বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজের ইঞ্জিনে আগুন লেগে চারজন গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় কীর্তনখোলার চাঁদমারী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

অগ্নিদগ্ধ চারজন হলেন মো. রুবেল (২৫), মোহাম্মদ মানিক (৩০), সম্পদ (২২) ও মো.

মান্না (২৪)। তাঁদের সবার বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায়। তাঁদের প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা সানজিদা ইসলাম বলেন, দগ্ধ ৪ জনের প্রত্যেকের শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় কীর্তনখোলা নদীসংলগ্ন চাঁদমারী এলাকায় যমুনা পেট্রোল ডিপো থেকে একটি জাহাজে ড্রামভর্তি জ্বালানি তেল ও ব্রয়লার মুরগির খাবার তোলা হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ করেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় তেলের কয়েকটি ড্রামে। এতে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো জাহাজটি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের নৌযান ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ৩০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে জাহাজের ছয় কর্মচারীর মধ্যে চারজন গুরুতর দগ্ধ হন।

মেসার্স রশিদ এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন এমবি রাশেদা-রহিমা কার্গো জাহাজের কর্মচারী আমজাদ হোসেন জানান, তাঁরা প্রতি সপ্তাহে বরিশাল থেকে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্য নিয়ে হাতিয়ায় যান। আজ সন্ধ্যায় ৭৮ ব্যারেল পেট্রোল, মুরগির খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে হাতিয়ার উদ্দেশে কার্গোটি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইঞ্জিন চালু করতে গেলে হঠাৎ ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। এ সময় কার্গো জাহাজে থাকা পেট্রোলের ড্রামে আগুন ধরে যায়। এতে মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো জাহাজে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতায় দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করেন জাহাজের কর্মচারীরা। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক ও কর্মচারী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও চারজন ভেতরে আটকা পড়ে গুরুতর দগ্ধ হন।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আকস্মিক আগুন ধরে যাওয়ার পর আমরা অনেকটা দিগ্‌ভ্রান্ত হয়ে পড়ি। এরপর আগুনের তীব্রতা এতটাই বেড়ে যায় যে তা নিয়ন্ত্রণের সাধ্য ছিল না। পরে আমি ও অপর এক স্টাফ দুলাল হোসেন ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়ে জীবন রক্ষা করি। গুরুতর আহত চারজনকে প্রথমে শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। ঘটনাস্থল ছেড়ে কার্গোটি ভাসিয়ে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
বরিশাল সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ঘটনাটি কী কারণে ঘটেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল চ রজন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ