অবশেষে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলেও বিতর্ক যেন ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। সরকার সাত কলেজের ব্যাপারে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে, তারা একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। ইতোমধ্যে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের কথাও সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। অন্যদিকে সাত কলেজের অন্যতম তিতুমীর নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার ব্যাপারে আন্দোলন করছে। প্রশ্ন হলো, ঢাকা কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকেও নবীন ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ হতে হবে কেন?

ঢাকা কলেজ নানা দিক থেকেই স্বতন্ত্র। এটাকে বলা হয় ‘উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক কলেজ’। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজ ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ‘সিনিয়র’। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও ঢাকা কলেজের ছিল অবিস্মরণীয় অবদান। ঢাকা কলেজের ভূমি, ক্যাম্পাস, হোস্টেল, অবকাঠামো, বইপত্র না পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও সহজ হতো না। দুই শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যের ক্রোড়ে না বসে ‘ঢাকা কলেজ’ হিসেবে মাথা উঁচু করে থাকাই তো গৌরবময়! 

ঢাকা কলেজকে ২০১৭ সালে যেভাবে তাড়াহুড়ো করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা কতটা সংগত ছিল– সেই প্রশ্ন দেরিতে হলেও তোলা যায়। প্রশ্নটা শুধু ঐতিহ্যের নয়, একই সঙ্গে ব্যবহারিকও। এটা ঠিক, ঢাকা কলেজসহ অধিভুক্ত সাত কলেজ আগে জাতীয় বিশ্ববিদালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার পর কলেজগুলোতে সময় অনুযায়ী পরীক্ষা না হওয়া, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, শিক্ষক সংকট, গবেষণাগার ও অবকাঠামোগত সমস্যা ইত্যাদি সংকট দেখা যায়। 

এসব সংকট নিরসনের দাবিতে কয়েক বছর ধরেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি উপস্থাপন করলে অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর বলতে গেলে এই কমিটিই কলেজগুলোর অভিভাবক।   
ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজ যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেছে, সে জন্য বিকল্প দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে– প্রথমত, স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা, যার অধীনে থাকবে সাতটি কলেজ। দ্বিতীয়টি হলো, প্রতিটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা। কিন্তু ঢাকা কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলো তার ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা রক্ষা করতে পারে আরেকটি বিকল্পের মাধ্যমে। 

ভারতের ‘ডিমড ইউনিভার্সিটির’ কথা আমরা জানি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ৭ নভেম্বর ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ‘স্বতন্ত্র পরিচয়ে’ সাত কলেজ, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় হবে? ‘ডিমড ইউনিভার্সিটি’ বলা যায় একটি স্ট্যাটাসের নাম। সেগুলো পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় নয়। যেমন– ঢাকা কলেজের নাম ঢাকা কলেজই থাকবে; কিন্তু সেটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত ‘ডিমড ইউনিভার্সিটি’র অধিভুক্ত হবে। অর্থাৎ এটি হবে স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেটি ইউজিসি সরাসরি পরিচালনা করবে। কলেজগুলোর স্বায়ত্তশাসন তাদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারে। তবে কলেজগুলোকে সেভাবে তদারকি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যেমনি স্বায়ত্তশাসন দেবে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মানসম্মত পড়াশোনা নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটর ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করবে। কারণ ভারতেও মানহীনতার কারণে উল্লেখযোগ্য ‘ডিমড ইউনিভার্সিটি’ বন্ধের দাবি উঠেছে।

‘ডিমড ইউনিভার্সিটি’ হলে ঢাকা কলেজ নিজ নামেই থাকবে। কিন্তু সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে পরিচালিত হবে, যেখানে শিক্ষা ও গবেষণার মান গুরুত্ব পাবে। তার মানে, কলেজগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। ইউজিসির নিয়ম অনুসারে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তাদের ব্যবস্থাপনা হবে। শিক্ষক সংকট নিরসন, আবাসিক সংকট দূরীকরণ, ল্যাব ও অন্যান্য সমস্যা দূর করতে হবে। হঠাৎ এমন বিশ্ববিদ্যালয় হলে, অর্থাৎ কলেজগুলো এভাবে স্বায়ত্তশাসিত হলে আপাতত শিক্ষক সংকট দূরীকরণে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কিংবা পেশাজীবীদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। বাস্তব ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ পেলে ‘ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া কোলাবরেশন’ সহজ হবে। বর্তমান শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা সেখানে থাকবেন; কিন্তু ইউজিসির নীতিমালার আলোকে তাদের গবেষণামুখী করা অসম্ভব হবে না। যুক্তরাজ্যের রাসেল গ্রুপও বিশ্বখ্যাত। এর অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজ নিজ নামে পরিচালিত হয় এবং রাসেল গ্রুপের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ পর্যায়ে থাকে।

এর আগে আমি লিখেছি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে (সমকাল, ২০ নভেম্বর ২০২৪)। তা ছাড়া বাস্তব কারণেই সব কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব নয়। অথচ এটি কলেজ হিসেবে স্বায়ত্তশাসন পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই মানসম্মত হয়ে উঠতে পারে। দেশের কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃখজনক চিত্র আমরা দেখছি, যেখানে শিক্ষক ও অবকাঠামোগত সংকট বিরাজমান। তার তুলনায় ঐতিহ্যবাহী অনেক কলেজ স্বতন্ত্র পরিচয় পেলে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আরও ভালো অবদান রাখতে পারে।
এক সময় ঢাকা কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যে ধরনের ফল করত, তা এখন অদৃশ্য। যে কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ভর্তির ক্ষেত্রে এগুলোর অগ্রাধিকার থাকে না। এ কলেজগুলোর ঐতিহ্য স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে ফিরে আসতে পারে। বলা বাহুল্য, গোটা উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের সংকট বিদ্যমান। বিশেষ করে গত দেড় দশকে উচ্চশিক্ষার অনেক সম্প্রসারণ হয়েছে সত্য; কিন্তু কতটা পরিকল্পিত– তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। সম্প্রসারণের অনেক ক্ষেত্রে গুণমানের চেয়ে পরিমাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন পরিণত হয়েছে শিক্ষিত বেকার তৈরির কারখানায়।

ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজ নিয়ে যেহেতু নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে, এই সুযোগে মান নিশ্চিতে পুরো উচ্চশিক্ষা নিয়েই ভাবা দরকার। উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে নেতৃত্ব দিতে ইউজিসিকে নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ তদারকি ও মূল্যায়নে এর কোনো বিকল্প নেই।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বতন ত র পর চ ল ত স ত কল জ কল জ র ইউজ স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ