দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লি দখল করতে চলেছে বিজেপি। আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোট গণনার গতি–প্রকৃতি সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই সময় পর্যন্ত মোট ৭০ আসনের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে আছে ৪২ আসনে এবং আম আদমি পার্টি (আপ) ২৮ আসনে। কংগ্রেস একটি আসনে বেশ কিছু সময় এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে পড়েছে।

ভোটের পরপরই প্রায় সব সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষায় বিজেপিকে জয়ী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। গণনার শুরু থেকেও দেখা যাচ্ছে, সমীক্ষার ফল হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রথম রাউন্ডের গণনার পরে দেখা যায়, আপ নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মুখ্যমন্ত্রী আতিশি বেশ কিছু ভোটে পিছিয়ে আছেন।

পরবর্তী রাউন্ডে দুজন এগোলেও ষষ্ঠ রাউন্ডের শেষে নিউদিল্লি আসলে কেজরিওয়াল ফের পিছিয়ে পড়েছেন। সামান্য ব্যবধানে হলেও বিজেপির প্রভেশ ভার্মা এগিয়ে। প্রভেশের বাবা সাহেব সিং ভার্মা একসময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কালকাজি আসনেও পিছিয়ে যান আতিশি বিজেপি প্রার্থী রমেশ বিধুরীর কাছে।

এবারের ভোট ছিল ত্রিমুখী। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক কংগ্রেস ও আপ লোকসভা ভোটে জোটবদ্ধ হয়ে লড়লেও বিধানসভার ভোটে তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কংগ্রেস ও আপের সমর্থন ক্ষেত্রও এক। দলিত, অনগ্রসর ও মুসলমান। লড়াই ত্রিমুখী হওয়ায় বিজেপি শুরু থেকেই যথেষ্ট উৎফুল্ল ছিল। কারণ, ছোট ব্যবসায়ী, পাঞ্জাবি উদ্বাস্তু, সরকারি কর্মী ও মধ্যবিত্তের মধ্যে বিজেপির সমর্থন অটুট।

আবার মধ্যবিত্তের মন জিততে বাজেটে এবার বিজেপি সরকার আয়করে বিপুল ছাড় দিয়েছে। ভোটের ঠিক আগে বাজেট পেশ রাজনৈতিকভাবে বিজেপির পক্ষে যে সুবিধাজনক হয়েছে, তা গণনার গতি থেকে বোঝা যাচ্ছে।

দিল্লির ভোটারদের মধ্যে রয়েছেন বিপুল পূর্বাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠী। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চল ও বিহার থেকে আসা মানুষের সমর্থন পেতে বিজেপি এবার চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। ২০২৪ সালে লোকসভায় দিল্লির ৭টি আসনের মধ্যে ৬টির প্রার্থী পরিবর্তন করলেও ভোজপুরি সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক ও সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারিকে বিজেপি বদলায়নি। পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের সমর্থনে মনোজের পাশাপাশি বিজেপি প্রচারে নেমে এসেছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। গণনার প্রাথমিক গতি প্রকৃতি দেখাচ্ছে, পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের সমর্থন বিজেপি ভালোই পেয়েছে।

দিল্লিতে মুসলিম–অধ্যুষিত আসন আছে ৭টি। ২০১৫ ও ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে ৭টিই জিতেছিল আপ। এবার কংগ্রেস সেই আসনগুলোয় জোরালো প্রচার চালিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ওই ৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৪টিতে এগিয়ে রয়েছে। গতবার কংগ্রেস পেয়েছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট। এবার যত বাড়তি ভোট তারা পাবে, ততই ক্ষতি আপের।

আপের বিরুদ্ধে এবারের প্রচারে বিজেপি তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিল। প্রথমত, আপ নেতাদের ‘দুর্নীতি’। আবগারি (মদ) কেলেংকারি এবং ৪২ কোটি টাকা খরচ করে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসের ভোলবদলের বিরুদ্ধে তারা লাগাতার আন্দোলন করে গেছে। এতে আপ নেতাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি অবশ্যই কিছুটা নষ্ট হয়েছে।

বিজেপির প্রচারে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট ছিল স্থানীয় নেতাদের জোটবদ্ধতা। অতীতে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কুফল বিজেপিকে ভোগ করতে হয়েছে, এবার তা দেখা যায়নি। তৃতীয় বৈশিষ্ট রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সক্রিয়তা, যা গত বছর লোকসভা ভোটে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে না বেছে বিজেপি এবার প্রচার চালিয়েছে। দলের মুখ ছিলেন একজনই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গণনার গতি–প্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, হারের হ্যাটট্রিকের লজ্জা প্রধানমন্ত্রীকে পেতে হচ্ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র গণন র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ