শিক্ষায় অনেক দুর্নীতি, নজরদারি করতে ডিসিদের নির্দেশ উপদেষ্টার
Published: 16th, February 2025 GMT
শিক্ষায় অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে। তাই সেগুলোয় নজরদারি করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে ডিসিদের এই নির্দেশনা দেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী এই জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উদ্বোধন শেষে এখন তিন দিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ–সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনগুলো হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ মোট ৩৪টি অধিবেশন (৩০টি কর্ম অধিবেশন) হবে। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রায় ১ হাজার ৫০টি প্রস্তাবের মধ্যে আলোচনার জন্য ৩৫৪টি প্রস্তাব নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘পুরো সরকারি প্রশাসনেই, কিন্তু শিক্ষায় অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে। সেগুলো একটু নজরদারি করতে বলেছি। যেমন অনেক শিক্ষক তাঁদের ভাতা ঠিকমতো পান না, পরিদর্শকদের হেনস্তার শিকার হন স্কুলের শিক্ষকেরা। দুই পক্ষেরই দোষ থাকে, এগুলোর নজরদারি দরকার।’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো নিয়ে প্রচণ্ড সমস্যা হয়েছে। প্রথমে এগুলোয় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা চলে গিয়েছেন এবং চর দখলের মতো আবার নতুন প্রভাবশালীরা এসে দখল করার চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ডিসি-ইউএনওদের এতগুলো দায়িত্ব নেওয়া কঠিন। সে কারণে আবার তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো আবার শুরু করতে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে অন্তত এই সময়ে যেন তাঁরা রাজনৈতিক চাপ প্রতিহত করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় যাঁরা ভালো ও সৎ মানুষ আছেন, তাঁদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী আছেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন, এ ধরনের মানুষদের যেন পরিচালনা পর্ষদে নেওয়া হয়। যাতে শিক্ষকেরা তাঁদের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তা না হন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তাতেও যদি কাজ না হয়, সে ক্ষেত্রে আরেকটি পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে থাকতে হলে অন্তত স্নাতক পাস হতে হবে এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে অন্তত স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এতে তাঁদের (ডিসি) পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।
পরিকল্পনা বিভাগ–সম্পর্কিত নির্দেশনার কথা জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন স্থানীয় পর্যায়ে যে প্রকল্পগুলো চলছে, এগুলোয় অনেক অসুবিধা তৈরি হয়েছে। তার কারণ অনেকগুলো প্রকল্পে যে ঠিকাদার ছিলেন, তাঁদের আর পাওয়া যাচ্ছে না। অসমাপ্ত অনেকগুলো প্রকল্প রয়ে গেছে। এ ছাড়া আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও অনেক প্রকল্পের চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন তা আর নেই। তাই ডিসিদের বলা হয়েছে নিজেদের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে যেগুলো দরকার, যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ। অনেক রাস্তা আছে, কিন্তু সেতু নষ্ট হয়ে গেছে, কোথাও স্কুলঘর ভগ্নদশা, এগুলোর বিষয়ে নতুন করে কী ধরনের প্রকল্প নিতে হবে, সে বিষয়ে তাঁরা যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সরাসরি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান। আর যে প্রকল্পগুলো আধা সমাপ্ত রেখে ঠিকাদারেরা চলে গেছেন, সেগুলো কী করে আবার শুরু করে শেষ করা যায় এবং জনহিতকর প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে ডিসিদের বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প উপদ ষ ট ব সরক র নজরদ র য় অন ক
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’
টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’
আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’
জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’
ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।