তিতুমীর কলেজ ‘শাটডাউন’, আজ ১১ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধের ঘোষণা
Published: 3rd, February 2025 GMT
যতদিন সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা না দেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত কলেজের সব ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ঘোষণা অনুযায়ী, আজ সোমবার সকাল থেকে শাটডাউন থাকবে কলেজ। এর আওতায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, অর্থাৎ ১১ ঘণ্টা আমতলী, মহাখালী এবং গুলশান লিংক রোড অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রোববার রাত ১১টার দিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আগে আমাদের আন্দোলন শিথিল করা হলেও এবার তা করা হবে না।
এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো– তিতুমীর কলেজকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করা, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং আইন উপদেষ্টার ক্ষমা প্রার্থনা।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রোববার টানা পঞ্চম দিনের মতো শিক্ষার্থীদের অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। গত শুক্রবার ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। রোববার সন্ধ্যায় তারা মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ব্যস্ত এ সড়কে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসফেরত মানুষ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালীর আমতলী মোড়ে যান শিক্ষার্থীরা। মহাসড়ক অবরোধ করে তারা হুঁশিয়ারি দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। এর আগে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে তারা কলেজের প্রধান ফটকে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে ফটকের সামনে গুলশান-মহাখালী সড়কে বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় অনেক যাত্রী ও চালক শিক্ষার্থীদের এক পাশের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তাতে সায় দেননি শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডাও হয়। কলেজের সামনে কয়েক শিক্ষার্থী আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতের বিষয়টি বিবেচনা করে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিথিল করেন শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, মহাখালীতে রেলপথ, মহাসড়ক ও গুলশান-১-এর গোলচত্বর অবরোধ করার কথা ছিল। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ‘আলটিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবির যৌক্তিকতা নেই’ বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া জনদুর্ভোগ হয়, এমন কর্মসূচি পরিহার করার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে। এদিকে গতকাল দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি অযৌক্তিক। তাদের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনাও করা হচ্ছে না।
সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। আলটিমেটাম দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করা যাবে না। তিতুমীর কলেজকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে অনেক ঐতিহ্যবাহী কলেজ আছে, সেগুলোকে বিবেচনা করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে রাজশাহী কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় করা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। কমিশন গঠন করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সেই প্রক্রিয়া মেনেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।
উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ব্রিফিং করে ঘোষণা দেন, এখন থেকেই সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি হবে। এর পরই তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আমতলী মোড়ে গিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে রাত ৮টার পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল করতে করতে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের ওই অবরোধে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ অবর ধ ত ত ম র কল জ র ধ কর ন কল জ র স উপদ ষ ট র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্র দিয়ে ডাকাত তকমা, উদ্ধার করল নৌবাহিনী
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ডাকাত তকমা দিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় দেশীয় অস্ত্র। ছবি তুলে ও ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে রাখে। যদিও অনেকেই জানতেন না, ঘটনাটি সাজানো। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল আহত দু’জনকে উদ্ধার করে। সোমবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধার দু’জন হলেন জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরহেয়ার এলাকার মজিবুল হকের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকার মো. আশরাফের ছেলে মো. আসিফ। এদের মধ্যে আরিফ পেশায় রিকশাচালক।
স্থানীয়রা জানান, জাহাজমারা আমতলী বাজারের পশ্চিম পাশে রাস্তার চর দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জহির চেরাং, অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন কাউসার। কাউসারপক্ষ অনেক দিন থেকে চরটির দখল নিয়ে আছে। ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে জহির চেরাংয়ের লোকজন চরটির দখল নেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। পরে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেও দু’জনকে ধরে তারা বাজারে নিয়ে আসে। পরে ওই দু’জনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পরিকল্পিতভাবে ডাকাত নাটক সাজানো হয়।
ছবি তুলে ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করে। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল অবরুদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নৌবাহিনী ও পুলিশের দুটি গোয়েন্দা দলের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
আসিফের বাবা আশরাফ জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। অথচ তাঁকে ডাকাত বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর ছেলে নিরপরাধ দাবি করেন তিনি।
আমতলী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লিটন জানান, চরের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়। পরে নৌবাহিনী এসে তাদের নিয়ে যায়। তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কিনা, তাঁর জানা নেই।
হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, উদ্ধার দু’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।