‘রেজা নুর: চন্দন বনের ঐশ্বর্য’ সংকলনের মোড়ক উন্মোচন
Published: 10th, February 2025 GMT
‘রেজা নুর: চন্দন বনের ঐশ্বর্য’ সংকলনের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর উত্তর বাড্ডার কামরুল কনভেনশন সেন্টারে এই সংকলনের মোড়ক উন্মোচন হয়।
চতুরঙ্গ সম্পাদিত ‘একজন রেজা নুর: চন্দন বনের ঐশ্বর্য’ সংকলনটি মূলত কবি ও কথাসাহিত্যিক রেজা নুরের সাহিত্যের মূল্যায়নধর্মী একটি সংকলন। সংকলনটি সম্পাদনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম।
মোড়ক উন্মোচন পর্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রেজাউদ্দিন স্টালিন। তিনি বলেন, “রেজা নুর হলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও লেখক। প্রবাস জীবনে শত ব্যস্ততার মধ্যেও যে একাধারে সাহিত্যের সব শাখায় অবদান রেখে যাচ্ছেন। তার কবিতাও অসামান্যভাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সৌন্দর্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অপরূপ বর্ণনা ও বন্দনা। তার মতো লেখকের উচিত দেশে এসে নিজেকে উজার করে লেখালেখিতে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া।”
আরো পড়ুন:
বইমেলায় কবীর আলমগীরের ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগের পতন’
বইমেলায় ফাহমিদা নবীর প্রথম বই প্রকাশিত
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে কবি, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক মুম রহমান বলেন, “রেজা নুরের সরল ভঙ্গি ও বর্ণনা পাঠককে ধরে রাখতে সহযোগিতা করে। যেকোনো বর্ণনা করতে গেলে তা যেন সত্যিকার বা বাস্তবিকভাবে দেখা মিলে।”
এছাড়া মুম রহমান লেখক রেজা নুরের অন্যান্য বইয়ের ছোট ছোট ব্যাখা ও বইয়ের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে কবি সাম্মি ইসলাম নীলা রেজা নুরের আদমের আগের পৃথিবী নামক কবিতাটি পাঠের পাশাপাশি বলেন, “সরল ভঙিমায় রেজা নুর যে চিত্র আঁকেন এককথায় তা অসাধারণ। রেজা নুর ব্যক্তি হিসেবেও প্রশংসনীয় একজন মানুষ। তিনি মানুষকে সহজেই আপন করে নিতে জানেন।”
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে কথা বলেন কবি ও সাংবাদিক পলিয়ার ওয়াহিদ, কবি মাহমুদ নোমান এবং কবি, কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক জব্বার আল নাঈম।
পলিয়ার ওয়াহিদ বলেন, “যশোর আমার জন্ম এলাকা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ফররুখ আহমেদ, রেজাউদ্দিন স্টালিন সেই পরম্পরায় যশোরে পেয়েছি রেজা নুরকে। তার সঙ্গে পরিচয়ের আগে পরিচিত হই তার লেখার সঙ্গে। এখনো ভোর উপন্যাস পড়েছি, অসম্ভব ভালো লাগা কালজয়ী উপন্যাস।”
চতুরঙ্গ সম্পাদক জব্বার আল নাঈম বলেন, “লেখালেখির কারণে রেজা নুরকে দেশের মানুষ চিনতে পেরেছি সত্যি কিন্তু, তার আরো কিছু অবদান আছে, তিনি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। তিনি স্থানীয়ভাবে অনেক উন্নয়নমূল কাজ করে যাচ্ছেন।”
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনকারী হিসেবে ছিলেন জিনাত রেহানা লুনা। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন হাসানুর রহমান।
উক্ত অনুষ্ঠানে লেখক রেজা নুর নিজেও সংক্ষিপ্ত আকারে নিজের জীবন ও লেখালেখি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা.
চতুরঙ্গ এই সংখ্যায় যারা লিখেছেন তারা হলেন-ফিরোজ আশরাফ, মুম রহমান, মনি হায়দার, তাজ ইসলাম, খালেদ রাহী, শামস সাইদ, মোজাফ্ফর হোসেন, সাইফ বরকতুল্লাহ, পলিয়ার ওয়াহিদ, আজিম হিয়া, শিবলী আহমেদ, কাজী শোয়েব শাবাব, শিমুল জাবালি, সাম্মি ইসলাম নীলা, জোবায়ের মিলন, মাহমুদ নোমান, রাসেল আবদুর রহমানসহ আরো অনেকে।
একই অনুষ্ঠানে রেজা নুরের আরো দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। প্রথমটি কবিতাগ্রন্থ ‘আদমের আগের পৃথিবী’ এবং উপন্যাস ‘চেনা আগুন’।
ঢাকা/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইম ল ব র আল রহম ন স কলন
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ