৭৮তম বাফটা অ্যাওয়ার্ড : জার্মানির ‘কনক্লেভ’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ এর জয়জয়কার
Published: 17th, February 2025 GMT
অস্কারে কারা জিতবেন সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসের (বাফটা) বিজয়ীদের দিকে তাকালে! গত বছর দুটি আয়োজনেই সামনের সারির ছয়টি বিভাগের বিজয়ী তালিকা ছিল একই। এগুলো হলো সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী, সেরা পার্শ্ব অভিনেতা ও সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী। এবারও এর পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এবারে বাফটার ৭৮তম আসরে চারটি করে পুরস্কার জিতলো যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যাডি কোর্বে পরিচালিত ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ও জার্মানির অ্যাডওয়ার্ড বার্গার পরিচালিত ‘কনক্লেভ’। গত রোববার লন্ডনের সাউথব্যাংক সেন্টারের রয়েল ফেস্টিভ্যাল মিলনায়তনে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ডেভিড টেন্যান্ট।
সেরা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি অসাধারণ ব্রিটিশ চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ‘কনক্লেভ’। এছাড়া রূপান্তরিত চিত্রনাট্য ও সেরা সম্পাদনা বিভাগের পুরস্কার জিতেছে ছবিটি। এর গল্পে দেখা যায়, নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য রোমে জড়ো হয় একদল পরচর্চাকারী ও চক্রান্তকারী। গত বছরের ২৯ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে মুক্তি পায় পিটার স্ট্রহেনের রাজনৈতিক থ্রিলার সিনেমা ‘কনক্লেভ’। ২০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের ছবিটি ৭৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে এ ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পেয়েছেন পিটার স্ট্রহেন। এবার বাফটায় সর্বোচ্চ ১২টি মনোনয়ন পেয়ে ছবিটি পুরস্কার পেয়েছে ৪টি শাখায়।
অন্যদিকে ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ছবির গল্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হাঙ্গেরির এক ইহুদি স্থপতিকে কেন্দ্র করে, নাৎসিদের গণহত্যা থেকে বেঁচে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় লোকটি। নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য আমেরিকায় এক ক্ষমতাধর ব্যবসায়ীর অধীনে যুক্ত হয় সে। স্থপতির ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন অ্যাড্রিয়েন ব্রডি। ছবিটির সুবাদে সেরা পরিচালক হয়েছেন ব্র্যাডি কোর্বে। সেরা মৌলিক আবহ সংগীত ও সেরা চিত্রগ্রহণ বিভাগের পুরস্কার জিতেছে ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’। ব্র্যাডি করবেটের ব্যাপক প্রশংসিত ছবিটি গোল্ডেন গ্লোবে জিতেছিল তিন গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার।
বাফটার এবারের আসরে আমেরিকান তারকা ডেমি মুরকে হারিয়ে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন মাইকি ম্যাডিসন। ‘আনোরা’ সিনেমায় নিউইয়র্কের একটি ক্লাবের স্ট্রিপার চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন তিনি। মেয়েটি এক রুশ ধনকুবেরে ছেলের সঙ্গে উদ্দাম প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা হাতে তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার সমস্ত যৌনকর্মীদের উদ্দেশ্যে। প্রত্যেক যৌনকর্মীদের সম্মান এবং ভালোবাসা দেখানো উচিত। ওরাও একজন মানুষ। তিনি আরও বলেছেন, আমি আমার মাকে ধন্যবাদ জানাই যিনি আমার প্রিয় স্ক্রিন পার্টনার। ওঁর থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তোমার অসাধারণ পারফর্মেন্স আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। আমি যা শিখেছি শুধুমাত্র তোমার থেকেই শিখেছি।’
এবারের আসরে দুটি করে পুরস্কার জিতেছে ‘উইকেড’, ‘এমিলিয়া পেরেজ’, ‘আনোরা’, ‘ডুন: পার্ট টু’, ‘অ্যা রিয়েল পেইন’ ও অ্যানিমেটেড ছবি ‘ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রমিট: ভেনজেন্স মোস্ট ফাউল’।
এক নজরে
বিজয়ী তালিকা
সেরা চলচ্চিত্র
কনক্লেভ
সেরা অভিনেতা
অ্যাড্রিয়েন ব্রডি (দ্য ব্রুটালিস্ট)
সেরা অভিনেত্রী
মাইকি ম্যাডিসন (আনোরা)
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা
কিয়ের্যান কালকিন (অ্যা রিয়েল পেইন)
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী
জোয়ি সালদানিয়া (এমিলিয়া পেরেজ)
সেরা পরিচালক
ব্র্যাডি কোর্বে (দ্য ব্রুটালিস্ট)
সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য
আ রিয়েল পেইন (জেসি আইজেনবার্গ)
সেরা রূপান্তরিত চিত্রনাট্য
কনক্লেভ (পিটার স্ট্রাউহ্যান)
সেরা অ-ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র
এমিলিয়া পেরেজ (ফ্রান্স; জ্যাক অঁডিয়ার, পাসক্যাল কোঁশোতু)
সেরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র
ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রমিট: ভেনজেন্স মোস্ট ফাউল (নেটফ্লিক্স)
সেরা মৌলিক আবহ সংগীত
দ্য ব্রুটালিস্ট (ড্যানিয়েল ব্লুমবার্গ)
সেরা চিত্রগ্রহণ
দ্য ব্রুটালিস্ট (লও ক্রোলি)
সেরা পোশাক পরিকল্পনা
উইকেড (পল টেজওয়েল)
সেরা সম্পাদনা
কনক্লেভ (নিক এমারসন)
সেরা শিল্প নির্দেশনা
উইকেড (ন্যাথান ক্রাউলি, লি সানডেইলিস)
সেরা রূপসজ্জা ও চুলসজ্জা
দ্য সাবস্ট্যান্স (পিয়ের-অলিভিয়ের পেরসাঁ, স্টেফানি গিয়োঁ, ফ্রেদেরিক আর্গুয়েলো, ম্যারিলিন স্কারসেলি)
সেরা শব্দ
ডুন: পার্ট টু (রন বার্টলেট, ডাগ হেম্ফিল, গারেথ জন, রিচার্ড কিং)
সেরা স্পেশাল ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস
ডুন: পার্ট টু (পল ল্যাম্বার্ট, স্টিফেন জেমস, গেয়ার্ড নেফজা, রিস স্যালকম্ব)
অসাধারণ ব্রিটিশ চলচ্চিত্র
কনক্লেভ
অসাধারণ নতুন ব্রিটিশ গল্পকার, পরিচালক অথবা প্রযোজক
নিক্যাপ (পরিচালক: রিচ পেপিয়াট)
ইই বাফটা রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড (দর্শক ভোট)
ডেভিড জনসন
সেরা কাস্টিং
আনোরা (শন বেকার, সামান্থা কোয়ান)
সেরা প্রামাণ্যচিত্র
সুপার/ম্যান: দ্য ক্রিস্টোফার রিভ স্টোরি
সেরা শিশুতোষ ও পারিবারিক চলচ্চিত্র
ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রমিট: ভেনজেন্স মোস্ট ফাউল (নেটফ্লিক্স)
সেরা ব্রিটিশ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
রক পেপার সিজারস
সেরা ব্রিটিশ অ্যানিমেটেড স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
ওয়ান্ডার টু ওয়ান্ডার
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র চলচ চ ত র কনক ল ভ র জন য পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গন্ধগোকুলের বাঁচার লড়াই
দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল হারিয়ে গেছে; কিন্তু পাবনার বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় এখনো এ প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। তবে আগের মতো অত বেশি দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এগুলো ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।
প্রাণীটির আসল নাম গন্ধগোকুল হলেও বেড়া উপজেলায় এটি ‘নেল’ নামে পরিচিত। অনেকে এগুলোকে বাগডাশও বলেন। এর শরীর থেকে পোলাও চালের গন্ধের মতো মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘরের চাল ও গাছের ওপর দিয়ে শুরু হয় এর চলাচল। এ সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হতে থাকে বলে যে স্থান দিয়েই এরা যাক না কেন, বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে সেই গন্ধ নাকে আসে। তখন মহল্লার বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, আশপাশে হয়তো গন্ধগোকুল আছে, নয়তো একটু আগেই আশপাশ দিয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধগোকুল বা নেল নামের প্রাণীটির সঙ্গে বেড়া পৌরবাসীর সম্পর্ক। বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই প্রাণীটি বেশ পছন্দের। তবে অল্প কিছু মানুষ এগুলোকে অপছন্দ করেন গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তবে গত ১০-১২ বছরের মধ্যে পৌরবাসী এই প্রাণীকে ফাঁদ পেতে ধরেছেন বা এগুলোর কোনো ক্ষতিসাধন করেছেন বলে শোনা যায় না।
বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, গন্ধগোকুল প্রকৃতির উপকারী একটি নিশাচর প্রাণী। গন্ধগোকুল ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে; কিন্তু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্রাণীটির জীবন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি সময় ছিল, যখন এগুলোকে দেশের প্রায় সর্বত্রই— বনাঞ্চল বা বনসংলগ্ন ঝোপঝাড় বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। তবে এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।
গন্ধগোকুল তাল ও খেজুরের রস পান করে, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে; কিন্তু কখনো কখনো গৃহপালিত হাঁস-মুরগি বা কবুতর ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এগুলো ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায়ও মারা যায়। এতে এগুলোর অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এগুলোকে বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ধগোকুলের রয়েছে বিশেষ এক ভূমিকা। খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান প্রাণীটির। এগুলো মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে। যেমন বটের ফল বা অন্যান্য ফল যখন খায়, তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তী সময়ে বীজের অঙ্কুরোদ্গমে শতভাগ কার্যকর হয়ে থাকে।
বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁক, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। সাধারণত প্রতিবারই ছানা হয় তিনটি।
বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি পৌরবাসীও এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।’
প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ কিছুটা বেশি বলে শুনেছি।’
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল মানুষের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু মানুষ দেখলে খুবই ভয় পায়। খুবই লাজুক স্বভাবের প্রাণী এটি। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের কারণে এগুলো এখন বিপন্ন। তবে প্রাণীটি কিন্তু প্রকৃতির বন্ধু। তাই সবারই উচিত এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।