‘একবার-দুইবার না, পত্তেক বছর বান ভাঙি বন্যার পানি ঘরও ওঠে’
Published: 13th, February 2025 GMT
বর্ষাকালে এক-দুবার বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়া অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষ মানসিকভাবে বন্যার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কুশিয়ারা নদীর পাড় ছাপিয়ে শুধু ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় না; ডুবে যায় মাঠের ফসল, চলাচলের অনুপযোগী হয় গ্রামের রাস্তাঘাট। কয়েক বছর ধরেই এমন ভোগান্তি গ্রামবাসীর জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনেও সেখানে স্থায়ী কোনো প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মিত হয়নি। স্থায়ী ও উঁচু বাঁধ না থাকায় বছরে একাধিকবার বন্যার পানিতে ভোগান্তি পোহাতে হয় হাজারো গ্রামবাসীকে। গত বর্ষাকালে অন্তত তিনবার কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে গ্রামগুলোতে প্লাবিত হয়েছে। ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে হয় অনেক পরিবারকে। কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকলে টানা দুই থেকে আড়াই মাস পানি থাকে। জলাবদ্ধতায় অনেকের উঠানে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঘর থেকে বের হতে হয়। অনেক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। প্রতিবছর বন্যায় মুক্তিনগর, ব্রাহ্মণগ্রাম, হামরকোনা, দাউদপুরসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামের শেরপুর-হামরকোনা সড়ক, আফরোজগঞ্জ ও শেরপুর বাজার এবং স্থানীয় আজাদ বখত উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ এলাকাও বছর বছর প্লাবিত হচ্ছে।
গত ২৫ জানুয়ারি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পারের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর পানি এখন অনেক নিচে। ধীরে ও শান্ত বেগে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু একটি বাঁধ না থাকায় বর্ষাকালে এই নদী পাড়ের মানুষের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে। গত বছরের বন্যার অনেক দিন পরও নদীর পাড়, গ্রামের ভেতরের কাঁচা-পাকা সড়ক, বিভিন্ন ঘর ও স্থাপনায় ক্ষতচিহ্ন আছে। শেরপুর ফেরিঘাটের দিক থেকে নদীর পাড় ধরে চলার সময় দেখা গেছে, ব্রাহ্মণগ্রামে পাড় ঘেঁষে অনেকের কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি। পাড়েই গ্রামের চলাচলের পথ তৈরি হয়েছে। পথের কিছু স্থানে বর্ষায় পানির উচ্চতা ঠেকানোর জন্য বালুর যেসব বস্তা ফেলা হয়েছিল, তা এখনো আছে। ব্রাহ্মণগ্রামের কয়েকটি স্থানে নদীর পাড়ের ঢালুতে ধস দেখা দিয়েছে। পাড় ঘেঁষে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ ফাটল। গ্রামবাসীর আশঙ্কা, আগামী বর্ষা মৌসুমে এ ফাটলগুলোর স্থানে ভাঙন শুরু হলে আশপাশের বাড়ি, ফসলি মাঠ ও অন্য স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
কুশিয়ারা নদীর পাড়ে সৃষ্ট ফাটল। খলিলপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত: বিবিসি
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফলে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জনে পৌঁছেছে। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি।
অন্যদিকে আল জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।