অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
Published: 18th, February 2025 GMT
অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরের চাষাঢ়া এলাকায় তাঁরা এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের অনুরোধে তাঁরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে বদলির আদেশ হয়। এই বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে গত রোববার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেন। পরে তাঁরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিল চেয়ে লিখিত আবেদন জমা দেন। আজ মঙ্গলবার একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চাষাঢ়া সান্ত্বনা মার্কেটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে চাষাঢ়ায় সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ না করে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বললে তারা অবরোধ তুলে নেয়।’
ইউএনও জাফর সাদিক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ শিক্ষার্থীদের বোঝানোর পর তারা সড়ক ছেড়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজ ছুটিতে আছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। আমি অধ্যক্ষ ছাড়াও ইংরেজির অধ্যাপক। অধ্যক্ষ হওয়ার পরও আমি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ইংরেজির ক্লাস নিতাম। হয়তো তারা এসব কারণে আমার প্রতি ভালোবাসা থেকে এসব করছে। আমি সরকারি চাকরি করি, বদলির সরকারি আদেশ হয়েছে, সরকারি আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ কল জ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।