নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে অনৈতিক সম্পর্কে গড়ে নারী বিচারককে বিয়ে করার অভিযোগে সহকারী অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৪তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখা থেকে এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি হলেও বিষয়টি শনিবার জানাজানি হয়। 

নোবিপ্রবির রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো.

তামজিদ হোসাইন শনিবার বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এক ছাত্রী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সর্ম্পক করে অন্যত্র বিয়ে করেন বলে গত বছর ২৩ অক্টোম্বর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। নোবিপ্রবি’র যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি অভিযোগ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির সুপারিশ এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী ছাত্রী শনিবার বিকেলে সমকালকে বলেন, ‘২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে আমাকে মানসিক অত্যাচার করত। ফলে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে এবং সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক দিলে তিনি (শিক্ষক) অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে তিনি বলতেন, আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কল দেন। এমন করে করে তিনি আমাকে ফাঁদে ফেলে দিতেন। এক সময় মানসিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার প্রস্তাবে রাজি হই। দীর্ঘ ১৮ মাস আমার সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক চলতে থাকে। গত বছর ১১ অক্টোবর তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকায় নিয়ে যান। কাজী অফিসের সামনে গিয়ে তার বাবা অসুস্থ, জরুরি বাবাকে দেখার জন্য বাগেরহাট জেলার শরনখোলা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে বলে তিনি আমাকে ঢাকায় রেখে চট্টগ্রাম চলে যান।’

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম গিয়ে ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এক বিচারককে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে মোস্তাফিজ তার স্ত্রীকে বদলি করে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আনেন। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে তার স্ত্রীকে নোবিপ্রবিতে আইন বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি নোবিপ্রবি উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।’
 
এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। 

নোবিপ্রবির উপার্চাযের বক্তব্য জানতে কল করা হলে তিনিও তা রিসিভ করেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বরখ স ত বরখ স ত

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ