শিক্ষায় অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে। তাই সেগুলোয় নজরদারি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে ডিসিদের এই নির্দেশনা দেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী এই জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উদ্বোধন শেষে এখন তিন দিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনগুলো হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ মোট ৩৪টি অধিবেশন (৩০টি কর্ম অধিবেশন) হবে। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রায় ১ হাজার ৫০টি প্রস্তাবের মধ্যে আলোচনার জন্য ৩৫৪টি প্রস্তাব নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পুরো সরকারি প্রশাসনেই, কিন্তু শিক্ষায় অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে। সেগুলো একটু নজরদারি করতে বলেছি। যেমন অনেক শিক্ষক তাঁদের ভাতা ঠিকমতো পান না, পরিদর্শকদের হেনস্তার শিকার হন স্কুলের শিক্ষকেরা। দুই পক্ষেরই দোষ থাকে, এগুলোর নজরদারি দরকার।’

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো নিয়ে প্রচণ্ড সমস্যা হয়েছে। প্রথমে এগুলোয় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা চলে গিয়েছেন এবং চর দখলের মতো আবার নতুন প্রভাবশালীরা এসে দখল করার চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ডিসি-ইউএনওদের এতগুলো দায়িত্ব নেওয়া কঠিন। সে কারণে আবার তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো আবার শুরু করতে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে অন্তত এই সময়ে যেন তাঁরা রাজনৈতিক চাপ প্রতিহত করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় যাঁরা ভালো ও সৎ মানুষ আছেন, তাঁদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী আছেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন, এ ধরনের মানুষদের যেন পরিচালনা পর্ষদে নেওয়া হয়। যাতে শিক্ষকেরা তাঁদের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তা না হন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তাতেও যদি কাজ না হয়, সে ক্ষেত্রে আরেকটি পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে থাকতে হলে অন্তত স্নাতক পাস হতে হবে এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে অন্তত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এতে তাঁদের (ডিসি) পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।

পরিকল্পনা বিভাগ–সম্পর্কিত নির্দেশনার কথা জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন স্থানীয় পর্যায়ে যে প্রকল্পগুলো চলছে, এগুলোয় অনেক অসুবিধা তৈরি হয়েছে। তার কারণ অনেকগুলো প্রকল্পে যে ঠিকাদার ছিলেন, তাঁদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। অসমাপ্ত অনেকগুলো প্রকল্প রয়ে গেছে। এ ছাড়া আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও অনেক প্রকল্পের চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন তা আর নেই। তাই ডিসিদের বলা হয়েছে নিজেদের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে যেগুলো দরকার, যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ। অনেক রাস্তা আছে, কিন্তু সেতু নষ্ট হয়ে গেছে, কোথাও স্কুলঘর ভগ্নদশা, এগুলোর বিষয়ে নতুন করে কী ধরনের প্রকল্প নিতে হবে, সে বিষয়ে তাঁরা যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সরাসরি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান। আর যে প্রকল্পগুলো আধা সমাপ্ত রেখে ঠিকাদারেরা চলে গেছেন, সেগুলো কী করে আবার শুরু করে শেষ করা যায় এবং জনহিতকর প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প উপদ ষ ট ব সরক র নজরদ র য় অন ক

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানের জন্য বন্ধ ভারতের আকাশ, সতর্ক ইসলামবাদ
  • আকাশসীমায় নজরদারি বাড়িয়েছে পাকিস্তান
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হলেন আনসার উদ্দিন খান
  • পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার
  • ‘বিশ্বের নজরদারির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল’
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে