ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের, যাত্রীদের ভোগান্তি
Published: 11th, February 2025 GMT
তাঁত বোর্ডের অধীন থেকে বস্ত্র অধিদপ্তরের আওতায় কলেজ স্থানান্তরের দাবি উপেক্ষা, কলেজের কার্যক্রম বন্ধ ও অন্যত্র পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে সদর উপজেলার সাহেপ্রতাপ এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
অবরোধের কারণে দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীবাহী বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে মহাসড়কের সাহেপ্রতাব মোড়ে আসেন। পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে তাঁরা মহাসড়কে বসে পড়েন।
অবরোধে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, নরসিংদীর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীন নিয়ে পাঠদানের দাবি তাঁদের দীর্ঘদিনের। সরকার বিষয়টি আমলে না নিয়ে বরং নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি এ কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। নরসিংদীর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধের এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
দাবি পূরণে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা বেশ কয়েকবার ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি বাস্তবায়নে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও পূরণ করেনি। নরসিংদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে তাঁত বোর্ড থেকে সরিয়ে বস্ত্র অধিদপ্তরের অধিভুক্ত করে নরসিংদীতেই কলেজ পরিচালনার দাবি তাঁদের।
শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বেলা আড়াইটায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী ও পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। বেলা তিনটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও মহাসড়ক অবরোধ আন্দোলন থেকে সরে আসেননি শিক্ষার্থীরা। জানতে চাইলে মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এসেছি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে উঠে যাওয়ার অনুরোধ নিয়ে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি, অবরোধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর একই স্থানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীকালে গত ৬ জানুয়ারি বেলা দুইটা থেকে প্রতিষ্ঠানটির সেমিনারকক্ষে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমদ ছিদ্দিকীসহ কমপক্ষে ১৫ জন কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। ওই দিন রাত ৯টায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবরুদ্ধ দশা থেকে বের হয়েছিলেন ওই কর্মকর্তারা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’