আপত্তি করেছিলেন ভারতের লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য নতুন কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে আনা সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি ১৯ ফেব্রুয়ারি। সামনে কোনো নির্বাচনও নেই। অতএব তাড়াহুড়া না করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নিয়োগ স্থগিত রাখা হোক। সেই আপত্তি আমলে না নিয়েই গতকাল সোমবার রাতে দেশের নতুন সিইসি হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারের নাম ঘোষণা হলো।

জ্ঞানেশ কুমার তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের সদস্য ছিলেন। আজ মঙ্গলবার থেকে অবসরে যাচ্ছেন সিইসি রাজীব কুমার। জ্ঞানেশ তাঁর স্থালাভিষিক্ত হবেন। জ্ঞানেশের ছেড়ে যাওয়া নির্বাচন কমিশনারের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিবেক যোশীকে।

এত কাল নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিত তিন সদস্যের কমিটি। প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভার বিরোধী নেতার সঙ্গে সেই কমিটির তৃতীয় সদস্য ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। কেন্দ্রীয় সরকার সেই নিয়ম বদলে কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেয়। সেখানে অন্তর্ভুক্ত হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আরেক শীর্ষ সদস্য। বর্তমানে সেই সদস্য হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

গতকাল বৈঠকের শুরুতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে রাহুল বলেন, সামনে কোনো নির্বাচন নেই। নিয়োগ কমিটি–সংক্রান্ত মামলাও সুপ্রিম কোর্টে উঠছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক। কারণ, তিন সদস্যের কমিটির দুজনেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কাজেই সরকারি সিদ্ধান্ত একতরফাই হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা অগ্রাহ্য করে গতকাল রাতেই জ্ঞানেশ ও বিবেকের নিয়োগ ঘোষণা করেন।

জ্ঞানেশ কুমার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসভাজন। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা, অর্থাৎ সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার ও রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রধান। জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলের খসড়াও তাঁর হাতে তৈরি। অযোধ্যা মামলা ও পরবর্তীকালে রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠনের সময়ও জ্ঞানেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জ্ঞানেশ কুমার সিইসি পদে বহাল থাকবেন ২০২৯ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। মনে করা হচ্ছে, ওই বছর, অর্থাৎ ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা তিনি থাকতে থাকতেই করে যাবেন। এই বছরের শেষ দিকে রয়েছে বিহার বিধানসভার ভোট। পরের বছর বিরোধীশাসিত পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও তামিলনাড়ু ছাড়া রয়েছে বিজেপিশাসিত আসাম রাজ্যের ভোট। তাঁর কার্যকালের মধ্যে মোট ২০টি বিধানসভার ভোট ছাড়াও তিনি পরিচালনা করবেন ২০২৭ সালের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন।

বিদায়ী সিইসি রাজীব কুমারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণসহ আদর্শ নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের একাধিক গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল। একটি ক্ষেত্রেও কমিশন ওই দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির ভূরি ভূরি অভিযোগ আনা হয়েছিল। ইভিএমে কারচুপিরও অভিযোগ এসেছিল। কোনো অভিযোগই তিনি আমলে নেননি। স্বীকার করেননি।

তবে সংবাদ সম্মেলনে রাজীব কুমার বলেছিলেন, অবসর নেওয়ার পরে তিনি হিমালয়ের গভীরে চলে যাবেন। সেখানে নির্জনে আত্মবিশ্লেষণ করবেন। শরীরের বিষক্ষয় (ডিটক্সিফাই) করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ষ ট র মন ত র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ২-৫ টাকা কমেছে

বাজারে সরু তথা মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মোটা ও সরু নাজিরশাইল চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। এ ছাড়া বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও মুরগি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা দোকানে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গত সপ্তাহে মঞ্জুর ও সাগর ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল, যা আজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। একইভাবে ডায়মন্ড ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম ৮৮ টাকা থেকে কমে ৮৫ টাকা ও রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম ৭৮ টাকা থেকে কমে ৭৬ টাকা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি কমেছে মোজাম্মেল মিনিকেট চালের দাম। এই চালের দামই এত দিন সবচেয়ে বেশি ছিল। গত সপ্তাহেও খুচরায় মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ বাজারে সেটি বিক্রি হয় ৯২ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে ৮ টাকা কমেছে এই মিনিকেট চালের দাম।

তবে নাজিরশাইল, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও স্বর্ণা চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাল ৬০ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা চাল বিক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন বোরো ধানের মৌসুম চলছে। অর্থাৎ বোরো ধান থেকে যে চাল হয়, সেটি বাজারে এসেছে। সাধারণত মিনিকেট হিসেবে পরিচিত ছাঁটাই করা চালগুলো এ ধান থেকেই আসে। ফলে বাজারে নতুন মিনিকেট চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে।

চড়া পেঁয়াজ, মুরগির দাম

বাজারে এখন মূলত দেশি পেঁয়াজই বেশি বিক্রি হয়। এই পেঁয়াজের দাম তিন সপ্তাহ ধরে বাড়তি রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরেকটু বেশি। গত এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। আজ বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা ও সোনালির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দামও আগের মতোই বেশি রয়েছে। আজ এই মানের এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সবজি কিনছেন দুই ক্রেতা

সম্পর্কিত নিবন্ধ