কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী কিশোরগঞ্জ-চামটা বন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজট লেগে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সোহান বলে, ‘অধ্যক্ষ স্যার না থাকার কারণে উচ্চমাধ্যমিকের ফরম ফিলাপ কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।’

কলেজ সূত্রে জানা যায়, চার মাস আগে করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আজিজ আহমেদ হুমায়ুন অন্য কলেজে বদলি হয়ে চলে যান। এর পর থেকে কলেজের অধ্যক্ষ পদটি শূন্য। এতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অধ্যক্ষ না থাকায় আগামী ৩ মার্চ শুরু হতে যাওয়া উচ্চমাধ্যমিকের ফরম ফিলাপ কার্যক্রমও বন্ধ থাকার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না থাকায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আটকে গেছে। অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কলেজে কর্মরত ৫০ শিক্ষক-কর্মচারী চার মাস ধরে বেতন তুলতে পারছেন না।

কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রায় চার মাস ধরে অধ্যক্ষ না থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। কোনো দায়িত্বরত ব্যক্তি না থাকায় তাঁদের বেতন–ভাতাও বন্ধ। অর্থনৈতিক সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত বছরের অক্টোবর মাসে অধ্যক্ষ অধ্যাপক আজিজ আহমেদ হুমায়ুন কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে বদলি হন। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নেই, বিদায়ী অধ্যক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। তাই এ রকম শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি। কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দ্রুতই অধ্যক্ষ নিয়োগ হওয়া জরুরি।

ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমি ১৩ ফেব্রুয়ারি একটা স্মারকলিপি পেয়েছি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর তা পাঠিয়েছি।’

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আবেদনটি এখনো আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। আবেদনটি পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ জ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি