বাংলা ভাষার প্রসারে দরকার যুগোপযোগী পরিভাষা
Published: 18th, February 2025 GMT
বাংলা ভাষার প্রসার ও সর্বস্তরে ব্যবহার করার কথা প্রায়ই বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটছে কি না, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখে পর্যালোচনা প্রায় অনুপস্থিত। বাস্তবতা তার বিপরীত বলেই হয়তো সেদিকে অন্ধ হয়ে থাকছি সবাই। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে! বাংলা ভাষা যে নানাভাবে পশ্চাৎপদতার দিকে যাচ্ছে, সে রকম লক্ষণ অনেক দিকেই সুস্পষ্ট।
জ্ঞান–বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়ে বাংলায় প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করতে গিয়ে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তার মধ্যে বড় একটি হচ্ছে উপযুক্ত পরিভাষা। যাঁরা এসব বিষয়ে বাংলায় প্রবন্ধ বা বই লিখছেন, তাঁদের অনেকেই এ সমস্যার কথা উল্লেখ করেন।
অর্থনীতিবিষয়ক ও অন্য বেশ কয়েকটি বিষয়ের ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ–সংবলিত পরিভাষা কোষ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে সরকারের বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে। তারপর বাংলা একাডেমি সেটার আর কোনো পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেনি। কিছু লেখক বা গবেষক নিজ উদ্যোগে কোনো কোনো বিষয়ে পরিভাষা সংকলন প্রকাশ করেছেন।
গত দু-তিন দশকে বিশ্বজুড়ে সমাজ, অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত দিকে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। সেসব পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার জন্য অন্যান্য ভাষায়, বিশেষত ইংরেজিতে বহু নতুন শব্দ বা শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে, প্রচলিত হয়েছে। বাংলায় এসব বিষয় আলোচনার জন্য সেগুলোর পরিভাষা সর্বসম্মতভাবে প্রস্তুত করা দরকার। অর্থনীতি ও উন্নয়ন আলোচনায় প্রচলিত কিছু পরিভাষা পরিবর্তন করাও দরকার হতে পারে। এসব বিষয়ে বাংলায় প্রকাশিত কোনো কোনো গ্রন্থে কিছু নতুন পরিভাষা দেওয়া আছে। কিন্তু সেগুলো সব সর্বসম্মতভাবে এক করে প্রকাশ না করলে অন্য লেখকেরা হাতের কাছে পাবেন কীভাবে!
পরিভাষা প্রণয়নের কাজ হাতে নিলে তা বিভিন্ন বিষয়ের জন্য একই সঙ্গে করা সুবিধাজনক হতে পারে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেগুলো কোন প্রতিষ্ঠানের আওতায় হবে, সে সিদ্ধান্ত আগে দরকার। অতীতে যেহেতু বাংলা উন্নয়ন বোর্ড এই দায়িত্ব নিয়েছিল, এখন বাংলা একাডেমির নাম মনে আসাই স্বাভাবিক। সেটা হতে পারে অথবা সরকার আলাদা কমিশন গঠন করতে পারে বাংলা ভাষার উন্নয়নের উদ্দেশ্যে। সেখানে শুধু পরিভাষা নয়, বাংলা ভাষা উন্নয়ন ও সর্বস্তরে প্রচলনের সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
মাতৃভাষা হিসেবে বাংলায় কথা বলে—এমন জনসংখ্যার প্রায় ৭৪ শতাংশ বসবাস করে বাংলাদেশে। সুতরাং এটা মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও স্থায়িত্বের বিষয়ে এ দেশের বিশাল দায়িত্ব থাকলেও অন্যান্য দেশে বসবাসকারীদের কথাও মনে রাখতে হবে পরিভাষা ও অভিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে। অন্যান্য দেশে তাঁরা কোন ধরনের পরিভাষা ব্যবহার করছেন, সেগুলোও বিবেচ্য।
পরিভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় হচ্ছে বিদেশি শব্দের অন্তর্ভুক্তি। বহুল ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দ, যা বাংলা হিসেবে গৃহীত ও স্বীকৃত, সেগুলোর অভিধান, যা বাংলা একাডেমির তৈরি আছে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে হবে, সংযোজন-বিয়োজন হবে তাতে। সেখানে বিষয়ভিত্তিক শব্দমালাও থাকা দরকার।
নতুন প্রযুক্তি প্রসঙ্গে অন্য যেদিকে মনোযোগ দিতে হবে, তা হচ্ছে বাংলা টাইপ করার উন্নত মানের ফনেটিক সফটওয়্যার উদ্ভাবন করা দরকার। যাঁরা সাধারণত ইংরেজি ভাষায় টাইপ করেন, তাঁদের তখন সেই একই কি-বোর্ড দিয়ে কাজ চলে যায়। এ ধরনের কিছু মুক্ত সফটওয়্যার আছে। সেগুলোয় নানা সমস্যা আছে, আর বাংলা একাডেমির বানানরীতি সব সময় মানা হয়নি বা মানা হলেও সেটি যেসব সম্ভবপর শব্দতালিকা দেওয়া হয়, তার শুরুতে থাকে না। তখন লেখককে আবার অভিধান ঘেঁটে খুঁজতে হয়।
বাংলা ভাষার কিছু বিশেষত্ব আছে, যেগুলো যথাযথভাবে মানা উচিত গবেষণাগ্রন্থ লেখার ক্ষেত্রে। দু-একটা নিয়ম সমাজবিজ্ঞান বা অর্থনীতির বিষয়ে লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। একটি উদাহরণ দিলে বোঝানো সহজ হবে। বাংলায় সর্বনামে তুমি, আপনি, তাঁরা/তারা, সে/তিনি ইত্যাদি দুই ধরনের ভাগ থাকে। ক্রিয়াপদেও তখন সুর মিলিয়ে সম্মানসূচক রূপ ব্যবহার করার কথা। এগুলো একেবারে নিয়ম করে সব লেখকের ওপর চাপানো হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে একটা ধরনধারণ বের হয়ে আসবে।
আধুনিক যুগের আরেকটি প্রয়োজনের কথা মনে করাতে হয়। বিশাল দৈর্ঘ্যের বাংলা অভিধান অনলাইনে দিয়ে বাংলা একাডেমি অনেকের ধন্যবাদ পাচ্ছে। সেভাবেই সব পরিভাষা কোষ, অন্যান্য অভিধান, বানানরীতি ইত্যাদি অনলাইনে থাকা দরকার। শেষ করার আগে উল্লেখ না করলেই নয় যে এসব আয়োজন তো শুধু জোগানের দিকে সাহায্য করবে। উন্নত মানের গবেষণাগ্রন্থ বা আকরগ্রন্থ রচনা ও অনুবাদে এগুলো প্রয়োজন। তবে সেই সঙ্গে এসব গ্রন্থের চাহিদাও বাড়াতে হবে ছাত্র-শিক্ষক সবার আগ্রহ তৈরির মাধ্যমে। উৎসাহ থাকতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহারের, বাংলায় দক্ষতাকে গুরুত্ব দিতে হবে নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে।
● ড.
রুশিদান ইসলাম রহমান সাবেক গবেষণা পরিচালক, বিআইডিএস
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন য ন য ব যবহ র এক ড ম পর ভ ষ র জন য সমস য দরক র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
উইন্ডোজের দুটি ‘জিরো ডে’ নিরাপত্তাত্রুটির সমাধান করল মাইক্রোসফট
জিরো ডে নিরাপত্তাত্রুটি মূলত সফটওয়্যারের দুর্বলতা। নিজেদের তৈরি সফটওয়্যারে ত্রুটি শনাক্ত হলে দ্রুত সমাধান করে নিরাপত্তা প্যাঁচ উন্মুক্ত করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্যাঁচ উন্মুক্তের আগে হ্যাকাররা যদি সেই ত্রুটি ব্যবহার করতে পারে, তখন সেটিকে জিরো ডে নিরাপত্তাত্রুটি বলা হয়। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এমনই দুটি জিরো ডে নিরাপত্তাত্রুটির সন্ধান পাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে সেগুলোর সমাধান করে জুন আপডেট উন্মুক্ত করেছে মাইক্রোসফট।
মাইক্রোসফটের তথ্যমতে, জুন আপডেটে দুটি জিরো ডে ত্রুটিসহ মোট ৬৬টি নিরাপত্তাত্রুটির সমাধান করা হয়েছে। প্রথম জিরো ডে ত্রুটিটি ছিল মাইক্রোসফট উইন্ডোজের ওয়েব ডিসট্রিবিউটেড অথরিং অ্যান্ড ভার্সন সেবায়। দ্বিতীয় জিরো ডে ত্রুটিটি ছিল উইন্ডোজের এসএমবি (সার্ভার মেসেজ ব্লক) ক্লায়েন্ট প্রযুক্তিতে। সিভিই-২০২৫-৩৩০৫৩ এবং সিভিই-২০২৫-৩৩০৭৩ নামের ত্রুটিগুলো কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটার দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একটি জিরো ডে ত্রুটি ইতিমধ্যে সাইবার হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে। আর তাই দ্রুত নিরাপত্তা হালনাগাদটি ব্যবহার করতে হবে।
মাইক্রোসফটের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ত্রুটিগুলোর মধ্যে ২৫টি রিমোট কোড এক্সিকিউশন, ১৩টি এলিভেশন অব প্রিভিলেজ, ১৭টি তথ্য ফাঁস, ৩টি নিরাপত্তা বাইপাস, ৬টি ডিনায়াল অব সার্ভিস এবং ২টি স্পুফিং ঘরানার ত্রুটি ছিল। আর তাই এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা এসব ত্রুটির কারণে সাইবার হামলার শিকার হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্ট রিসার্চ জানিয়েছে, গত মার্চে তুরস্কের একটি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা করার সময় উইন্ডোজের জিরো ডে ঘরানার প্রথম ত্রুটিটি শনাক্ত করা হয়। বিষয়টি মাইক্রোসফটকে জানালে প্রতিষ্ঠানটি সেটিকে সিভিই-২০২৫-৩৩০৫৩ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং ১০ জুন নিরাপত্তা প্যাঁচ উন্মুক্ত করেছে।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার