অলিগার্কিক শাসনের পতন দেশের গভীর কাঠামোগত সংকটগুলো উন্মোচন করেছে। পতিত সরকার রেখে গেছে সর্বব্যাপী সংকট। জনগণের মধ্যে বাড়তে থাকা অসন্তোষ এখন বাস্তবতা। এ কারণেই দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

অপসারিত অলিগার্কিক শাসনব্যবস্থা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ছিল। ব্যয় নির্বাহের সংকট মূলত শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে চলছে। ব্যাংকিং খাত নগদ অর্থের সংকটে হিমশিম খাচ্ছে। নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন ও সেবা খাত হচ্ছে সংকুচিত। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি নীতি স্থায়িত্বের অভাবে মূলধন বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে মন্দার দিকে ধাবিত। 

বিরাজমান এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি ভঙ্গুর এক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিচ্ছবি। রেখে যাওয়া ক্ষমতাকাঠামো ব্যর্থ হয়েছে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়। গণতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তে ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তথা গোষ্ঠীস্বার্থকেই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে কায়েম করেছিল। অর্থনৈতিক নীতিকাঠামো সাধারণ জনগণের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের শিকার হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসন হারিয়েছে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার অভাবে একধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। পতিত শাসক জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই দেশ পরিচালনা করছিল। 

নতুন রাজনৈতিক কাঠামো জরুরি 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বৈপরীত্যগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। তবে কোনো সরকারই বৈধ রাজনৈতিক ম্যান্ডেট ছাড়া কার্যকর অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনতে পারবে না। বাংলাদেশকে এমন একটি শাসনকাঠামো গঠন করতে হবে, যা শুধু একটি সুবিধাভোগী শ্রেণির পরিবর্তে সাধারণ জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করবে। 

সাম্য, গণতান্ত্রিক জবাবদিহি ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি প্রয়োজন। তাহলেই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। 

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, আস্থা তৈরি এবং প্রকৃত সংস্কার কার্যকর করতে পারে। নির্বাচিত সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি অর্থনৈতিকভাবেও অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক বৈধতা ছাড়া যেকোনো দেশই স্থবিরতা, প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এবং ক্রমবর্ধমান জন-অসন্তোষের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। 

সর্বসম্মত ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচি 

অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন এবং বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এই সংস্কার পরিকল্পনা বিষয়ে দ্রুত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার। ‘প্রথমে সংস্কার, পরে নির্বাচন’, এই নীতি সংকটকে আরও গভীর করবে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সর্বসম্মত ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচি এখন অপরিহার্য। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত কমিশনগুলো তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করেছে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করবে। মানুষের আশা সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাবে। তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ন্যূনতম সংস্কার কর্মসূচি সংলাপ আবর্তিত হতে পারে। ক.

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর; খ. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন; গ. প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো। 

এযাবৎ বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল স্বেচ্ছায় আরেকটি দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এই প্রবণতা বদলাতে হবে। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থা জনগণকে সত্যিকারের বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়নি। জনগণ ভয় ও হুমকি থেকে মুক্ত থেকে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে, এমন একটি নিরপেক্ষ ও নিরাপদ নির্বাচন সবার দাবি। 

রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান সংকট দেখিয়েছে, শুধু শাসকের পরিবর্তনে সমস্যার সমাধান হয় না। কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কৃতিই সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করে। নতুন সরকার কিছু সময় পর আবার স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে না যায়, এর জন্য নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারপ্রধানের ক্ষমতার আমূল সংস্কার জরুরি। একইভাবে রাষ্ট্রের তিন বিভাগ তথা সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য আবশ্যিক। এদের গঠনগত কাঠামোয় পরিবর্তনও প্রয়োজনীয়। 

এখন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। সেই জায়গায় স্থানীয় সরকারকেই কেন্দ্রে আনতে হবে। দলীয় রাজনীতির সংস্কার তথা রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত না হলে ক্ষমতার দখলদারি থামানো যাবে না। প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির জন্য কঠোর নজরদারি ব্যবস্থার দরকার; অর্থাৎ সংলাপে প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো—কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন রোধ এবং জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি—বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি হওয়া দরকার। 

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান স্পষ্ট করে জানান দিয়েছে যে রাষ্ট্রকে অবশ্যই গুটিকয় সুবিধাভোগীর পরিবর্তে অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। জনগণ স্পষ্টতই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমূল্যায়ন এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। 

আগের সম্পদ-সংযোগনির্ভর সিন্ডিকেটগুলো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। ধনী ও রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে আঁতাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা ও সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীতন্ত্রের দৌরাত্ম্য থাকলে দেশ কোনো বহিরাগত চাপ মোকাবিলা করতে পারে না। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সামাজিক চুক্তি উপস্থাপন

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনই স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, আত্মবিশ্বাস তৈরি এবং প্রকৃত সংস্কার কার্যকর করার একমাত্র পথ। নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা রাজনৈতিক পছন্দের বিষয় নয়, এটি আবশ্যক অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য। 

সংলাপে সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের আগে জনগণের সামনে একটি নতুন সামাজিক চুক্তির স্পষ্ট বিস্তারিত রূপকল্প উপস্থাপন করাকে আবশ্যিক করতে হবে। ভোটাররা প্রস্তাবের বিভিন্ন অংশের বিচার-বিশ্লেষণ করে তাঁদের পছন্দসই দল ও প্রার্থী নির্বাচন করবেন। ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিটি গণজাগরণই রাষ্ট্রের সংস্কারের নতুন যুগ সূচিত করে। অলিগার্কিক পৃষ্ঠপোষকতামূলক শাসন থেকে জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। 

শক্তিশালী, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকতামূলক নেটওয়ার্ক বিলোপ হতে পারে। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে। সংস্কার কমিশনগুলোর অনেক প্রস্তাবই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব সামাজিক চুক্তিতে নিতে পারে। জনগণের সমর্থনপুষ্ট নির্বাচিত সরকারই বড় পরিসরে অধিকার, স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির নিশ্চয়তাদানকারী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। 

নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের পথে

 

বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে হাজির হয়েছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতা রাজনৈতিক সংকট থেকে বিচ্ছিন্নভাবে সমাধান করা যাবে না। গণতান্ত্রিক বৈধতা ছাড়া কোনো সরকারই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থাপন বা প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে পারে না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন ছাড়া বাংলাদেশ কোনোভাবেই টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে পারবে না। 

বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া স্পষ্ট। আর তা হলো একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহির নাগরিক রাষ্ট্র। আর তা বাস্তবে রূপ দিতে হলে কেবল রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সামাজিক আন্দোলন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা তথা জনগণের মতামত ও তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে হবে। সুশাসনের জন্য সামাজিক আন্দোলনও জরুরি। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা কেবল দলীয় পরিচয়ে নয়; বরং সুশাসন ও ন্যায্যতা স্থাপনকারীর পক্ষে নির্বাচনে সিদ্ধান্ত দেন। এখনই সময়, পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ার। 

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক শ ন শ চ ত কর র জন ত ক স জনগণ র ম জনগণ র স ক র যকর ক ষমত র ত সরক র সরক র র ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 

রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।

তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”

দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”

সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে