বিমানকে দুই ভাগ করার সুপারিশ, কতটা লাভজনক হবে
Published: 18th, February 2025 GMT
রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুই ভাগ করার যে সুপারিশ অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণে গঠিত সরকারের টাস্কফোর্স কমিটি করেছে, সেটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি এই সুপারিশ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাও করেননি মন্ত্রণালয় বা বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
৩ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমানকে দুই ভাগে বিভক্ত করে একটি অংশ বিদেশি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিমান আধুনিক অ্যাভিয়েশনের মান ও পারদর্শিতার (পারফরম্যান্স) মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ। দুর্বল ও অপর্যাপ্ত পরিষেবা নিয়ে চলা বাংলাদেশ বিমান মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। তাই বিমানকে দুই ভাগ করে নতুন একটি এয়ারলাইনস তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে টাস্কফোর্স। নতুন এ প্রতিষ্ঠানের নাম হবে বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ। তারা বাংলাদেশ বিমানের বিদ্যমান সম্পদের অর্ধেক ব্যবহার করবে। আর পরিচালিত হবে স্বাধীন ও বিশ্বমানের একটি পরিচালনা সংস্থার মাধ্যমে।
চলতি মাসের শুরুতে টাস্কফোর্সের এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে টাস্কফোর্সের সুপারিশ থেকে অন্তত একটি করে সুপারিশ প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে বিমানের সংস্কার নিয়ে করা সুপারিশের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিমান) মো.
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট কিছু বলা যাবে না। কারণ, এটির পক্ষে-বিপক্ষে শক্তিশালী মত আছে। ফলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও আলোচনা করতে হবে।
ভাগ করা নিয়ে টাস্কফোর্সের ব্যাখ্যা
টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ সময় চেষ্টার পরও বিমানের কোনো সংস্কার হয়নি। এটা এমন এক ব্যর্থ অবস্থায় চলে গেছে যে শুধু সংস্কার করলে আর কাজ হবে না। এ জন্য বিমানকে ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কে এ এস মুরশিদ আরও বলেন, ‘বিমানকে নিয়ে আমরা দুটি উপায় ভেবেছিলাম। প্রথমটি ছিল প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে নতুন প্রতিষ্ঠান করা, তবে সহজে সেটি করা যাবে না। তাই এ চিন্তা থেকে সরে এসে বিমানকে দুই ভাগ করার দ্বিতীয় চিন্তাটি এসেছে। নতুন প্রতিষ্ঠান করে সেটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পেশাগত কোনো কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিমানের সম্পদগুলো (অ্যাসেট) শেয়ার করা হবে। আর উভয় প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যমাত্রা ধরে কাজ করবে; যে ভালো করবে, সে এগিয়ে যাবে। এটি ছিল আমাদের মূল চিন্তা।’
বিমানকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত লাভজনক ও টেকসই হবে বলে মনে করেন কে এ এস মুরশিদ। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু করা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত হলে দুটি উপকার হবে। প্রথমত, কিছু কাজ এগিয়ে থাকবে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে সেটি এগিয়ে নিয়ে পারবে। দ্বিতীয়ত, নতুন এই উদ্যোগের ফলে অবস্থার উন্নতির একটা চাপ তৈরি হবে বিমানের ওপর।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ৫৪ বছরের পুরোনো সরকারি এই সংস্থা আমলাদের মাধ্যমে পরিচালিত। একটি বাণিজ্যিক সংস্থা এভাবে চলতে পারে না। তাই অতীতে বিমানকে লাভজনক করার নানা উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি।
ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ খাত ক্রমেই বড় হচ্ছে। তাই এ সম্ভাবনাকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করতে চাইলে রাষ্ট্রমালিকানায় আরেকটি এয়ারলাইনস করা প্রয়োজন। টাস্কফোর্স যে সুপারিশ করেছে, সেটি অত্যন্ত বিবেচনাপ্রসূত। এটিকে আমাদের সমর্থন করা উচিত।’
অ্যাভিয়েশন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রমালিকানায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় এয়ারলাইনস চালু রয়েছে। ভারতে এয়ার ইন্ডিয়ার পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস রয়েছে। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এমিরেটস ও ফ্লাই দুবাই; সিঙ্গাপুরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ও স্কুট এয়ারলাইনস; মালয়েশিয়ায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস ও এয়ার এশিয়া নামে আলাদা আলাদা বিমান পরিবহন সেবা আছে। বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতের ৭৫ শতাংশ বাজার বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলোর দখলে। চাহিদা আছে বলেই তারা এ দেশে ব্যবসা করছে।
এখন বাংলাদেশ দ্বিতীয় একটি এয়ারলাইনস চালু করলে সেটিকে বাজেট ক্যারিয়ার (সাশ্রয়ী ভাড়ায়) হিসেবে তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে বাজেট ক্যারিয়ার বেশ জনপ্রিয় ধারণা। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা বিদেশে যান, তার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিক। ফলে স্বাভাবিকভাবে তাঁরা যেখানে কম ভাড়া পাবেন, সে এয়ারলাইনসে যাবেন। এ কারণে বিদেশি বাজেট ক্যারিয়ারগুলো ভালো ব্যবসা করছে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিনিয়ত যাত্রী বাড়ছে। ২০৩৪ সালে সৌদি আরবে যে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে, এর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর শ্রমিক যাবেন সেখানে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিমান থেকে আলাদা করে একটা রাষ্ট্রীয় বাজেট ক্যারিয়ার করার এখনই সময়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ই ভ গ কর ভ গ কর র পর চ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ-প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এখনই যা দরকার
খুব সাধারণ চোখে তাকালেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের বাস্তুতন্ত্র কী পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, নদী-হ্রদ-বিল ও জলাভূমির মতো স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্র, শালবন, চিরসবুজ বন এবং পার্বত্য এলাকার বনভূমি, অর্থাৎ স্থলজ বাস্তুতন্ত্র, পাহাড়ি অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং মনুষ্যসৃষ্ট বাসস্থান, যেমন গ্রাম, শহর ও কৃষিজমি—সবই এখন প্রাকৃতিক পরিবর্তনের চেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে মানুষের আচরণের কারণে।
অতিরিক্ত মাছ ধরা, প্লাস্টিক ও পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার অভাব, রাসায়নিক ও তেলের দূষণ, বন ধ্বংস, অব্যবস্থাপনায় বনজ সম্পদের অপচয়, পাহাড় কাটা, প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, গাছ-মাছ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বহিরাগত প্রজাতির আগমন, পর্যটন ও উন্নয়নের নামে ব্যয়বহুল প্রকল্প—এসব মিলেই বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন আসছে। এটি এখন প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তনের চেয়েও ভয়াবহ।
এ ধরনের ক্ষয় ঠেকাতে এখনই শক্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতির ধরন বুঝে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। আমাদের যা হারিয়েছি, তা আর হারাতে দেওয়া যাবে না। এটা হওয়া উচিত জাতিগতভাবে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বাস্তুতন্ত্রের জীব ও জড় উপাদান একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। শক্তিপ্রবাহ, পুষ্টিচক্র, প্রজাতিগুলোর আন্তসম্পর্ক বাস্তুতন্ত্রকে কার্যকর রাখে। সুতরাং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা না করা মানেই আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের ঝুঁকিতে ফেলা। প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্যনিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার (ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন) একটি কার্যকর পথ। তবে এটি সহজ কিংবা তাৎক্ষণিক কোনো কাজ নয়, এটি সম্পন্ন করতে হলে আমাদের অর্থনীতি, কৃষি, খাদ্যাভ্যাসসহ জীবনযাত্রার নানা দিকেই পরিবর্তন আনতে হবে। এর সৌন্দর্য হলো এটি যেকোনো স্কেলে ঘটতে পারে এবং এতে সবারই ভূমিকা রয়েছে।
পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার মানে শুধুই গাছ লাগানো নয়। আমরা অনেকেই ভাবি, গাছ লাগানো মানেই পরিবেশ বাঁচানো। বাস্তবে শুধু গাছ লাগানোই যথেষ্ট নয়, কী গাছ লাগানো হচ্ছে, সেটা দেশি কি না, কোথায় লাগানো হচ্ছে, গাছের উপযুক্ত যত্ন হচ্ছে কি না—এসব বিবেচনাও গুরুত্বপূর্ণ। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো বাস্তুতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
সব সময় একটি পরিবেশকে তার অতীত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। যেমন আগে যেসব অঞ্চল বনভূমি ছিল, এখন সেগুলোর একটি বড় অংশ কৃষিজমি বা বসতিতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশকে বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে, ঠিক যেমন সমাজ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াচ্ছে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) তথ্যমতে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে যদি ৩৫ কোটি হেক্টর ভূমি ও জলজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা যায়, তবে বিশ্ব প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিবেশগত সেবা পেতে পারে এবং ১৩ থেকে ২৬ গিগাটন গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে পারে। এ অর্থনৈতিক লাভ বিনিয়োগের তুলনায় ৯ গুণ বেশি। অন্যদিকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ক্ষতি তিন গুণ বেশি।
বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব সব ক্ষেত্রেই—বন, কৃষিজমি, শহর, জলাভূমি ও সাগর পর্যন্ত। উদ্যোগ নিতে পারে সরকার, উন্নয়ন সংস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কমিউনিটি এমনকি ব্যক্তিপর্যায়ের মানুষও। কারণ, ক্ষতির ধরন বহুমাত্রিক এবং এর উৎসও বিভিন্ন। বস্তুত পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার মানে একটি সার্বিক পরিবর্তন—শুধু প্রকৃতির নয়, আমাদের আচরণেরও। এটা রোগনিয়ন্ত্রণ, জীবিকা রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলা, এমনকি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজিস) অর্জনের সঙ্গেও সরাসরি জড়িত।
জাতিসংঘ ঘোষিত ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারের দশক (ইউএন ডকেড অন ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন) আমাদের আহ্বান জানায়, যাতে আমরা ইকোসিস্টেমের, অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষয় রোধ করি, ধ্বংস থামাই ও পুনরুদ্ধারে সক্রিয় হই। এত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বের সব কটি রাষ্ট্র আগামী এক দশক (২০২১-২০৩০) ধরে চেষ্টা করবে। এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক জলবায়ু সমাধান (ন্যাচারাল ক্লাইমেট সলিউশন), যা অভিযোজন ও প্রশমনে সহায়তা করে এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই পথ তৈরি করবে।
প্যারিস চুক্তি ও জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (ন্যাপস) আওতায়, দেশগুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানে পরিবেশ পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এ ছাড়া আরইডিডি+, অর্থাৎ ‘রেড’ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বন ধ্বংস ও বন নষ্ট হওয়া থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানো। আর ‘+’ চিহ্নটি বোঝায় অতিরিক্ত কিছু বন-সম্পর্কিত কাজ, যেমন বনের ভালোভাবে দেখাশোনা করা, আর বনের কার্বন ধরে রাখা ও বাড়ানো, যেগুলো জলবায়ু রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে রেড+ এর আওতায় বন সংরক্ষণ ও কার্বন মজুতের উন্নয়ন সম্ভব। তবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থায়ন, যা এখনো সীমিত। এ ক্ষেত্রে ‘ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স’ (সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থায়ন) নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আমরা অনেক সময় ধরে একটা চক্রেই যেন আটকে আছি—পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের সমস্যার সমাধান শুধু গাছ লাগানোর মধ্যেই যেন আমরা খুঁজে পাচ্ছি! তা–ও বলা বাহুল্য যে যথোপযুক্ত উপায়ে নয়।
যা হোক, আমরা যদি বাস্তুতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে পুনরুদ্ধার করতে চাই, তবে শুধু গাছ লাগানো নয়, পুরো বাস্তুতন্ত্রের প্রেক্ষাপট বুঝে কাজ করতে হবে। সময় খুব কম। এখনই উদ্যোগ না নিলে ক্ষতির মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছাবে, যেখান থেকে ফেরা আর সম্ভব হবে না।
সম্প্রতি জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) সহায়ক সংস্থার ৬২তম অধিবেশনে (এসবি–৬২) অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। জার্মানির বন এ অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে কপ–৩০ (২০২৫) সম্মেলনের আগে অভিযোজন ও অর্থায়ন ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরার ও এ দৃষ্টিকোণও তুলে ধরা সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিজ্ঞতা ও যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বললেই চলবে না। এখন দরকার বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও আমূল আচরণগত পরিবর্তন। পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের ঘোষিত দশকের (২০২১-২০৩০) মধ্যভাগে এসে আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, আমরা কি সত্যিই এগোচ্ছি? পরিবেশ ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গুরুত্ব না দিই, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা রেখে যাব এক অস্থির, বিপন্ন ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ।
বিধান চন্দ্র পাল প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রভা অরোরা, ন্যাশনাল অপারেটর, ফাউন্ডেশন ফর এনভায়রনমেন্টাল এডুকেশন (এফইই), বাংলাদেশ এবং চেয়ার, মেইক এ ডিফারেন্স উইক সেলিব্রেশন গ্লোবাল কমিটি, সোসাইটি ফর ইকোলজিক্যাল রেস্টোরেশন (এসইআর)।
[email protected]