মাথাব্যথা হয় না, এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রাথমিক অবস্থায় মাথাব্যথার জন্য কেউ বিশ্রাম নেন বা একটু চা পানে নিরাময় খোঁজেন। আবার কেউ কেউ প্যারাসিটামল–জাতীয় বড়ি সেবন করেন। যদি এমন হয়, পড়তে বসলেই মাথাব্যথা, প্রতিদিন মাথাব্যথা অথবা মাথাব্যথা সহজে সারছে না অথবা মাথাব্যথার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ আছে—তবে চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে।

আমাদের দেশে যেহেতু রেফারেল সিস্টেম নেই, তাই সবাই চান প্রথমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে বলে তা নিয়ে একজন রোগী কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, এ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে মাথাব্যথার গতিপ্রকৃতি খেয়াল করলে অনেক সময় বোঝা যায় এর কারণ কী? সে ক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে, তা নির্ধারণ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

প্রথমেই মাইগ্রেনের কথায় আসি। মাইগ্রেনের মাথাব্যথায় বমির ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি থাকে। অনেকের মাথাব্যথার শুরুতে কানে একধরনের বোঁ বোঁ শব্দ অনুভূত হয়। মাথার এক পাশ বা দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। দুশ্চিন্তা, ক্ষুধা, ঘুমের ব্যত্যয়, বিশেষ কোনো খাবার, পরিবেশ (উৎকট গন্ধ, শব্দদূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন) ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মেয়েদের হরমোন পরিবর্তনের কারণেও এটি হতে পারে। কিছু কিছু বিষয় মাথাব্যথাকে উসকে দেয়। এটিকে বলা হয় ট্রিগারিং ফ্যাক্টর। নির্দিষ্ট সময় পর নিজ থেকে এই মাথাব্যথা সেরেও যায়।

সাইনাসজনিত মাথাব্যথা সাধারণত সাইনুসাইটিস বা সাইনাসের প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত কপালে ও চোখের পাশে একটু গভীরে অনুভূত হয় এবং মাথা নড়াচড়া করলে বা কাশি দিলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। সাধারণত এই ব্যথা সকালের দিকে বেশি অনুভূত হয় এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার তীব্রতা কমে যায়। এর সঙ্গে ঠান্ডাকাশি ও অ্যালার্জির সম্পর্ক থাকে।

নিউরোলজিক্যাল বা মস্তিষ্কে টিউমার হলে তীব্র মাথাব্যথা, সঙ্গে প্রায়ই বমি এবং এটি দিনে দিনে খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং অনেক সময় দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। এমনটি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

আরও পড়ুনমেয়েদের কেন বেশি মাথাব্যথা হয়০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

এটা ঠিক যে চোখের সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো আই স্ট্রেইন এবং দৃষ্টি সমস্যা। আই স্ট্রেইন হলো চোখের অতিব্যবহারজনিত একধরনের চোখের অবসাদ বা ক্লান্তি, যেখানে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। দৃষ্টি সমস্যার কারণে, সঠিক নিয়মে চশমা না পরলে, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে (মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি) থাকলে, পড়াশোনা, ড্রাইভিং ইত্যাদি কারণেও আই স্ট্রেইন হতে পারে। আই স্ট্রেইনের মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা খুব তীব্র হয় না। সাধারণত বিশ্রামে বা কর্মবিরতিতে কমে যায়। দিন শেষে বা সন্ধ্যার সময় আই স্ট্রেইনের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে অন্যান্য সাময়িক উপসর্গ, যেমন চোখ জ্বালাপোড়া, চোখে পানি পড়া, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, চোখে শুষ্কভাব, ঘাড়ব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্ক্রিনটাইম ও রাত জাগা কমিয়ে ফেলতে হবে। যাঁরা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি স্ক্রিনে অধিক সময় কাজ করেন, তাঁদের জন্য চোখে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। প্রয়োজনে দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা.

মো. ছায়েদুল হক, অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, মার্কস মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

আগামীকাল পড়ুন: গর্ভধারণের আগে অতিরিক্ত ওজন কেন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত

আরও পড়ুনসব মাথাব্যথাই কি মাইগ্রেন, নাকি অন্য কিছু?১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ধ রণত অন ভ ত সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ