গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হকের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর ওপর গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী আরও জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, গাজীপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলি করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর শুরু হয়। তখন স্থানীয় মসজিদে মাইকে ‘মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এরপর একদল লোক এসে বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং মারধর শুরু করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার পর তাঁরা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেন, কোথাও ভাঙচুর হলে তাঁদের যেন জানানো হয়। শুক্রবার রাতে তাঁদের কাছে খবর আসে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীরা রওনা হন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। বাধা দিলে পেছন থেকে হুট করে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যান। মুখ বাঁধা কিছু লোক রামদা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগে ওই ১৫ জনকে ছাদে নিয়ে বেধড়ক পেটান, কুপিয়ে জখম করেন। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের ওপরও হামলা হয়। পুলিশকে জানানো হলে দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে।

হামলার পর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে গুরুতর আহত সাতজনকে পাঠানো হয় ঢাকায়। আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে রাত তিনটার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
  • সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার কারিগরি শিক্ষার্থীদের, তবে অবস্থান চলবে