করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
Published: 16th, February 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী কিশোরগঞ্জ-চামটা বন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজট লেগে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।
কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সোহান বলে, ‘অধ্যক্ষ স্যার না থাকার কারণে উচ্চমাধ্যমিকের ফরম ফিলাপ কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।’
কলেজ সূত্রে জানা যায়, চার মাস আগে করিমগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আজিজ আহমেদ হুমায়ুন অন্য কলেজে বদলি হয়ে চলে যান। এর পর থেকে কলেজের অধ্যক্ষ পদটি শূন্য। এতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অধ্যক্ষ না থাকায় আগামী ৩ মার্চ শুরু হতে যাওয়া উচ্চমাধ্যমিকের ফরম ফিলাপ কার্যক্রমও বন্ধ থাকার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না থাকায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আটকে গেছে। অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কলেজে কর্মরত ৫০ শিক্ষক-কর্মচারী চার মাস ধরে বেতন তুলতে পারছেন না।
কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রায় চার মাস ধরে অধ্যক্ষ না থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। কোনো দায়িত্বরত ব্যক্তি না থাকায় তাঁদের বেতন–ভাতাও বন্ধ। অর্থনৈতিক সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত বছরের অক্টোবর মাসে অধ্যক্ষ অধ্যাপক আজিজ আহমেদ হুমায়ুন কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে বদলি হন। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নেই, বিদায়ী অধ্যক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি। তাই এ রকম শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি। কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দ্রুতই অধ্যক্ষ নিয়োগ হওয়া জরুরি।
ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমি ১৩ ফেব্রুয়ারি একটা স্মারকলিপি পেয়েছি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর তা পাঠিয়েছি।’
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আবেদনটি এখনো আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। আবেদনটি পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।