৪টি সড়কে অবস্থান–বিক্ষোভ, জনভোগান্তি
Published: 10th, February 2025 GMT
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা একটার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন তাঁরা। বেলা দুইটার দিকে তাঁদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিপেটার পর আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
এদিকে গতকাল একই সময়ে আরও একটি দল শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। তাঁরা সরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগবঞ্চিত দাবি করে আন্দোলনে নামেন। তাঁদের ওপরও লাঠিপেটা করে পুলিশ। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছিলেন।
শাহবাগ ছাড়াও প্রেসক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পেছনে টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে আরও দুটি দল দাবি আদায়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান করে। মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে প্রথমে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আগের দিন রোববার তাঁরা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন। গতকাল ছয় দফা দাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত প্রবাসী শ্রমিকেরা টিঅ্যান্ডটি ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
এক দিনে রাজধানীর চার জায়গায় দিনভর বিক্ষোভ–সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শাহবাগ হয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীরা রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়ে মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। এ সময় তাঁরা রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হন।
শাহবাগ অবরোধ ও পুলিশি তৎপরতাসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ দাবিতে আন্দোলনকারীরা বেলা একটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তখন শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ দফায় দফায় লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জেমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ বাতিল করে যে রায় দেওয়া হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। বর্তমান সরকারই আমাদের নিয়োগের সুপারিশ করে আবার তা বাতিল করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা থেকে সরব না।’
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তিনটি ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে প্রহসন চলছে।
আন্দোলনকারীদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় একই বছরের ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর ফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, এমন ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদ এক বিবৃতিতে বলেন, সভা-সমাবেশসহ যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ দিয়ে বলপ্রয়োগ করে দমন করা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী।
ছয় মাসে শতাধিক আন্দোলনছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক যৌক্তিক বা অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষার্থী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আন্দোলনের নামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে ঢাকার যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি-কষ্ট বাড়ছে।
গত ছয় মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে রাজধানীতে শতাধিক আন্দোলনের তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে অনেক সংগঠন ও গোষ্ঠীর আন্দোলন এখনো চলমান। এমন অনেক সংগঠনের ব্যানারেও আন্দোলন হচ্ছে, যেসব সংগঠনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। শুধু দাবি জানানোর জন্য বেশ কিছু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনো ব্যানার বা সংগঠন ছাড়াই আন্দোলনে নেমেছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক আন্দোলন ও দাবিদাওয়া আসছে। দাবিগুলোর মধ্যে কোনটি যৌক্তিক আবার কোনোটি অযৌক্তিক। অতীতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় অনেকে যৌক্তিক দাবিও প্রকাশ করতে পারেনি।
এসব দাবি ও আন্দোলন নিয়ে সরকারের করণীয় সম্পর্কে হাসানুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে তো সবার সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে বলা উচিত, যেসব যৌক্তিক দাবি এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো মানা হবে। অন্য সব যৌক্তিক দাবি একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী সরকার অন্য যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র র স মন অবর ধ স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ