রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ।

ওই ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহত লাল চাঁদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বর্ণনায় হত্যাকাণ্ডের এমন বিবরণ উঠে এসেছে।

গত বুধবার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়েছে। নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম (৪২) মামলাটি করেন। এতে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মনিরুজ্জামান গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ ও র‍্যাব চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন এলাকায় যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। আরেকজন হলেন তারেক রহমান ওরফে রবিন। বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।

ডিএমপি গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মাহমুদুল ও তারেককে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। অপর দিকে র‍্যাবের এক বার্তায় বলা হয়, চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় দুজনকে কেরানীগঞ্জের ইবনে সিনা হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে র‍্যাব তাঁদের নাম জানায়নি।

প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যার এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে নিথরভাবে পড়ে থাকা লাল চাঁদের শরীরের ওপর কয়েকজন ব্যক্তিকে কংক্রিটের বড় খণ্ড দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় গভীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। কেউ কেউ এটাকে আবার ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ গতকাল রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করে। পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আজ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদসহ কয়েকটি সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে।

এরই মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় এই মামলার দুই আসামিকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী ওরফে পিন্টু (মামলার ১৩ নম্বর আসামি) এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম ওরফে লাকি (১১ নম্বর আসামি)। যুবদলের বহিষ্কার-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দুজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।

হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। তাঁরা হলেন চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস (১৭ নম্বর আসামি) এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু (১২ নম্বর আসামি)।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে এক বার্তায় জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে পাকা রাস্তার ওপরে লাল চাঁদকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। আসামিদের ধরতে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

আরও পড়ুনসিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ, ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার৩ ঘণ্টা আগে

বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত পৈশাচিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটির দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।’ অবিলম্বে ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।

এ ঘটনা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপির ওপর দায় চাপানো নোংরা রাজনীতির চর্চা।

জানা গেছে, সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিব্রত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ তিন সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।

মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনা

এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় লাল চাঁদের বোন উল্লেখ করেন, লাল চাঁদ বংশাল থানা এলাকার রজনী বোস লেন–সংলগ্ন মসজিদের পাশে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক বিভিন্ন বিষয়সহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আসামিদের সঙ্গে লাল চাঁদের বিরোধ চলছিল। এর জেরে আগেও আসামিরা লাল চাঁদের ভাঙারির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুদামে তালা দিয়েছিলেন। তাঁর ভাইকে এলাকাছাড়া করতে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছিলেন আসামিরা।

ঘটনার দিনের বর্ণনায় মামলার এজাহারে বলা হয়, সেদিন (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাম উল্লেখ থাকা ১৯ আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ আসামি বংশালে লাল চাঁদের সোহান মেটাল নামের ভাঙারির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন। তখন তাঁদের সঙ্গে ধারালো দা, প্লাস্টিকের পাইপ, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা, সিমেন্টের কংক্রিট, ইট, পাথরের টুকরা ছিল। আসামিরা লাল চাঁদকে দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, মারধর করে টেনেহিঁচড়ে লাল চাঁদকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে আসামিরা লাল চাঁদকে এলোপাতাড়িভাবে লোহার রড, ভারী লাঠি এবং সিমেন্টের ব্লক–ইট দিয়ে আঘাত করেন। আঘাতে তাঁর মাথার দুই পাশে গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়া লাল চাঁদের ডান কান, ডান চোখের ওপরে, বাঁ হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে জখম করা হয়।

একপর্যায়ে হামলাকারীরা লাল চাঁদকে মারধর করে বিবস্ত্র করেন। আসামিদের আঘাতে লাল চাঁদ রক্তাক্ত অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে ড্রেনের পাশে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সেখান থেকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে পাকা রাস্তার ওপর নিয়ে ফেলা হয়। পরে লাল চাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা আনন্দ–উল্লাস করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র র ব যবস য় য বদল ব যবস য় য বদল র ব এনপ র র ঘটন য় প রক শ আস ম র ত র কর হত য র গতক ল র ওপর ঘটন র স গঠন এ ঘটন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দীপিকা ও আলিয়া নন, ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পান এই অভিনেত্রী

বলিউড হোক বা দক্ষিণি—সিনেমাপ্রতি কে কত পারিশ্রমিক পান, সেটা সাধারণত বেশ গোপনেই রাখা হয়। তবে মাঝেমধ্যে কিছু প্রতিবেদন কিংবা বিশ্বস্ত সূত্র সেই পর্দা সরিয়ে দেয়, আর তখনই সামনে আসে তারকাদের চোখধাঁধানো পারিশ্রমিকের অঙ্ক। এত দিন ভারতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। পারিশ্রমিকের দৌড়ে দীপিকার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই আলিয়া ভাটও। তবে সাম্প্রতিক এক চুক্তিতে বদলে গেছে ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীর নাম। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, যিনি প্রায় ছয় বছর পর ভারতীয় সিনেমায় ফিরছেন। তিনি একটি ছবির জন্য ৩০ কোটি রুপি নিয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় অভিনেত্রীর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

প্রিয়াঙ্কা ফিরছেন রাজামৌলির ছবিতে
এস এস রাজামৌলির পরবর্তী ছবিতে মহেশ বাবুর বিপরীতে অভিনয় করছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একদিকে এটি তাঁর বলিউডে প্রত্যাবর্তনের ছবি, অন্যদিকে দক্ষিণি ছবিতেও তিনি ফিরছেন দুই দশকের বেশি সময় পর। বলিউড হাঙ্গামার খবর অনুযায়ী, এই ছবির জন্য প্রিয়াঙ্কা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৩০ কোটি রুপিতে।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ