দুলাভাইসহ রাশিয়া গিয়ে যুদ্ধে মৃত্যু শ্যালকের
Published: 1st, February 2025 GMT
সংসারে সচ্ছলতা আনতে রাশিয়ায় পাড়ি জমান নাটোরের সিংড়ার হুলহুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির ও তাঁর দুলাভাই রহমত আলী। দালালদের খপ্পরে পড়ে মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনের চাকরির লোভে তারা জমি ও স্বর্ণালংকার বিক্রি এবং উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পাড়ি জমান রাশিয়ায়। সেখানে চাকরির নামে তাদের পাঠানো হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। গত ২৬ জানুয়ারি যুদ্ধে হুমায়ুন কবির প্রাণ হারান। অন্যদিকে রহমত আলী দেশে ফিরতে চান। এই অবস্থায় ছেলে ও জামাইয়ের ছবি হাতে নিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করে চলেছেন মা কারীমুন বেগম।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা রাশিয়া যান। সেখানে পৌঁছানোর পরে যুদ্ধে অংশ নিতে তাদের বাধ্য করা হয়। ২৩ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হুমায়ুনের। তারা মৃত্যুর খবর পান ২৬ জানুয়ারি।
মৃত্যুর খবরে এক বছরের মেয়ে নিয়ে দিশেহারা হুমায়ুনের স্ত্রী তারা বেগম। তিনি বলেন, স্বর্ণ বিক্রি করে, টাকাপয়সা গুছিয়ে বিদেশ গেল কত স্বপ্ন নিয়ে। এখন সব শেষ। এখন দালালদের বললে তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন, কোনো ব্যবস্থা করছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি করছি, আমার স্বামীর লাশ এবং ননদের জামাইকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে দেন।
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বিলাপ করে যাচ্ছেন হুমায়ুন কবিরের মা। তিনি বলেন, আমার ছেলে তো মারাই গেছে। এখন জামাইটা যেন ফিরে আসে। ছেলের লাশটা যেন দেশে ফিরে আসে সরকারের কাছে সেই দাবি জানাই।
এদিকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার মীর মশাররফ হোসেন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন আরমান মণ্ডল। দালালরা ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে পাঠায় রাশিয়ায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ইউক্রেন যুদ্ধে। মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে রাশিয়ার একটি হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন আরমান। তিনি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কুষ্টিয়াডাঙ্গি গ্রামের কৃষক আকরাম মণ্ডলের ছেলে।
গতকাল শনিবার আরমানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। হাসপাতাল থেকে অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে আরমান জানান, তাঁর ইচ্ছা ছিল, রোমানিয়া বা ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়ার। মঞ্জু একদিন তাঁকে জানায়, রোমানিয়া সম্ভব হচ্ছে না, রাশিয়ায় নেওয়া যাবে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে মালি, ক্লিনার, বাবুর্চির কাজ করতে হবে। গত ১৭ অক্টোবর তাঁকে নেওয়া হয় সৌদি আরব। সেখানে দুই মাস হোটেলে রাখার পর রাশিয়ার পর্যটক ভিসা দেওয়া হয়। তিনি যেতে না চাইলে মঞ্জু জানায়, তোমরা যাও, সেখানে ওয়ার্ক পারমিট পাবে।
তিনি বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার পর আত্মরক্ষার জন্য ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে যেতে বলা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে একদিন তাদের গাড়িতে করে নেওয়া হয় ইউক্রেনে। সেখানে তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। মোটরসাইকেল চালানোর সময় মাইন বিস্ফোরণে তিনি আহত হন।
সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরমান বলেন, মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণ হয়। আমার সামনে যারা ছিল, তাদের প্রায় সবাই মারা যান। আমি পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারাই। আমার পা ঝলসে যায়। জ্ঞান ফেরার পর ওই অবস্থায়ই মোটরসাইকেল চালিয়ে রাশিয়ার
আর্মিদের কাছে চলে আসি। তারা হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে আবার যুদ্ধে নেওয়া হতে পারে। তিনি দেশে ফিরতে চান। তাঁর যে ক্ষতি হলো সে ক্ষতিপূরণ
দাবি করেন।
এদিকে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন আরমানের বাবা-মা। তাঁর বাবা বলেন, টাকাপয়সা লেনদেন, চুক্তি সব কিছু মঞ্জুর মাধ্যমে হয়েছিল। রাশিয়ায় নিয়ে দালাল চক্র ক্যান্টনমেন্টে আমার ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে ১০ জনকে বিক্রি করেছে বলে জানতে পেরেছি। আমার ছেলে যুদ্ধে যেতে না চাইলে তাকে মারধর করা হয়। এখন ছেলের দুই পা ঝলসে গেছে। হাত, নাকসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। সম্ভবত ২০ জানুয়ারি আরমানকে যুদ্ধে নেওয়া হয়। পরে মঞ্জু বলে, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। যেভাবেই হোক তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনব।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার টাকাপয়সার দরকার নেই। যদি কারও হাতে পায়ে ধরতে হয়, তাও ধরব। তবুও আমার মুনিরে ফিরিয়ে এনে দেন। বিদেশে পাঠাতে মঞ্জুকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পরিবারটি যদি আইনি সহযোগিতা চায়, তা দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ভুক্তভোগীর বৈধ কাগজপত্র পেলে বিষয়টি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারবেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আরম ন
এছাড়াও পড়ুন:
দরুদ কেন পড়ব
নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের উপকারিতা অনেক। সাধারণত প্রতিদান হিসাবে একবার দরুদ পাঠ করলে দশটি রহমত, দশটি পাপ মাফ এবং বেহেশতে দশ স্তরের মর্যাদার কথা জানা যায়। এ ছাড়াও দরুদ পাঠের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা সাধারণত খুব একটা আলোচনা করা হয় না।
প্রথমত, দরুদ পড়া আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম পালন করলে তিনি খুশি হন এবং তার নৈকট্য অর্জন হয়। দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ রাসুলের ওপর ‘সালাত’ পড়েন। ইমানদারগণ, তোমরাও তার নামে দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)
দ্বিতীয়ত, দরুদ পড়া আমাদের ওপর নবীজির (সা.) একটি হক। দরুদ পড়লে তাঁর হক আদায় হয়। ইবনে আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে যথাযথ প্রতিদান দিতে, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যদি আমরা তাতে অপারগ হই, তবে যেন অন্তত দোয়া করি। আল্লাহ জানেন, আমরা রাসুলের (সা.) অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে অপারগ। তাই তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রতি দরুদ পাঠের। (ইমাম কাসতালানি, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩/৩২২)
আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫তৃতীয়ত, নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তাঁর ওপর রহমত করেন। আর দোয়া একটি ইবাদত। নু’মান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, ‘দোয়া হলো ইবাদত। তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি কবুল করব’ (সুরা গাফির: ৬০)।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,৪৬৯)
সুতরাং যখন আমরা বারবার দরুদ পড়ব, তখন প্রকারান্তরে আমরা ইবাদতের মধ্যে থাকব।
চতুর্থত, দরুদ পাঠের সওয়াব আল্লাহর কাছে জমা থাকে। যেমন, আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে দশবার রহমত করবেন।’ এই ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কেবল পার্থিব নয়, বরং পরকালের কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমতের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
পঞ্চমত, দরুদ পাঠ করা আল্লাহর পক্ষ হতে মুমিনদের জন্যে একটি সম্মান। সাইয়েদ কুতুব (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের দুরুদকে তার দুরুদের সঙ্গে এবং তাদের সালামকে তার সালামের সঙ্গে মিলিয়ে নেন।’ (সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতের তাফসির, তাফসিরে ফি জিলালিল কুরআন)
আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫