মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল ঘুরে বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম–সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সভায় মাছের আসা–যাওয়া বন্ধে বিলের যত্রতত্র দেওয়া জালের ব্যবহার বন্ধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিলে পর্যটক নিরুৎসাহিত করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

রোববার সকালে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণের আগে মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বাইক্কা বিলের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।

মতবিনিময় সভায় ফরিদা আখতার বলেন, ‘এখানে এসে একটা কথা শুনে কষ্ট লাগল, হাওরে নেট (জাল) দিয়ে মাছের আসা-যাওয়া বন্ধ করা হয়। আপনারা মাছকে বাইক্কা বিল থেকে যেতে দিচ্ছেন না, ফিরতে দিচ্ছেন না; এটা অন্যায়। বাইক্কা বিলে সব ধরনের নেটের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বাইক্কা বিলে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হবে।’

বাইক্কা বিলকে মাছের বীজতলা উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বাইক্কা বিলে যে পানি থাকে, সেখানে মাছের প্রজনন ঘটে। বর্ষায় সেই মাছ বাইক্কা বিল হয়ে ১৩২টি বিলে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মৎসজীবীরা বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের কারণে যত্রতত্র বাঁধ ও জালের ব্যবহার করায় বিলের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটছে। বিলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী ছাড়া কাউকে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না। তিনি বাইক্কা বিলে মাছের প্রজনন বাড়াতে চিহ্নিত এলাকায় খননকাজ চালানোর আশ্বাস দেন।

ফরিদা আখতার আরও বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে জলা-জঙ্গলে বৈচিত্র্যময় পাখির বসবাস। পর্যটকদের পদচারণে বিলের মাছ, পাখি ও জীব–প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পর্যটকদের চলাফেরা, হইচই পাখিদের আতঙ্কিত করে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাঁরা সেখানে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন।

মৎস্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়নে প্রকল্প করার চিন্তা করবেন না। কারণ, বিদেশি অর্থ একপর্যায়ে শেষ হবেই। তারা সারা বছর অর্থ দিক, এটাও তাঁরা চাইতে পারেন না। এ জন্য নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। হাওরের বিভিন্ন কাজে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিজেরাই রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ‘একটি ছোট দাবি থেকে তরুণেরা দেশের বৈষম্য দূর করতে চলে গেছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার তরুণ আহত হয়েছে। তাদের কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দেশের তরুণদের জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে।’

মতবিনিময় সভায় মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো.

আনোয়ার হবীর, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মৎস য উপদ ষ ট আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।

গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।

বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ 
  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক
  • ভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট
  • হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
  • কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো গোলাগুলি