রোম শহরের বুকে আস্ত এক দেশ ভ্যাটিকান সিটি
Published: 11th, February 2025 GMT
ইতালির রোম শহরের ভেতরে ছোট একটি দেশ ভ্যাটিকান সিটি। নামের সঙ্গে সিটি থাকলেও এটি বিশ্বের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ এবং রোমান ক্যাথলিক গির্জার সদর দপ্তর। ক্ষুদ্র এ দেশটির প্রায় চারপাশটাই পাথরের দেয়ালে ঘেরা। দেয়ালগুলোর ভেতর আছে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা নামের বিশাল এক গির্জা, ভ্যাটিকান প্যালেস এবং আরও কিছু ভবন। ভ্যাটিকান প্যালেসের ভেতরে পোপের ভবন, জাদুঘর, একটি গ্রন্থাগার এবং সিস্টিন চ্যাপেল ভবনের অবস্থান।
ইতালির তাইবার নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত ভ্যাটিকান একসময় জলাভূমি ছিল। আজার ভাতিকানাস নামে পরিচিত অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের শুরুর দিকের বছরগুলোতে প্রশাসনিক অঞ্চলে পরিণত হয়, সেখানে বিলাসবহুল স্থাপনা গড়ে ওঠে।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জার শুরু যেভাবে
৬৪ খ্রিষ্টাব্দে রোমের বেশির ভাগ অংশ আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ভ্যাটিকান হিল নামের পাহাড়ের পাদদেশে খ্রিষ্ট ধর্মপ্রচারক সেন্ট পিটারসহ আরও কয়েকজন খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন সম্রাট নিরো। সেখানেই তাঁদের সমাধি হয়। ৩১৩ সালে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন রোমান সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন। এরপর ৩২৪ সালে তিনি সেন্ট পিটারের সমাধির ওপর একটি গির্জা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। দ্রুতই জায়গাটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে জনপ্রিয় তীর্থস্থান হয়ে ওঠে। সেখানে বাণিজ্যিক এলাকাও গড়ে ওঠে।
৭৫০ শতকের পর ইতালির মধ্যাঞ্চলের বেশির ভাগই পোপদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এসব জায়গা পপাল স্টেটস বা পোপের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। ৮৪৬ সালে আরবদের হামলায় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা গির্জাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তৎকালীন পোপ চতুর্থ লিও পবিত্র এ গির্জাকে সুরক্ষিত রাখতে এটি এবং আশপাশের স্থাপনাগুলো ঘিরে দেয়াল নির্মাণের আদেশ দেন। ৮৫২ সালে ৩৯ ফুট দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ১৬৪০ শতকে পোপ তৃতীয় উরবানের সময়ে দেয়ালগুলো ক্রমাগত বিস্তৃত করা হয়।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ভুল তথ্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ সময়ে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই ছিল রাজনৈতিক। গতকাল বুধবার তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছিল ১ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তা বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে গত প্রান্তিকে এ ধরনের ভুল তথ্য ছিল মাত্র ১১টি। সেটি এ বছরের প্রথম তিন মাসে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭টিতে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট আটটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পেয়েছে ডিসমিসল্যাব।
সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ২৩৬টি তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ভুল তথ্য পাওয়া গেছে ৮৬৭টি, যা আগের প্রান্তিকে রেকর্ড করা ৮১৬টির তুলনায় কিছুটা বেশি। ভুল তথ্যের প্রায় অর্ধেকই (৪৫ শতাংশ) রাজনীতি সম্পর্কিত ছিল। এর পর ছিল ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য (১৩ শতাংশ), যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় সামান্য কম।
অপরাধ-সম্পর্কিত ভুল তথ্য বেড়েছে
বছরের প্রথম তিন মাসে প্রচারিত খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতি-সংক্রান্ত খবর ছিল ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ছিল ভারতের, যা বাংলাদেশের বলে ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে একটি ইউটিউব চ্যানেলে হোটেল থেকে লাফিয়ে পড়া এক ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হয়, কিন্তু সেটি ছিল মূলত ইন্দোনেশিয়ার।
রাজনৈতিক ভুল তথ্য
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই রাজনৈতিক। আগের বছরও রাজনীতি-সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ (৩৪.৮ শতাংশ) ও অন্তর্বর্তী সরকারকে (২১.৮ শতাংশ) নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। তবে আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে প্রচারিত ভুল তথ্যগুলোর অধিকাংশই (৬৮ শতাংশ) ছিল ইতিবাচক। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও সমন্বয়কদের নিয়ে ছড়ানো অধিকাংশ ভুল তথ্য ছিল নেতিবাচক।
ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য
ধর্ম-সম্পর্কিত ভুল তথ্যের সংখ্যা সর্বশেষ প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্যের পরিমাণ ছিল মোট যাচাইকৃত ভুল তথ্যের ১৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। তবে এর ধরন ছিল একই রকমের। যেমন, পুরোনো বা সম্পাদিত ছবি-ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা।
বেড়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্যের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ২৭টি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন। সেখানে এ বছরের প্রথম তিন মাসে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪টিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ভুল তথ্যের ২৪ শতাংশ ছিল রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট।