রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত জেলা ও মহানগর কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজের প্রধান ফটক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলটি নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ছয় মাসের জন্য ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আল আশরারুল ইমামকে আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হজরত আনাসকে সদস্যসচিব করে ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মো.

নাহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থী মো. রহমতুল্লাহকে সদস্যসচিব করে ১৪৮ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটি ঘোষণার পরদিন ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট’ কমিটি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পরে ২ ফেব্রুয়ারি কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী হাফিজ সরকারের সঞ্চালনায় আজ মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুর রহিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম, সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদিব মাহমুদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শাহদাত হোসেন, ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

নিশাত তাসনিম বলেন, ‘এই পকেট কমিটিতে আমাকেও পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করেছি। আমরা কোনো পদের জন্য আন্দোলন করিনি। এমনকি আজও এখানে পদ পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা রাজপথে আন্দোলন করতেই পছন্দ করি। জুলাইয়ের চেতনাকে কলঙ্কিত করবে, আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না। নতুন স্বাধীনতার পর একটা দক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেটা সেই নেতৃত্ব, যাঁরা রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছেন। আমরা এমন কাউকে দায়িত্ব দিতে পারি না, যাঁরা রাজশাহীর রাজপথ কী জানেনই না।’

শিক্ষার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা লীগ, দোসরকে দিয়ে কমিটি মানব না। স্বৈরাচারের দোসরদের দিয়ে যদি কমিটি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চালানোর পাঁয়তারা করে, তাদের পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না। যাঁদের এই কমিটিতে আনা হয়েছে, তাঁরা কেউ রাজশাহীর শহীদ সাকিব আনজুম, আলী রায়হানকেই চেনেন না।’ তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হাসনাত আবদুল্লাহ ও মাহিন সরকারকে বলতে চাই, আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি কমিটি বাতিল না করা হয়, আগামী রোববার তালাইমারী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।’

এ ব্যাপারে মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আল আশরারুল ইমাম বলেন, ‘আমি আন্দোলনে ছিলাম না, এটা জানি না তাঁরা কোন সেন্সে বলছেন। আওয়ামী লীগের দোসর একজনকে বলা হচ্ছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেই আন্দোলনে এসেছেন। আন্দোলনের সময়ে কী ভূমিকা ছিল, সেটা দেখেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্র কমিটি দিয়েছে।’

জেলার আহ্বায়ক মো. নাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা কমিটি নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন নেই। কারও কোনো বিতর্কিত ভূমিকা নেই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ বর ষ র র কম ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ