সংসারে সচ্ছলতা আনতে রাশিয়ায় পাড়ি জমান নাটোরের সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির ও তাঁর দুলাভাই রহমত আলী। দালালদের খপ্পরে পড়ে মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনের চাকরির লোভে তারা জমি ও স্বর্ণালংকার বিক্রি এবং উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পাড়ি জমান রাশিয়ায়। সেখানে চাকরির নামে তাদের পাঠানো হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। গত ২৬ জানুয়ারি যুদ্ধে হুমায়ুন কবির প্রাণ হারান। অন্যদিকে রহমত আলী দেশে ফিরতে চান। এই অবস্থায় ছেলে ও জামাইয়ের ছবি হাতে নিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করে চলেছেন মা কারীমুন বেগম। 
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা রাশিয়া যান। সেখানে পৌঁছানোর পরে যুদ্ধে অংশ নিতে তাদের বাধ্য করা হয়। ২৩ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হুমায়ুনের। তারা মৃত্যুর খবর পান ২৬ জানুয়ারি। 
মৃত্যুর খবরে এক বছরের মেয়ে নিয়ে দিশেহারা হুমায়ুনের স্ত্রী তারা বেগম। তিনি বলেন, স্বর্ণ বিক্রি করে, টাকাপয়সা গুছিয়ে বিদেশ গেল কত স্বপ্ন নিয়ে। এখন সব শেষ। এখন দালালদের বললে তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন, কোনো ব্যবস্থা করছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি করছি, আমার স্বামীর লাশ এবং ননদের জামাইকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে দেন। 
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বিলাপ করে যাচ্ছেন হুমায়ুন কবিরের মা। তিনি বলেন, আমার ছেলে তো মারাই গেছে। এখন জামাইটা যেন ফিরে আসে। ছেলের লাশটা যেন দেশে ফিরে আসে সরকারের কাছে সেই দাবি জানাই। 

এদিকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মীর মশাররফ হোসেন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন আরমান মণ্ডল। দালালরা ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে পাঠায় রাশিয়ায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে রাশিয়ার একটি হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আরমান। তিনি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কুষ্টিয়াডাঙ্গি গ্রামের কৃষক আকরাম মণ্ডলের ছেলে। 
গতকাল শনিবার আরমানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। হাসপাতাল থেকে অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে আরমান জানান, তাঁর ইচ্ছা ছিল, রোমানিয়া বা ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার। মঞ্জু একদিন তাঁকে জানায়, রোমানিয়া সম্ভব হচ্ছে না, রাশিয়ায় নেওয়া যাবে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে মালি, ক্লিনার, বাবুর্চির কাজ করতে হবে। গত ১৭ অক্টোবর তাঁকে নেওয়া হয় সৌদি আরব। সেখানে দুই মাস হোটেলে রাখার পর রাশিয়ার পর্যটক ভিসা দেওয়া হয়। তিনি যেতে না চাইলে মঞ্জু জানায়, তোমরা যাও, সেখানে ওয়ার্ক পারমিট পাবে। 
তিনি বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার পর আত্মরক্ষার জন্য ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে যেতে বলা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে একদিন তাদের গাড়িতে করে নেওয়া হয় ইউক্রেনে। সেখানে তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। মোটরসাইকেল চালানোর সময় মাইন বিস্ফোরণে তিনি আহত হন। 
সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরমান বলেন, মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণ হয়। আমার সামনে যারা ছিল, তাদের প্রায় সবাই মারা যান। আমি পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারাই। আমার পা ঝলসে যায়। জ্ঞান ফেরার পর ওই অবস্থায়ই মোটরসাইকেল চালিয়ে রাশিয়ার 
আর্মিদের কাছে চলে আসি। তারা হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে আবার যুদ্ধে নেওয়া হতে পারে। তিনি দেশে ফিরতে চান। তাঁর যে ক্ষতি হলো সে ক্ষতিপূরণ 
দাবি করেন। 

এদিকে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন আরমানের বাবা-মা। তাঁর বাবা বলেন, টাকাপয়সা লেনদেন, চুক্তি সব কিছু মঞ্জুর মাধ্যমে হয়েছিল। রাশিয়ায় নিয়ে দালাল চক্র ক্যান্টনমেন্টে আমার ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে ১০ জনকে বিক্রি করেছে বলে জানতে পেরেছি। আমার ছেলে যুদ্ধে যেতে না চাইলে তাকে মারধর করা হয়। এখন ছেলের দুই পা ঝলসে গেছে। হাত, নাকসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। সম্ভবত ২০ জানুয়ারি আরমানকে যুদ্ধে নেওয়া হয়। পরে মঞ্জু বলে, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। যেভাবেই হোক তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনব। 
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার টাকাপয়সার দরকার নেই। যদি কারও হাতে পায়ে ধরতে হয়, তাও ধরব। তবুও আমার মুনিরে ফিরিয়ে এনে দেন। বিদেশে পাঠাতে মঞ্জুকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। 
পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পরিবারটি যদি আইনি সহযোগিতা চায়, তা দেওয়া হবে। 
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ভুক্তভোগীর বৈধ কাগজপত্র পেলে বিষয়টি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারবেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আরম ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসুতে হল সংসদ নির্বাচনে ৩৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ৩৯ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে মেয়েদের ৬টি হলে ৩৬ জন এবং ছেলেদের ১টি হলে ৩ জন রয়েছেন। এছাড়া, মেয়েদের ৪টি হলে ১টি করে পদে কেউ মনোনয়ন উত্তোলন না করায় পদগুলো ফাঁকা থাকছে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর ড. মো. সেতাউর রহমান এ তথ্য জানান। 

আরো পড়ুন:

রাকসু: ম্যানুয়াল ভোট গণনাসহ ১২ দাবি ছাত্রদলসহ ২ প্যানেলের

রাকসু নির্বাচন: শেষ দিনে ছাত্রদল নেতার প্রার্থিতা প্রত্যাহার

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে বিজয়-২৪ হলে ৩ জন, মন্নুজান হলে ১ জন, রোকেয়া হলে ৬ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ৩ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১০ জন, রহমতুন্নেসা হলে ৯ জন এবং জুলাই-৩৬ হলে ৭ জন রয়েছেন।

এছাড়া, বেগম খালেদা জিয়া হলে সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে একজন এবং রোকেয়া, জুলাই-৩৬ ও রহমতুন্নেসা হলে নির্বাহী সদস্য পদে ১টি করে ৩টিসহ মোট ৪টি পদে কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। ফলে, পদগুলো ফাঁকা থাকবে।

‎পদ ফাঁকা থাকার বিষয়ে রাকসু, হল ছাত্র সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর ড. মো. সেতাউর রহমান বলেন, “যে পদগুলো ফাঁকা আছে, সেগুলো ছাড়াই হল সংসদ চলবে। অন্য কোনোভাবে সেগুলো পূরণ করার উপায় নেই।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪৮ জন, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫৮ জন ও ১৭টি আবাসিক হলে ৫৯৭ জন রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় সংসদে সহ-সভাপতি ভিপি পদে ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৩ জন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া, ১৭টি আবাসিক হলে ভিপি পদে ৬১, জিএস পদে ৫৮ জন ও এজিএস পদে ৫৭ জন রয়েছেন। ‎এদের মধ্যে মেয়েদের ৬টি আবাসিক হলে ভিপি পদে ১৬ জন, জিএস পদেও ১৬ জন ও এজিএস পদে ১৫ জন লড়ছেন।

ঢাকা/ফাহিম/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাকসুতে হল সংসদ নির্বাচনে ৩৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত