দক্ষিণের মৃদু হাওয়া কানে কানে বলে দিচ্ছে বাংলার প্রকৃতিতে রাজকীয় শোভা বিস্তারে আগমন ঘটতে চলেছে ঋতুরাজ বসন্তের। শীতের নিস্তব্ধতার পর যখন চারপাশে রঙের বাহার ছড়িয়ে পড়ে, তখনই বসন্তের আগমন ঘটে প্রকৃতিতে।
পুরোনো জীর্ণতার আবরণ খুলে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানবমনও সেজে উঠে নতুন সাজে।
হৃদয় জুড়ানো কোকিলের কুহু কুহু সুরের সঙ্গে ফাল্গুনের আগুনরাঙা পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার আবিরে চারপাশ রঙিন হয়ে ওঠে। প্রকৃতির রঙে তরুণ-তরুণীরাও সাজে বাহারি সাজপোশাকে।
বসন্ত মানেই পোশাকে থাকবে রঙের ছড়াছড়ি। নারীরা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া যাই পরুক না কেন বাসন্তী রং প্রাধান্য পায় পোশাকে। পুরুষরাও পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়ায় বাসন্তী রঙের ছোঁয়ায় নিজেদের রাঙিয়ে দেন। এর পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে পোশাকে উজ্জ্বল রং প্রাধান্য পাচ্ছে ফ্যাশন সচেতন মানুষের সাজপোশাকে।
ফ্যাশনে নতুনত্ব আনতে দেশের ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে নানা শপিং মল বসন্তকে কেন্দ্র করে সেজে ওঠে নানা রঙের ও নানা ডিজাইনের পোশাকে। এর পাশাপাশি নারীর সাজের অনুষঙ্গ হিসেবে মেটাল, পাথর, মাটি, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাহারি ডিজাইনের গহনাও পাওয়া যায় বিভিন্ন শপে।
ফাল্গুনের সাজে ফুলপ্রিয় নারীরা সাজপোশাকের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিতে পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে যেমন ফুলের রং বেছে নিতে পারেন, তেমনি রঙের বৈপরীত্যও আনতে পারেন বাহারি রঙের ফুল চুলের খোঁপায় গুঁজে দিয়ে।
হালকা গরম, হালকা শীতের এই দিনে প্রিয় মানুষ অথবা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর দিনটিতে সাজটাও হতে হয় পোশাক এবং আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই ।
এ ব্যাপারে শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা জানান, ‘বসন্তে আমাদের কালারফুল অনেক ড্রেস পরা হয়, তবে বাসন্তী রংটা একটু বেশিই প্রাধান্য পায়। সেই সঙ্গে আমাদের ফ্যাশন ডিজাইনাররা যেহেতু লাল, নীল, হলুদ, কমলাসহ নানা রঙের কম্বিনেশনে ড্রেসগুলো ডিজাইন করে থাকেন, তাই এ ধরনের ড্রেসের সঙ্গে মেকআপ হালকা হলে ভালো হয়।’
পহেলা ফাল্গুনে একটু গরমের ভাব থাকায় এ আবহাওয়ার সঙ্গে চকচকে মেকআপ, গ্লিটারি আই বা জরি চকচকে চোখ না সাজিয়ে স্মার্ট একটা স্নিগ্ধ লুক দিতে পারেন। চুলটাকে একটু সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে অনেকে ফুল লাগাতে পছন্দ করেন। চুলে খোঁপা করলে বা কানের এক পাশে ফুল গুঁজে চুলকে ছেড়ে দিয়ে আয়রন করা বা আয়রন কার্ল করা, চুলের নিচের দিকটা একটু কার্ল করে নেওয়া যায়।
শোভন সাহা আরও জানান, হেয়ার স্টাইলটা বিভিন্ন ধরনের করতে পারেন, সেটি আপনার চুলের ধরন বুঝে করা যায়। আপনার লুক, পোশাক কী পরেছেন সেটির সঙ্গে মানানসই করে করতে পারেন। চুলে বেণিও করতে পারে। সেটি আপনার পোশাকের সঙ্গে মানিয়েছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বেণির দু’পাশে ফুলের মালা পরতে পারেন।
পছন্দের ক্ষেত্রে এখন রঙিন ফুলগুলোই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালেন্ডুলাসহ অন্যান্য রঙিন ফুল মেয়েদের সাজের একটি প্রিয় অংশ। নেইল পলিশের ক্ষেত্রেও একটু কালারফুল ব্যবহার করতে পারেন।
শোভনের মতে, চুড়ি ছাড়া সাজটাই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই তো হাতভর্তি কাচের চুড়ি যুগ যুগ ধরে নারীর বসন্তের সাজপোশাকের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। মেয়েদের শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ কেমন ডিজাইনের হবে, সেটি নির্ভর করে ফ্যাশনেবল নারীর রুচির ওপর। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে কালার মিলিয়ে নিজেদের পছন্দে বাহারি ডিজাইনের ব্লাউজ বানিয়ে নেওয়া যায়।
রূপ বিশেষজ্ঞ শোভন জানান, আজকাল বসন্তের সাজপোশাকে একটু ফিউশন করতে দেখা যায়। শাড়ি এক রকম পরছে তো ব্লাউজটা ভিন্ন রকম পরছে। অথবা ব্লাউজটা একটু গর্জিয়াস পরছে তো শাড়িটা একটু সিম্পল পরছে। গহনার ক্ষেত্রে মাটির তৈরি বা কাপড়ের তৈরি গহনা এখন মার্কেটে বেশ চলছে। এ ধরনের গহনার পাশাপাশি ফুলের গহনাও বানিয়ে পরতে পারেন। মাথায় ফুলের রিং পরতে পারেন বা হাতে পরতে পারেন। তাজা ফুল হোক বা আর্টিফিশিয়াল হোক ফুলের গহনা দিয়েও সাজতে পারেন।
মডেল: অদিতি
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।
রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা।
বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।
বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।
আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা।
উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।
ঢাকা/টিপু