সিসিমপুর না থাকায় আনন্দ নেই শিশুদের
Published: 8th, February 2025 GMT
‘এবার কেন আসে নাই হালুম?’, ‘টুকটুকি কই?’, ‘বই আছে, ওরা নাই কেন?’– গতকাল অমর একুশে বইমেলার সিসিমি ওয়ার্কশপের স্টলে গিয়ে এসব প্রশ্ন শোনা যাচ্ছিল। এর উত্তরে স্টলের সিনিয়র আউটরিচ খলিলুর রহমান বলছিলেন, ‘ইউএসএআইডির প্রকল্প সিসিমপুর।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে। তাই এবার মেলায় সিসিমপুরের আনন্দটা নেই।’ সিসিমপুর না থাকায় প্রথম শিশুপ্রহরে প্রত্যাশিত ভিড় দেখা যায়নি। বইও কম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা।
তবে ব্যতিক্রমী প্রকাশনীগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। এ রকম একটি স্টল হলো ‘গুফি’। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার বর্ণ ও শব্দ কার্ড, পপআপসহ নানাভাবে তৈরি বই রাখা হয়েছে। এগুলো শিশুদের আকর্ষণ করছে। এ ছাড়া চড়ুই ডটকমের স্টলে দেখা যায়, শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন ধাঁধার গুচ্ছ। শৈশব স্টলে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের প্রতিনিধি ইফতেখার বলেন, ‘প্রথম শিশুপ্রহরে বাচ্চাদের বই বিক্রির প্রত্যাশিত রূপটা নেই।’
তবে ছুটির দিন হওয়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণের দুই অংশে বাড়তে থাকে নানা বয়সী মানুষের ভিড়। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে অনেকে মেলায় আসেন।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘উচ্চমার্গীয় পাঠকদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের বইও আমরা রেখেছি। এ কারণে আমাদের প্যাভিলিয়নে ভিড় লেগে থাকে আর বই না কিনে কেউ যায় না।’
চায়না বুক হাউজ পরিদর্শনে উপদেষ্টা
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চায়না বুক হাউজ পরিদর্শনে আসেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
স্টল পরিদর্শন শেষে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা বাড়াতে হাসপাতাল তৈরি করছে চীন। সহজে ভিসা, টিকিট এবং কম খরচে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘চীন আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আগামী বছর আমরা ১০টি বই যৌথভাবে প্রকাশ করার ব্যাপারে কাজ করছি। এর মধ্যে পাঁচটি চায়না ভাষার ক্ল্যাসিক বাংলায় অনুবাদ হবে এবং বাংলা ভাষার পাঁচটি ক্ল্যাসিক চায়নিজ ভাষায় অনুবাদ হবে। আমরা ১০টি বই দিয়ে শুরু করছি, সামনে বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কাজ চলমান। চীন দূতাবাসের সহযোগিতায় আমরা সিনেমা নিয়ে একটি কাজ করতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের আনন্দ দেবে।’
বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি স্টলটিতে দেখা যায়, চীনা ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন, ক্রাফটিংসহ বিভিন্ন শিল্পের প্রর্দশন।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১৮৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সামিহা মাহজাবিন অর্চির উপন্যাস ঐশী রহস্য (ঐকতান প্রকাশনী), মোহাম্মাদ আব্দুল আজিজের কাব্যগ্রন্থ গানের ডালি (লেখাচিত্র), চৌধুরী নূর হুসাইনের কিশোর উপন্যাস মুকুট রাজার দেশে (অন্যপ্রকাশ), শাহনাজ মুন্নীর ছোটগল্প প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর (কথাপ্রকাশ) ও ইকবাল খন্দকারের কিশোর উপন্যাস কবিরদের নিখোঁজ রহস্য (পাঞ্জেরী)।
শিশু-কিশোরদের নিয়ে আয়োজন
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড.
সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪৩৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. তারিক মনজুর, অধ্যাপক শায়লা আহমেদ এবং বাচিকশিল্পী শফিকুর রহমান বাহার।
আলোচনা অনুষ্ঠান
গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দর্পণে গোলাম মুরশিদ পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন স্বরোচিষ সরকার ও গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রাতিষ্ঠানিকতা পেলে গোলাম মুরশিদ হবেন তাঁর পুরোধা ব্যক্তি। তাঁর ইতিহাস চর্চার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো উপেক্ষিতের প্রতি নজর, আন্তঃশৃঙ্খলাধর্মিতা এবং ব্যক্তিকে ইতিহাসের কর্তাসত্তায় অধিষ্ঠিত করা।
আলোচকদ্বয় বলেন, অত্যন্ত নির্মোহভাবে মুরশিদ ইতিহাসকে দেখার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল জুলাই’র গল্প মঞ্চে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। লেখক বলছি মঞ্চে নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ইকতিজা আহসান ও মৃদুল মাহবুব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মোসা. ইসমত আরা ও মুহাম্মদ ইসমাইল। সংগীত পরিবেশন করেন জি এম জাকির হোসেন, তানজিনা করিম স্বরলিপি, মাকসুদুর রহমান মোহিত খান প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।
এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।
সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/ইভা