কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ ও হুমায়ূন আহমেদ একটি টেবিলে বসে আছেন। এ রকম দুটি বিশাল ক্যানভাস একত্র করে রওশন হাবীব ও শান্ত আহমেদের আঁকা পেইন্টিং ঝুলছে দাঁড়িকমা প্রকাশনীর স্টলে। এ ছাড়া স্টলের ব্যানার ও দেয়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাল-হলুদ রঙে আঁকা জুলাই আন্দোলনের স্লোগান।
এবারের বইমেলায় এমন নান্দনিক স্টল দেখা গেছে বেশ কয়েকটি। পাঠকরা ঘুরে ঘুরে পছন্দসই বই খুঁজছেন, আর নান্দনিক স্টল পেলে দাঁড়িয়ে দেখছেন। অনেকে স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলছেন। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন।
এমন এক নান্দনিক স্টল তৈরি করেছে বাতিঘর। এখানে পাঠকের ভিড় দেখা গেছে। বই কিনছে কেউ, কেউ স্টলের বাইরে ও ভেতরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। বিক্রয়কর্মীরা জানান, বাতিঘরের মূল ভবনের মতো করে বানানো এই স্টলে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে থাকে সবসময়। বিশেষত সন্ধ্যার দিকে সব আলো জ্বলে ওঠার পর স্টলটির সৌন্দর্য বাড়ে। এজন্য বইয়ের পাশাপাশি ছবি তুলতে আগ্রহী হন পাঠক।
অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টল ভ্রাম্যমাণ বইয়ের গাড়ির আদলে তৈরি। কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার সঞ্জয় পাণ্ডে জানান, নকশাবিদ সঞ্জীব কুমার সাহা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সম্পর্কে তাঁর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ থেকে বেশ কয়েকটি নকশা তৈরি করেন। এখান থেকে একটি নির্বাচন করেছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ। কেননা, ভ্রাম্যমাণ বইয়ের গাড়ির পাশাপাশি সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ বইমেলার কার্যক্রম চলছে।
সম্পূর্ণ বাঁশ দিয়ে তৈরি একটি স্টল আকাশ প্রকাশনীর। বাঙালিয়ানার লোকজ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস থেকে এবারের স্টল তৈরি করেছেন বলে জানান মালিক আলমগীর সিকদার লোটন।
মেলা ঘুরে দেখা যায় অয়ন প্রকাশনী তাদের বইভিত্তিক বিভিন্ন কাটআউট ছোট ছোট করে তৈরি করে স্টলের বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়েছে। আবার পুঁথিনিলয়ের স্টলের চারটি পিলারের জায়গায় রয়েছে বইয়ের কাটআউট। এ ছাড়া মাথার ওপরে বিশাল এক বইয়ের আকৃতির কাটআউট। যেন সবাইকে জ্ঞানের ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য বদ্ধপরিকর।
এ রকম আরও বিভিন্ন ধরনের চিন্তার বহিঃপ্রকাশসমৃদ্ধ স্টল দেখা গেছে বইমেলায়। কেউ তাদের লোগো তুলে এনেছে স্টলে, আবার কেউ বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি। তবে বড় স্টলগুলোতে বই দেখা ও কেনার পাশাপাশি পাঠকদের ছবি তুলতে দেখা গেছে।
জুলাই মঞ্চ
গতকাল থেকে মেলার ষষ্ঠ দিনে শুরু হয় ‘জুলাইয়ের গল্প’ শীর্ষক একটি নতুন কার্যক্রম। জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪-এর নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান। গতকাল অতিথি হিসেবে কথা বলেন নিহত আনাসের বাবা ও মা। সঞ্চালনায় ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেল সম্পাদক হাসান ইমাম।
নতুন বই
মেলায় গতকাল নতুন বই আসে ৮০টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নবান্ন প্রকাশনীর সফিকুল ইসলামের গল্পগ্রন্থ দৈত্য পাহাড়ের পিশাচ, কথাপ্রকাশের মফিজুর রহমান রুননুর সংস্কৃতিবিষয়ক গ্রন্থ বাঙালির ধর্ম সংস্কৃতি ও জাতীয়তার সংকট, শিরনী পাবলিকেশন্সের ড.
মেলামঞ্চ
গতকাল মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সৈয়দ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশ নেন মাহবুব বোরহান ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
প্রাবন্ধিক বলেন, মাহবুবুল হক বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিজ্ঞানী। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়ন এবং বাংলা বানান সংস্কারে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। ভাষা ও ব্যাকরণের অনেক জটিল বিষয়কে সরল ও পরিচ্ছন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, মাহবুবুল হক বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে নিবেদিত ছিলেন।
লেখক বলছি মঞ্চে আলোচনা করেন কবি টোকন ঠাকুর ও জাকির আবু জাফর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি সাখাওয়াত টিপু ও জব্বার আল নাঈম। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, সৈয়দ আশিকুর রহমান প্রমুখ।
সময় পরিবর্তন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কারণে ৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলা বেলা ১১টার পরিবর্তে শুরু হবে দুপুর ২টায়। এই দুই দিন মেলায় থাকবে না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর।
আজ প্রথম শিশুপ্রহর
আজ বইমেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় ও চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। এটি উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার। এ ছাড়া সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল কর ছ ন বইম ল বইয় র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।
তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল