‘এবার কেন আসে নাই হালুম?’, ‘টুকটুকি কই?’, ‘বই আছে, ওরা নাই কেন?’– গতকাল অমর একুশে বইমেলার সিসিমি ওয়ার্কশপের স্টলে গিয়ে এসব প্রশ্ন শোনা যাচ্ছিল। এর উত্তরে স্টলের সিনিয়র আউটরিচ খলিলুর রহমান বলছিলেন, ‘ইউএসএআইডির প্রকল্প সিসিমপুর।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। তাই এবার মেলায় সিসিমপুরের আনন্দটা নেই।’ সিসিমপুর না থাকায় প্রথম শিশুপ্রহরে প্রত্যাশিত ভিড় দেখা যায়নি। বইও কম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা।

তবে ব্যতিক্রমী প্রকাশনীগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। এ রকম একটি স্টল হলো ‘গুফি’। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার বর্ণ ও শব্দ কার্ড, পপআপসহ নানাভাবে তৈরি বই রাখা হয়েছে। এগুলো শিশুদের আকর্ষণ করছে। এ ছাড়া চড়ুই ডটকমের স্টলে দেখা যায়, শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন ধাঁধার গুচ্ছ। শৈশব স্টলে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল।

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের প্রতিনিধি ইফতেখার বলেন, ‘প্রথম শিশুপ্রহরে বাচ্চাদের বই বিক্রির প্রত্যাশিত রূপটা নেই।’ 

তবে ছুটির দিন হওয়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণের দুই অংশে বাড়তে থাকে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে অনেকে মেলায় আসেন।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘উচ্চমার্গীয় পাঠকদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের বইও আমরা রেখেছি। এ কারণে আমাদের প্যাভিলিয়নে ভিড় লেগে থাকে আর বই না কিনে কেউ যায় না।’

চায়না বুক হাউজ পরিদর্শনে উপদেষ্টা
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চায়না বুক হাউজ পরিদর্শনে আসেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

স্টল পরিদর্শন শেষে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা বাড়াতে হাসপাতাল তৈরি করছে চীন। সহজে ভিসা, টিকিট এবং কম খরচে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘চীন আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আগামী বছর আমরা ১০টি বই যৌথভাবে প্রকাশ করার ব্যাপারে কাজ করছি। এর মধ্যে পাঁচটি চায়না ভাষার ক্ল্যাসিক বাংলায় অনুবাদ হবে এবং বাংলা ভাষার পাঁচটি ক্ল্যাসিক চায়নিজ ভাষায় অনুবাদ হবে। আমরা ১০টি বই দিয়ে শুরু করছি, সামনে বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কাজ চলমান। চীন দূতাবাসের সহযোগিতায় আমরা সিনেমা নিয়ে একটি কাজ করতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের আনন্দ দেবে।’

বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি স্টলটিতে দেখা যায়, চীনা ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন, ক্রাফটিংসহ বিভিন্ন শিল্পের প্রর্দশন।

নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১৮৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামিহা মাহজাবিন অর্চির উপন্যাস ঐশী রহস্য (ঐকতান প্রকাশনী), মোহাম্মাদ আব্দুল আজিজের কাব্যগ্রন্থ গানের ডালি (লেখাচিত্র), চৌধুরী নূর হুসাইনের কিশোর উপন্যাস মুকুট রাজার দেশে (অন্যপ্রকাশ), শাহনাজ মুন্নীর ছোটগল্প প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর (কথাপ্রকাশ) ও ইকবাল খন্দকারের কিশোর উপন্যাস কবিরদের নিখোঁজ রহস্য (পাঞ্জেরী)।

শিশু-কিশোরদের নিয়ে আয়োজন
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড.

আবদুস সাত্তার। ৭৫০ জন প্রতিযোগী এতে অংশ নেয়।

সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪৩৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. তারিক মনজুর, অধ্যাপক শায়লা আহমেদ এবং বাচিকশিল্পী শফিকুর রহমান বাহার।

আলোচনা অনুষ্ঠান
গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দর্পণে গোলাম মুরশিদ পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন স্বরোচিষ সরকার ও গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রাতিষ্ঠানিকতা পেলে গোলাম মুরশিদ হবেন তাঁর পুরোধা ব্যক্তি। তাঁর ইতিহাস চর্চার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো উপেক্ষিতের প্রতি নজর, আন্তঃশৃঙ্খলাধর্মিতা এবং ব্যক্তিকে ইতিহাসের কর্তাসত্তায় অধিষ্ঠিত করা।

আলোচকদ্বয় বলেন, অত্যন্ত নির্মোহভাবে মুরশিদ ইতিহাসকে দেখার চেষ্টা করেছেন।

গতকাল জুলাই’র গল্প মঞ্চে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। লেখক বলছি মঞ্চে নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ইকতিজা আহসান ও মৃদুল মাহবুব।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মোসা. ইসমত আরা ও মুহাম্মদ ইসমাইল। সংগীত পরিবেশন করেন জি এম জাকির হোসেন, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মাকসুদুর রহমান মোহিত খান প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের কাউন্সিল কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান তফসিল ঘোষণা করেন।

নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। ২১ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি ও মতামত গ্রহণ করা হবে। ৩০ জুন চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। 

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীগণ ১ থেকে ৩ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। ১ থেকে ৭ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীগণ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৯ জুলাই।

মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন গ্রহণ করা হবে ১১ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আপিলের শুনানি গ্রহণ ও রায় ঘোষণা করা হবে ১৩ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৪ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ জুলাই। ১৬ থেকে ২৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে নির্বাচনী প্রচারণা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ জুলাই।

১৯৯২ সালে সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ৩২ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের জাকসু নির্বাচন।

ঢাকা/আহসান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ