ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত যেকোনো শুল্কের পাল্টা ব৵বস্থা নেবে। আজ সোমবার ওয়াশিংটনকে বাণিজ্যযুদ্ধের বিষয়ে সতর্ক করে এ কথা বলেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ–নোয়েল ব্যারট।

ফ্রান্সের টিএফওয়ান টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা নেই।’

এর আগে গতকাল রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত বিশেষ উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা (আমদানি) সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে বলে জানান ট্রাম্প।

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একই ধরনের শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এদিকে মার্কিন আমদানি পণ্যের ওপর চীনের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও বাড়ল।

ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানাগুলো এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে অন্যায্য প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়। তাই দেশের শিল্পকারখানাগুলোকে বাঁচাতে তিনি এমন শুল্ক আরোপের পক্ষে।

ট্রাম্পের ঘোষিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে ব্যারট বলেন, ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। এর আগে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৮ সালে ট্রাম্প এ রকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।’

ব্যারট বলেন, ‘ওই সময় আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। এবারও আমরা একই পথে হাঁটব।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কী ধরনের পাল্টা ব্যবস্থার বিষয়ে ইইউ সম্মত হবে, সে বিষয়ে ব্যারট বলেন, কোন কোন খাতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে, সে বিষয়টি ইউরোপিয়ান কমিশন ঠিক করবে। তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াতে কারও আগ্রহ থাকার কথা নয়।’

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ইইউকে বারবার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুল্ক আরোপে ইইউ শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নয়। ইইউ কি আপনার প্রধান সমস্যা? আমি তা মনে করি না। আপনার প্রধান সমস্যা চীন। আপনার উচিত প্রধান সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়া।’

মাখোঁ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ব্যবস্থা নিতে ইইউর প্রস্তুত থাকা দরকার।

মার্কিন বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেশী দেশ কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি হয়।

ট্রাম্প কয়েক দিন আগেই কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে আলোচনার ভিত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়।

কানাডা ছাড়াও ব্রাজিল, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণ ইস্পাত আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর অন্যান্য দেশ যে হারে শুল্ক আরোপ করেছে, তার সঙ্গে মেলাতে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করবেন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।

ক্ষমতা গ্রহণের পরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান বাণিজ্য অংশীদার চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তাঁর দেশের আর্থিক শক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে আগ্রহী।

কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে তিনি উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ট্রাম্পের দাবি মেনে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয় কানাডা ও মেক্সিকো। এরপর শুল্কারোপ এক মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প।

তবে চীনের ওপর আরোপ করা শুল্ক বহাল থাকছে। জবাবে বেইজিংও কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র র শ ল ক আর প ব যবস থ ইউর প য় আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চুক্তি হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি সাপেক্ষে গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় যে গোপনীয়তার বিষয়টি ছিল, চুক্তি সই হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর শিগগিরই হয়তো যৌথ বিবৃতি আসবে। তথ্য অধিকারের আলোকে এটা করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তো‌জার সঙ্গে আলাপচারিতায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। গোলাম মোর্তোজা ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।

গোপনীয়তার বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আন্তর্জাতিক রীতিতে নির্দিষ্ট, শুধু তা–ই নয়, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক ও বিমা চুক্তিতে উপনীত হয়, তখন এই গোপনীয়তার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। এমনকি দুজন ব্যক্তি সম্পদ হস্তান্তর করলেও এ ধরনের বিষয় থাকে।

শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চুক্তির মূল নিয়ামক হিসেবে নিজস্ব নিরাপত্তার কথা বলেছে, সেখানে আলোচনায় গোপনীয়তার শর্ত থাকা অবশ্যম্ভাবী। এর মাধ্যমে দেশের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো উপাদান থাকলে আমরা সে চুক্তিতে করব না, সেটাই স্বভাবিক বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। নিজস্ব স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার সুযোগ নেই। নিজস্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি হবে। তাতে বাণিজ্য চুক্তি করে লাভ হবে না। স্বল্প মেয়াদে বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি আমাদের বাণিজ্য সক্ষমতা হ্রাস পায়, কিংবা আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, সেই চুক্তি কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয়।’

তবে আলোচনা চলাকালে দুঃখজনকভাবে চুক্তিটি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ বশিরউদ্দিন। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। যেগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারত, সেখান থেকে বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বের হয়ে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মোটেও বিষয়টি উত্থাপন করেনি। এই বিষয়টি একমুখী। গত বছর বোয়িং ১২টি বিমান বানিয়েছে। সুতরাং এই চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম বিমান সরবরাহ করতে পারবে। বরং তাদের আগ্রহ ছিল কৃষিপণ্য নিয়ে। বাংলাদেশ প্রতি ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক। বাংলাদেশ মূলত জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বলেছে, যেসব পণ্য এমনিতেই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের মতো। ফলে বাংলাদেশে তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি কমানোর চেষ্টা করতে পারে।

বোয়িং বিমান খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বিমান কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। তবে বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়। বিমানের পরিচালন সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ