বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার আমশট্ট গ্রামের শহীদ মিনারটির কাঠামো ছাড়া আর কিছুই নেই। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই। কঙ্কালসার শহীদ মিনারটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আমশট্ট গ্রামে নব্বইয়ের দশকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই সময় গ্রামবাসীর দাবির মুখে নির্মাণকাজের ঠিকাদার আমশট্ট হাটখোলায় একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেন। নব্বইয়ের দশক থেকে এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ওই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। শহীদ মিনারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্বন্ধে জানতে পারতেন। দীর্ঘদিন শহীদ মিনারটি কোনো প্রকার সংস্কার না করায় প্লাস্টার উঠে রডগুলো বেরিয়ে গেছে। একটি মিনার সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। মিনারটির কঙ্কাল দাঁড়িয়ে আছে। একটি মিনার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
আমশট্ট গ্রামের সাহিত্যিক প্রভাষক মতিয়ার রহমান দেওয়ান পলাশ বলেন, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারের বেহাল আমাদের পীড়া দেয়। শহীদদের মর্যাদা রক্ষায় শহীদ মিনারের দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন মল্লিক জানান, গ্রামের প্রথম শহীদ মিনারটি কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে। ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব আয় না থাকায় সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমশট্ট হাটের আয় থেকে শিগগিরই মিনারটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইউএনও শাহরুখ খান বলেন, এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। শহীদ মিনারটির বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেব।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।