Samakal:
2025-05-01@11:29:34 GMT

হামহাম ঝরনায়

Published: 18th, February 2025 GMT

হামহাম ঝরনায়

শ্রীমঙ্গল ট্যুর নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিল হামহাম ঝরনা। এটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় হলেও অধিকাংশ পর্যটক সাধারণত শ্রীমঙ্গল থেকে ঝরনাটি দেখতে যান। অবশ্য মৌলভীবাজার থেকেও যেতে পারেন। যাহোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ভাইদের সঙ্গে ছিল এ ট্যুর। দুর্গম ও দূরত্বের জন্য বড় ভাইদের কারও কারও হামহাম ঝরনা বিষয়ে অনীহা দেখা গেল। তাদের অবশ্য যুক্তি আছে, দু’দিনের মধ্যে যেদিন হামহাম ঝরনা দেখতে যাবে, সেদিন এর বাইরে আর কোনো পর্যটনকেন্দ্র দেখার সুযোগ থাকবে না। ছোট ভাইরা দেখলাম ঝরনা দেখার জন্য এক পায়ে খাড়া। এমনকি ট্যুরের গ্রুপে একজন হয়তো মজা করেই লিখেছে: ‘হামহাম অথবা মৃত্যু’। যাহোক, হামহাম ঝরনা দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো। তারপরও কিছুটা সংশয় যেন থেকেই গেল। কারণ একজন বলছে, ১০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আসা-যাওয়া মিলে ২০ কিলোমিটার। পাহাড়ি পথে সহজ কথা নয়। ট্যুর গাইড জানালেন, ১০ কিলোমিটার নয়, ৪ কিলোমিটার করে হাঁটতে হবে। 
চাঁদের গাড়ি কটেজে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা দিতে ১০টা পার হয়ে গেল। চাঁদের গাড়ি চলছে পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায়। দু’পাশে চাবাগান আর পাহাড়। রৌদ্রকরোজ্জ্বল অসাধারণ আবহাওয়ায় ছাদখোলা চাঁদের গাড়িতে আমরা চলছি। মাথার ওপর বিশাল আকাশ আর চারদিকে মনোরম দৃশ্য ছিল সত্যিই উপভোগ্য। কিছুক্ষণ পরপরই মনে হতো এটাই বুঝি ছবি তোলার উৎকৃষ্ট জায়গা। অবশ্য ছবি তোলার জন্য আর নামা হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া। বিজিবির তৎপরতাও দেখলাম। যাহোক, দেড় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে এবার হাঁটার পালা। গাড়ি থামতেই স্থানীয় শিশুরা এলো– ঠিক বাঁশ নয়, কঞ্চি নিয়ে। বাঁশের সেই কঞ্চি ছাড়া যে হামহাম ঝরনায় পৌঁছা অসম্ভব, একটু পরই টের তা পেলাম। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ। ঢালু, ঝুঁকিপূর্ণ, এবড়োখেবড়ো সরু পথে চলতে গিয়ে বেশ বেগই পেতে হলো। চারদিকে গাছগাছালিতে ভরা। আধা ঘণ্টা হেঁটে এতটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম যে, বিশ্রাম একটু নিতেই হলো। সেখানে পাহাড়ের ওপর টংয়ের দোকান আরও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। 
পাহাড়ি পথে আবার হাঁটা। বেশ কিছুক্ষণ পর পেলাম আরেকটি দোকান। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে গন্তব্যের লক্ষ্যে আবার হাঁটা দিলাম। একটু পর লক্ষ্য করলাম, এবার কেবলই নামছি। অর্থাৎ এতক্ষণ ছিল উঁচু-নিচু, এবার পাহাড়ের পথ বেয়ে কেবলই নামা। পাহাড় ট্র্যাক করে নামতে নামতে বেশ হাঁপিয়ে উঠলাম। অবশেষে ঝরনা পানির দেখা মিলল। এবার ঝরনার ঝিরি দিয়ে এগিয়ে চলা কিংবা পার দিয়ে উঁচু-নিচু পাথর বেয়ে হাঁটা। বেশ খানিক পর শুনলাম পানি পড়ার শব্দ। চার কিলোমিটার পথ ২ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেখা মিলল ঝরনার। সেখান থেকে অবিরল ধারায় পানির পতন দেখে পথের ক্লান্তি ভুলে গেলাম। শুরু হয়ে গেল ছবি তোলা, ভিডিও করা। 
শীতের সময় অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, হয়তো পানি তেমন নামবে না। গাইড অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, হামহাম ঝরনায় যেতে হলে অবশ্যই গাইড রাখা এবং অন্তত তিন-চারজনের দলে যাওয়া ভালো। গাইড ছাড়া হামহামে পৌঁছানো মুশকিল। যাহোক, শঙ্কার মধ্যে বাস্তবে সেদিন হামহাম ঝরনা বেয়ে পানি নামতে দেখলাম। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে মধ্যাহ্নে আমাদের গ্রুপ যখন হামহামে পৌঁছল তখন পানির দুটি ধারা বহমান ছিল। ঝরনার চারদিকে পাথর হয়ে আছে। চারদিকে বাঁশঝাড়ের দেখা মিলল বেশি। ঝরনার পানি দেখেই আমাদের টিমের অনেকে নেমে পড়লেন পানিতে। চারদিকে পানি অতটা গভীর না হলেও পানি পতনের স্থানে বেশ গভীর। যাহোক, ২ ঘণ্টা অবস্থান করার পর এবার ফেরার পালা। আবার দুর্গম পথ বেয়ে যেতে হবে। এতক্ষণ ছিল ঝরনা দেখার ইচ্ছে। এখন চিন্তা বাড়ি ফেরার। 
ফেরার পথও অতটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে ঝরনা ঝিরে থেকে পাহাড়ে উঠতে প্রথম ধাক্কাটা ছিল স্মরণীয়। উঠেই পাহাড়ের ওপর বিশ্রাম নিতে হলো অনেকক্ষণ। এরপর হাঁটা। ফেরার পথ কিছু পরিচিতই মনে হলো। তারপরও পরিশ্রম কম হলো না। সময়ও লাগল প্রায় ২ ঘণ্টা। তারপরও হামহাম ঝরনা দেখে পরিশ্রম উসুলই বলতে হবে। এটি সত্যিই এক অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। 
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল। বাস কিংবা ট্রেনে আসা যায়। সেখান থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারেন। হামহাম ঝরনার আশপাশে থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সে জন্য সকালে রওনা দিয়ে দিনে দিনে শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার চলে আসা ভালো। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর

পর্যটন খাতের সম্ভাবনা ও যাত্রী বাড়ানোর পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথে চাপ কমানো এবং অর্থনীতি চাঙা করতে কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

এর মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি লালমনিরহাট ও শমশেরনগর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। বিশাল পরিসর, প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও চালু হয়নি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম, পরিত্যক্ত, প্রবাসী অধ্যুষিত ও পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমান বন্দর।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন শমশেরনগর বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিকবার আবেদন করেন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন।

জানা গেছে, দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত ও দখলে থাকা ৭টি বিমানবন্দর যথাক্রমে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমশেরনগর, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের বৃহত্তম শমশেরনগর বিমানবন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর চালু করার জন্য বেবিচকের চার সদস্যের একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেছে।

তারা বিমানবন্দর দুটি চালু করার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অন্য বিমানবন্দরগুলো পরিদর্শন করে দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশে একসঙ্গে বড় যে দুটি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিল, তার একটি হচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর। সেসময় বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শমশেরনগর বিমানবন্দর’। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা বিমানবন্দরে ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। সেখানে বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করা হয়। সেই থেকে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে এখানে। ৬০০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এ বিমানবন্দরের বড় একটি অংশ পতিত থাকায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদে স্থানীয়দের কাছে ইজারা দিয়ে যাচ্ছেন।

পার্শ্ববর্তী সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন যাত্রীর চাপও বেড়ে গেছে। ফলে বিমানবন্দরটি চালু হলে এ চাপ কমে আসবে। মৌলভীবাজার জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। প্রবাসী ও পর্যটকদের যোগাযোগ সহজ হবে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেখানে আগে শেষ হবে, সেগুলো আগে সচল হবে। 

প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এই বিমানবন্দরের সামরিক গুরুত্বও রয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুতই এখানে পুনরায় ফ্লাইট চালু হবে।

বিমানবন্দরটি চালু হলে এটিকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে এবং অত্র এলাকার যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর