রিয়ালে অন্য লড়াই: এমবাপ্পের চেয়ে বেশি বেতন চান ভিনিসিয়ুস, বেলিংহাম
Published: 15th, February 2025 GMT
মাঠে তাঁরা সঙ্গী। প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়েন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তবে মাঠের বাইরে লড়াইয়ে একে অপরের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ হয়ে উঠেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জুড বেলিংহাম। রিয়াল মাদ্রিদের তিন তারকাই ক্লাবের সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড় হতে চান। এমবাপ্পে এ মুহূর্তে সর্বোচ্চই পান। যে কারণে আপাতত ‘লড়াই’য়ে তিনি সরাসরি নেই।
তবে ভিনিসিয়ুস ও বেলিংহাম পরোক্ষে মুখোমুখিই দাঁড়িয়ে গেছেন। ভিনিসিয়ুস চান, রিয়ালে সবচেয়ে বেশি বেতন পাবেন তিনি। আবার বেলিংহামও মনে করেন, এমবাপ্পে–ভিনিসিয়ুসের চেয়ে বেশি বেতন প্রাপ্য তাঁর।
সম্প্রতি ভিনিসিয়ুসকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি প্রো লিগ। এ জন্য ১০০ কোটি ইউরো বা ১২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার প্রাথমিক প্রস্তাবও নাকি দেওয়া হয়েছে। আর সৌদি লিগের এমন আগ্রহের জেরেই রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরু করেছেন ভিনিসিয়ুস। ইএসপিএনের এক সূত্র জানিয়েছে, ভিনি চান এমন এক চুক্তি, যা তাকে এমবাপ্পে ও বেলিংহামের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। বর্তমানে তিনি বছরে আনুমানিক ১ কোটি ইউরোর মতো বেতন পেয়ে থাকেন। সঙ্গে কিছু অ্যাড অন আছে।
স্প্যানিশ দৈনিক দিয়ারিও এএস অবশ্য ভিনিসিয়ুসের বেতন দেড় কোটি ইউরোর মতো বলে উল্লেখ করেছে, যা এমবাপ্পের কাছাকাছি। তবে একটা জায়গায় এমবাপ্পের চেয়ে কমই পান ভিনিসিয়ুস। সর্বশেষ গ্রীষ্মে পিএসজি থেকে আসা এমবাপ্পে চুক্তিতে সইয়ের বোনাস হিসেবে পেয়ে থাকেন বছরে ৮০ লাখ ইউরোর মতো।
আরও পড়ুনসবচেয়ে দামি ভিনি–হলান্ড, দামি খেলোয়াড়ে ঠাসা রিয়াল–সিটি–আর্সেনাল–বার্সা০৮ নভেম্বর ২০২৪এএস বলছে, ভিনিসিয়ুসের চুক্তি নবায়নের বিষয়টিতে নজর রাখছেন বেলিংহাম। এরই মধ্যে তাঁর প্রতিনিধিদল রিয়াল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছে। ২০২৩ সালে ডর্টমুন্ড থেকে আসা বেলিংহাম বর্তমানে বছরে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি ইউরোর মতো পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। তবে গত দেড় বছরে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে পারফরম্যান্স বিচারে নিজেকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়ার দাবিদার মনে করছেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। যেহেতু রিয়ালের সঙ্গে বেলিংহামের চুক্তির মেয়াদ ২০২৯ সাল পর্যন্ত, সে জন্য ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি দেখে নিজের দাম নির্ধারণ করার লক্ষ্য বেলিংহামের।
এমন প্রেক্ষাপটে রিয়াল মাদ্রিদে জটিল পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। কারণ, ভিনিসিয়ুস, বেলিংহামের বেতন বৃদ্ধি করা হলে রদ্রিগো, ফেদে ভালভের্দে, এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গারাও একই দাবি তুলতে পারেন। একই সময়ে একাধিক তারকা ফুটবলার দলে রেখেও তাঁদের আর্থিক চাহিদা দক্ষ হাতে সামলানোর অভিজ্ঞতা অবশ্য আছে রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। যদিও ২০১৮ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রিয়াল ছেড়ে যাওয়ার পেছনে পেরেজের সঙ্গে বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়া ছিল মূল কারণ।
আরও পড়ুনপেরেজকে খেপিয়ে ভিনিসিয়ুস কি নিজের বিপদ ডেকে আনছেন১৪ ঘণ্টা আগেএবার পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সেটি নির্ভর করছে ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে চুক্তির বিষয় সামাল দেওয়ার ওপর। ২০২৪ সালে ফিফা দ্য বেস্ট জেতা এই ফরোয়ার্ড রিয়ালের সঙ্গে যেমন বেতন নিয়ে আলোচনা করছেন, তেমনি সৌদি প্রো লিগে যাওয়ার বিষয়টিও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। কারণ, কিছুদিন আগেই নাকি তিনি ও তাঁর প্রতিনিধিদল সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে একটি অনলাইন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, পুরো বিষয়টি রিয়াল কীভাবে সামলায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’