‘হামাক নদী কোণা বান্দি দেও, হামরা রিলিফ চাই না’
Published: 18th, February 2025 GMT
‘হামাক নদী কোণা বান্দি দেও। তিস্তার সঙ্গে হামার ঘর, নদী কোণা বান্দলে হামার ঘর কোণা বাঁচি যাবে বাপ। হামার ভিটা মাটি নাই ঘর কোণা ছাড়া। হামরা রিলিফ চাই না’ কথাগুলো এভাবে বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুরে থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মনোয়ারা বেওয়া।
প্রান্তিক পর্যায়ের এই নারী জানান, তিস্তার করাল গ্রাসে গত ৭ বছরে তার বাড়ি ভিটা ভেঙেছে ২৩ বার। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চে ভেঙেছে বর্তমান বাড়িভিটার অর্ধেক। সেই বাড়িভিটা তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়ার শোকে তার স্বামী দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করে মারা যান।
দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও কর্মসূত্রে তারা ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। বর্তমানে ভিটেমাটিটুকু ছাড়া সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন এই নারী। স্বামী হারানোর ৩ বছরেও কপালে জোটেনি বিধবা ভাতা।
মঙ্গলবার বাড়ির পাশে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে নীরবভাবে তাকিয়ে বুকভরা আশা নিয়ে তিনি আবদার করেন তিস্তার ভাঙনরোধে তার বাড়ির ভিটেটুকু রক্ষা করার।
শুধু মনোয়ারা নন, তার মতো আরো দুই নারী তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। তাদের চাওয়া তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি রক্ষা পাবে।
খোদেজা বেগম নামের এক নারী বলেন, খালি শুনি নদী খনন করে, কিন্তু নদী তো খনন করে না। হামার প্রতি বছরে ভাঙনত ধানের জমি, কালাই (ডাল) জমি তিস্তা ভাঙি নিয়া যায়। হামরা চাই নদী বান্দি দেওক হামাক।
আরেক নারী হাজরা বেওয়া বলেন, বিয়া হয়ার ৬০ বছর হইল। আগত নদী কি আছিল, এল্যা নদীত পানিয়ে নাই। চরত হাঁটু পানি ভাঙি বাজার যাওয়া নাগে, কোন জাগাত খালি বালু। হামরা নদীত পানি চাই।
প্রসঙ্গত, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন দাবিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুরের দুটি পয়েন্টে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অবস্থান কর্মসূচি। অবস্থান কর্মসূচিতে গতকাল থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ।
আন্দোলনকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রক্ষা হবে তাদের ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। অনেকেই গতকাল থেকে এ অবস্থান কর্মসূচিতে অবস্থান করলেও, আজ সকাল থেকে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়াও দুটি পয়েন্ট মিলে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের জন্য সকাল ও দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় তিস্তার অববাহিকায় দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।