যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ক পারমিটসহ (কাজের অনুমতি) ছয়টি ভিসা দেওয়ার কথা বলে সিলেটে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিসা দিতে না পারায় টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করছেন অভিযুক্ত সৈয়দ উবায়দুর রহমান। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর মধ্যস্থতায় ১২ লাখ টাকার চেক দিলেও সেগুলো ব্যাংকে ডিজঅনার (প্রত্যাখ্যাত) হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম এস কে আজাদ আমিন। তিনি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর এলাকার বাসিন্দা। অভিযুক্ত উবায়দুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরতের দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। সৈয়দ উবায়দুর রহমান ওসমানীনগরের দক্ষিণ তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে সিলেট নগরের কুয়ারপাড় এলাকায় বসবাস করেন।

অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সৈয়দ উবায়দুর রহমান বলেন, ৬০ লাখ টাকা নয়, এস কে আজাদের সঙ্গে ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। তবে সালিসের মাধ্যমে তিনি ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি টাকা আরও কিছুদিন পর দেওয়ার কথা, কিন্তু এর মধ্যে মামলা হয়েছে। এখন যেহেতু মামলা হয়েছে, বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াতেই সমাধান হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এস কে আজাদ অভিযোগ করেন, যুক্তরাজ্যের ছয়টি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ব্যবস্থা করে দিতে ২০২২ সালের শুরুর দিকে এস কে আজাদের সঙ্গে উবায়দুর রহমানের ১০ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। এর মধ্যে প্রত্যেক ভিসার জন্য অগ্রিম হিসেবে ২ লাখ টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা তাঁকে দেওয়া হয়। এর কয়েক মাস পর উবায়দুর ভিসা পেয়েছেন জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিসার ছবি পাঠান। পরে তিনি বাকি ৪৮ লাখ টাকা দিতে বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একপর্যায়ে এস কে আজাদ ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁর অবশিষ্ট ৪৮ লাখ টাকা প্রদান করতে চাইলে উবায়দুর নগদ টাকা তাঁর হাতে তুলে দিতে অনুরোধ করতে থাকেন। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে নগদ ৪৮ লাখ টাকা উবায়দুরের কাছে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর হাতে ভিসাসংবলিত পাসপোর্ট তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কুরিয়ার সার্ভিসে পাসপোর্ট পাঠান। কিন্তু পাসপোর্টে কোনো ভিসা ছিল না। তখন তাঁরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

এস কে আজাদ অভিযোগ করেন, এ নিয়ে একাধিবার যোগাযোগ করা হলে উবায়দুর রহমান নানা টালবাহানা করতে থাকেন। সব টাকা ফেরত দিতে একের পর এক তারিখ করতে থাকেন। এলাকাবাসীর মধ্যস্থতায় একপর্যায়ে গত বছরের ২১ জুলাই তিনি ২ লাখ টাকা করে ৬টি চেক দেন। কিন্তু চেকগুলো ডিজঅনার হলে আবারও মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আশ্বাস দেন, ৯ ডিসেম্বর চেকগুলো ক্যাশ হবে। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর আবারও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। এরপর গত ১২ ডিসেম্বর উবায়দুরের নামে তিনি লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেও তিনি টাকা ফেরত দেননি। এসব ঘটনায় গত ১৪ জানুয়ারি সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন আজাদ। এ ছাড়া ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়েরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

এস কে আজাদ আমীন বলেন, অনেকের সঙ্গে একই ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতি করে উবায়দুর রহমান। তিনি তাঁর দুই বোনকে ইংল্যান্ড পাঠিয়েছেন। নিজের বাসা আরও সম্প্রসারিতসহ বিলাসী জীবনযাপন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে উবায়দুরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সহজ–সরল বিদেশযাত্রীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার আহ্বানও জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৬০ ল খ ট ক য গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আজ শুক্রবার ইসরায়েল হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এতে জ্বালানির তেলের জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এ ছাড়া মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৪৩ ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৭ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছিল, যা কিনা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মানে হচ্ছে দুনিয়াজুড়ে সুপারমার্কেটে খাবারের দাম, গাড়িতে তেল ভরার খরচ, পরিবহন ব্যয়—সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনই বলা কঠিন, তবে সম্ভবত হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।’

হরমুজ প্রণালি বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো এই পথ দিয়েই তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও জানান, চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েলকে এ হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলা একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে তেহরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (তেহরান) যেন মার্কিন স্বার্থ বা ব্যক্তিদের লক্ষ্য না করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা বলেন, ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে শুধু তেলের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাবে না, আশপাশের অন্যান্য তেল উৎপাদকদের দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
  • গাইবান্ধায় যাত্রীদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে মারধরের শিকার স্টেশনমাস্টার
  • মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আটক
  • জ্বালানির দাম বাড়ল ৯ শতাংশের বেশি
  • ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা