কাপ্তাই হ্রদের জেলে যখন ‘শখের চাষি’
Published: 15th, February 2025 GMT
প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে যায়। এ সময় হ্রদের অনেক স্থানে পানি কমে গিয়ে জেগে উঠে ছোট-বড় চর। হ্রদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ বর্ষা মৌসুমে হ্রদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। পানি শুকিয়ে গেলে চরে চাষাবাদ করেন। চলতি বছরও শুকনো মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের চরে চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছেন আশপাশের চাষিরা। হ্রদে ভেসে ওঠা জমি পলি মাটিতে ভরা। তাই এখানে জমিতে কোনো চাষ দিতে হয় না। খরচ ও পরিশ্রম কম হয়। অবশ্য এখন যারা ধান চাষ করছেন তারা কিন্তু বর্ষা মৌসুমে আবার মাছ ধরবেন, এখন তারা ‘শখের চাষি’।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায, প্রতিবছর বোরো মৌসুমে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হ্রদে ভেসে ওঠা চরের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। এসব জমিতে ধানের ভালো ফলন হয়। এসব জমিতে চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উচ্চফলনশীল ও উন্নত জাতের চারা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলাসহ হ্রদ সংলগ্ন বিলাইছড়ি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধানে ছেয়ে গেছে হ্রদের চারপাশ। খালি থাকা চরগুলোতে পানি সেচ দিয়ে বোরো ধানের চারা লাগানোর ধুম চলছে। অনেকে জেগে ওঠা চরগুলোকে চাষের উপযোগী করে তুলছেন।
১৫ বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে শুকনো ভেসে ওঠা জমিতে ধান চাষ করে আসছেন মো.
কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল চাষি অংবাচিং মারমা, কালাচাঁন তঞ্চঙ্গ্যা, সুরাইয়া বেগম জানান, জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। এসব জমি পলিতে ভরা থাকে বলে চাষ ছাড়াই চাষাবাদ করা যায়। তাছাড়া মাটি নরম থাকায় পরিশ্রম যেমন কম হয়, তেমনি খরচও বেশি লাগে না। এই চাষাবাদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অবসর সময় চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কয়েকজন চাষি অবশ্য সমস্যার কথাও বললেন, তাদের মতে ধান পাকার আগেই অতিবৃষ্টি হলে হ্রদে পানি বেড়ে যায়, তখন ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, ‘যারা জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদ করেন তাদের আমরা কৃষি বিভাগ থেকে ধান, সরিষা, ভুট্টা, ওসূর্যমুখীর বীজ দিয়েছি। এছাড়া চাষের জন্য সার ও সরঞ্জামও দেওয়া হয়।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ষ ব দ কর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল