঘটনার এক-দেড় ঘণ্টা আগে তিনি সন্তানদের জন্য দুধ, খাবার ও নিজের কিছু পণ্য কিনতে বলেন স্বামী সোহাগ শেখকে। ফোনেই তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে রাগারাগি করেন সোহাগ। তখন শিশু দুটি শান্তার কোলে ঘুমিয়ে ছিল। তাদের নিয়েই তিনি বসতঘরের ভেতর হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এক পর্যায়ে স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে লামিয়াকে ঘরের উত্তর পাশের জানালা দিয়ে পানিতে ছুড়ে ফেলেন। এর পর একইভাবে সামিয়াকেও পানিতে ছুড়ে ফেলেন।
শ্রীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিলেন শান্তা। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর নিজ গর্ভজাত সন্তান হত্যার অনুশোচনাবোধের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্বামী সোহাগকেও ফাঁসানোর ইচ্ছা জেগেছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা বেগম ঘটনার বর্ণনা ও কারণ জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য র
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদ নির্বাচন: চার ইসির নেতৃত্বে পাঁচ বিশেষ কমিটি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ বিষয়ে কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনশৃঙ্খলা, মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী অনিয়ম তদন্ত এবং প্রবাসী ভোট নিয়ে এসব কমিটি কাজ করবে। বৃহস্পতিবার ইসির উপসচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আলাদা অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের এসব কমিটি গঠিত হলো।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ তদারকির দায়িত্বে তাহমিদা আহমদ: পাঁচটি কমিটির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি তদারকি করবেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ ও তদারকির লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২), সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)। এ কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।
কমিটির কার্যপরিধি: জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, তদারকি ও প্রযোজ্য সংশোধন বিষয়াদি; যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাবলি তদারকি; নির্বাচনি কর্মকর্তা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি ও সমন্বয়; এবং ঘ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।
আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে ইসি সানাউল্লাহ: আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, প্রকল্প পরিচালক, আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়), যুগ্মসচিব (প্রশাসন ও অর্থ), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২),সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২)। কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।
কমিটির কার্যপরিধি: নির্বাচন পরিচালনা কাজের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ; নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিতব্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের তদারকি ও সমন্বয়; পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, সশস্ত্র বাহিনী, আনসার ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণ; ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন; ব্যালট পেপারসহ বিভিন্ন নির্বাচনি মালামাল পরিবহন, বিতরণ এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের সহায়তা প্রদান; নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত সকল বাহিনীর সাথে সমন্বয়পূর্বক সম্ভাব্য সহিংসতা, সন্ত্রাস বা বিশৃঙ্খলার আশংকা নিরূপন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং ছ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।
নির্বাচনী তদন্ত কমিটির তদারকিতে আবদুর রহমানেল মাছউদ: এদিকে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির তদারকিতে বিশেষ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব (আইন), যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১), উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২), সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপসচিব (নির্বাচন সহায়তা ও সরবরাহ)। এছাড়া কমিটি প্রয়োজনে যে কোন কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।
এ কমিটির কার্যপরিধি ক) আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন সম্পর্কিত কার্যাবলি; খ) আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রিটার্নিং অফিসারসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য নির্দেশিকা ও ম্যানুয়াল প্রস্তুত কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়; গ) ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়; এবং ঘ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।
ভোটের সময় যুগ্ম জেলা জজদের সমন্বয়ে নির্বাচনি তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকে ইসি। তারা ভোটের অনিয়মে চিহ্নিত করে ইসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। এবার তাদের কার্যক্রম সরাসরি ইসিই তদারকি করবে।
প্রবাসী ভোট ও পর্যবেক্ষক সমন্বয় কমিটির সভাপতি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ: দেশের বাইরের ভোট (Out of Country Voting-OCV) ও পর্যবেক্ষক সমন্বয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২), উপসচিব (নির্বাচন সহায়তা ও সরবরাহ), পরিচালক (জনসংযোগ), সিস্টেম ম্যানেজার (আইসিটি) এবং কমিটি প্রয়োজনে যে কোন কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।
কমিটির কার্যপরিধি: ক) প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটাধিকার প্রদানের পদ্ধতি প্রণয়ন;
খ) প্রবাসীদের ভোট প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সমন্বয়;
গ) প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয়;
ঘ) পর্যবেক্ষক নীতিমালা অনুসারে দেশী এবং বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়; এবং
ঙ) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি।