Samakal:
2025-09-18@04:52:19 GMT

হামহাম ঝরনায়

Published: 18th, February 2025 GMT

হামহাম ঝরনায়

শ্রীমঙ্গল ট্যুর নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিল হামহাম ঝরনা। এটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় হলেও অধিকাংশ পর্যটক সাধারণত শ্রীমঙ্গল থেকে ঝরনাটি দেখতে যান। অবশ্য মৌলভীবাজার থেকেও যেতে পারেন। যাহোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ভাইদের সঙ্গে ছিল এ ট্যুর। দুর্গম ও দূরত্বের জন্য বড় ভাইদের কারও কারও হামহাম ঝরনা বিষয়ে অনীহা দেখা গেল। তাদের অবশ্য যুক্তি আছে, দু’দিনের মধ্যে যেদিন হামহাম ঝরনা দেখতে যাবে, সেদিন এর বাইরে আর কোনো পর্যটনকেন্দ্র দেখার সুযোগ থাকবে না। ছোট ভাইরা দেখলাম ঝরনা দেখার জন্য এক পায়ে খাড়া। এমনকি ট্যুরের গ্রুপে একজন হয়তো মজা করেই লিখেছে: ‘হামহাম অথবা মৃত্যু’। যাহোক, হামহাম ঝরনা দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো। তারপরও কিছুটা সংশয় যেন থেকেই গেল। কারণ একজন বলছে, ১০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আসা-যাওয়া মিলে ২০ কিলোমিটার। পাহাড়ি পথে সহজ কথা নয়। ট্যুর গাইড জানালেন, ১০ কিলোমিটার নয়, ৪ কিলোমিটার করে হাঁটতে হবে। 
চাঁদের গাড়ি কটেজে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা দিতে ১০টা পার হয়ে গেল। চাঁদের গাড়ি চলছে পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায়। দু’পাশে চাবাগান আর পাহাড়। রৌদ্রকরোজ্জ্বল অসাধারণ আবহাওয়ায় ছাদখোলা চাঁদের গাড়িতে আমরা চলছি। মাথার ওপর বিশাল আকাশ আর চারদিকে মনোরম দৃশ্য ছিল সত্যিই উপভোগ্য। কিছুক্ষণ পরপরই মনে হতো এটাই বুঝি ছবি তোলার উৎকৃষ্ট জায়গা। অবশ্য ছবি তোলার জন্য আর নামা হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া। বিজিবির তৎপরতাও দেখলাম। যাহোক, দেড় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে এবার হাঁটার পালা। গাড়ি থামতেই স্থানীয় শিশুরা এলো– ঠিক বাঁশ নয়, কঞ্চি নিয়ে। বাঁশের সেই কঞ্চি ছাড়া যে হামহাম ঝরনায় পৌঁছা অসম্ভব, একটু পরই টের তা পেলাম। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ। ঢালু, ঝুঁকিপূর্ণ, এবড়োখেবড়ো সরু পথে চলতে গিয়ে বেশ বেগই পেতে হলো। চারদিকে গাছগাছালিতে ভরা। আধা ঘণ্টা হেঁটে এতটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম যে, বিশ্রাম একটু নিতেই হলো। সেখানে পাহাড়ের ওপর টংয়ের দোকান আরও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। 
পাহাড়ি পথে আবার হাঁটা। বেশ কিছুক্ষণ পর পেলাম আরেকটি দোকান। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে গন্তব্যের লক্ষ্যে আবার হাঁটা দিলাম। একটু পর লক্ষ্য করলাম, এবার কেবলই নামছি। অর্থাৎ এতক্ষণ ছিল উঁচু-নিচু, এবার পাহাড়ের পথ বেয়ে কেবলই নামা। পাহাড় ট্র্যাক করে নামতে নামতে বেশ হাঁপিয়ে উঠলাম। অবশেষে ঝরনা পানির দেখা মিলল। এবার ঝরনার ঝিরি দিয়ে এগিয়ে চলা কিংবা পার দিয়ে উঁচু-নিচু পাথর বেয়ে হাঁটা। বেশ খানিক পর শুনলাম পানি পড়ার শব্দ। চার কিলোমিটার পথ ২ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেখা মিলল ঝরনার। সেখান থেকে অবিরল ধারায় পানির পতন দেখে পথের ক্লান্তি ভুলে গেলাম। শুরু হয়ে গেল ছবি তোলা, ভিডিও করা। 
শীতের সময় অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, হয়তো পানি তেমন নামবে না। গাইড অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, হামহাম ঝরনায় যেতে হলে অবশ্যই গাইড রাখা এবং অন্তত তিন-চারজনের দলে যাওয়া ভালো। গাইড ছাড়া হামহামে পৌঁছানো মুশকিল। যাহোক, শঙ্কার মধ্যে বাস্তবে সেদিন হামহাম ঝরনা বেয়ে পানি নামতে দেখলাম। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে মধ্যাহ্নে আমাদের গ্রুপ যখন হামহামে পৌঁছল তখন পানির দুটি ধারা বহমান ছিল। ঝরনার চারদিকে পাথর হয়ে আছে। চারদিকে বাঁশঝাড়ের দেখা মিলল বেশি। ঝরনার পানি দেখেই আমাদের টিমের অনেকে নেমে পড়লেন পানিতে। চারদিকে পানি অতটা গভীর না হলেও পানি পতনের স্থানে বেশ গভীর। যাহোক, ২ ঘণ্টা অবস্থান করার পর এবার ফেরার পালা। আবার দুর্গম পথ বেয়ে যেতে হবে। এতক্ষণ ছিল ঝরনা দেখার ইচ্ছে। এখন চিন্তা বাড়ি ফেরার। 
ফেরার পথও অতটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে ঝরনা ঝিরে থেকে পাহাড়ে উঠতে প্রথম ধাক্কাটা ছিল স্মরণীয়। উঠেই পাহাড়ের ওপর বিশ্রাম নিতে হলো অনেকক্ষণ। এরপর হাঁটা। ফেরার পথ কিছু পরিচিতই মনে হলো। তারপরও পরিশ্রম কম হলো না। সময়ও লাগল প্রায় ২ ঘণ্টা। তারপরও হামহাম ঝরনা দেখে পরিশ্রম উসুলই বলতে হবে। এটি সত্যিই এক অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। 
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল। বাস কিংবা ট্রেনে আসা যায়। সেখান থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারেন। হামহাম ঝরনার আশপাশে থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সে জন্য সকালে রওনা দিয়ে দিনে দিনে শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার চলে আসা ভালো। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাজতখানার ভেতর থেকে মোকাদ্দুস (৩২) নামে আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পিবিআই।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার জেলা শহরের টিভি হাসপাতাল সড়কে পিবিআইর হাজতখানা থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। 

মোকাদ্দুস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি আলোচিত লিটন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের ধানক্ষেত থেকে লিটন নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে মোকাদ্দুস পলাতক ছিলেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন মোকাদ্দুস। পরে তাকে লিটন হত্যার মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।

পিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে মোকাদ্দুসকে ৭-৮ জন আসামির সঙ্গে হাজতখানায় রাখা হয়। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে দেখেন, মোকাদ্দুস নিজের লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মোকাদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

১১ সেপ্টেম্বর লিটনের বাবা সাত্তার মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় শামিম নামের আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. জাফর হুসাইন বলেছেন, লিটন হত্যা মামলার তদন্ত আমাদের হাতে। মোকাদ্দুস রবিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার সকালে হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি
  • মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার