Samakal:
2025-08-01@01:40:04 GMT

হামহাম ঝরনায়

Published: 18th, February 2025 GMT

হামহাম ঝরনায়

শ্রীমঙ্গল ট্যুর নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিল হামহাম ঝরনা। এটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় হলেও অধিকাংশ পর্যটক সাধারণত শ্রীমঙ্গল থেকে ঝরনাটি দেখতে যান। অবশ্য মৌলভীবাজার থেকেও যেতে পারেন। যাহোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ভাইদের সঙ্গে ছিল এ ট্যুর। দুর্গম ও দূরত্বের জন্য বড় ভাইদের কারও কারও হামহাম ঝরনা বিষয়ে অনীহা দেখা গেল। তাদের অবশ্য যুক্তি আছে, দু’দিনের মধ্যে যেদিন হামহাম ঝরনা দেখতে যাবে, সেদিন এর বাইরে আর কোনো পর্যটনকেন্দ্র দেখার সুযোগ থাকবে না। ছোট ভাইরা দেখলাম ঝরনা দেখার জন্য এক পায়ে খাড়া। এমনকি ট্যুরের গ্রুপে একজন হয়তো মজা করেই লিখেছে: ‘হামহাম অথবা মৃত্যু’। যাহোক, হামহাম ঝরনা দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো। তারপরও কিছুটা সংশয় যেন থেকেই গেল। কারণ একজন বলছে, ১০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আসা-যাওয়া মিলে ২০ কিলোমিটার। পাহাড়ি পথে সহজ কথা নয়। ট্যুর গাইড জানালেন, ১০ কিলোমিটার নয়, ৪ কিলোমিটার করে হাঁটতে হবে। 
চাঁদের গাড়ি কটেজে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা দিতে ১০টা পার হয়ে গেল। চাঁদের গাড়ি চলছে পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তায়। দু’পাশে চাবাগান আর পাহাড়। রৌদ্রকরোজ্জ্বল অসাধারণ আবহাওয়ায় ছাদখোলা চাঁদের গাড়িতে আমরা চলছি। মাথার ওপর বিশাল আকাশ আর চারদিকে মনোরম দৃশ্য ছিল সত্যিই উপভোগ্য। কিছুক্ষণ পরপরই মনে হতো এটাই বুঝি ছবি তোলার উৎকৃষ্ট জায়গা। অবশ্য ছবি তোলার জন্য আর নামা হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া। বিজিবির তৎপরতাও দেখলাম। যাহোক, দেড় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে এবার হাঁটার পালা। গাড়ি থামতেই স্থানীয় শিশুরা এলো– ঠিক বাঁশ নয়, কঞ্চি নিয়ে। বাঁশের সেই কঞ্চি ছাড়া যে হামহাম ঝরনায় পৌঁছা অসম্ভব, একটু পরই টের তা পেলাম। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ। ঢালু, ঝুঁকিপূর্ণ, এবড়োখেবড়ো সরু পথে চলতে গিয়ে বেশ বেগই পেতে হলো। চারদিকে গাছগাছালিতে ভরা। আধা ঘণ্টা হেঁটে এতটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম যে, বিশ্রাম একটু নিতেই হলো। সেখানে পাহাড়ের ওপর টংয়ের দোকান আরও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। 
পাহাড়ি পথে আবার হাঁটা। বেশ কিছুক্ষণ পর পেলাম আরেকটি দোকান। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে গন্তব্যের লক্ষ্যে আবার হাঁটা দিলাম। একটু পর লক্ষ্য করলাম, এবার কেবলই নামছি। অর্থাৎ এতক্ষণ ছিল উঁচু-নিচু, এবার পাহাড়ের পথ বেয়ে কেবলই নামা। পাহাড় ট্র্যাক করে নামতে নামতে বেশ হাঁপিয়ে উঠলাম। অবশেষে ঝরনা পানির দেখা মিলল। এবার ঝরনার ঝিরি দিয়ে এগিয়ে চলা কিংবা পার দিয়ে উঁচু-নিচু পাথর বেয়ে হাঁটা। বেশ খানিক পর শুনলাম পানি পড়ার শব্দ। চার কিলোমিটার পথ ২ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেখা মিলল ঝরনার। সেখান থেকে অবিরল ধারায় পানির পতন দেখে পথের ক্লান্তি ভুলে গেলাম। শুরু হয়ে গেল ছবি তোলা, ভিডিও করা। 
শীতের সময় অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, হয়তো পানি তেমন নামবে না। গাইড অবশ্য আশ্বস্ত করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, হামহাম ঝরনায় যেতে হলে অবশ্যই গাইড রাখা এবং অন্তত তিন-চারজনের দলে যাওয়া ভালো। গাইড ছাড়া হামহামে পৌঁছানো মুশকিল। যাহোক, শঙ্কার মধ্যে বাস্তবে সেদিন হামহাম ঝরনা বেয়ে পানি নামতে দেখলাম। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে মধ্যাহ্নে আমাদের গ্রুপ যখন হামহামে পৌঁছল তখন পানির দুটি ধারা বহমান ছিল। ঝরনার চারদিকে পাথর হয়ে আছে। চারদিকে বাঁশঝাড়ের দেখা মিলল বেশি। ঝরনার পানি দেখেই আমাদের টিমের অনেকে নেমে পড়লেন পানিতে। চারদিকে পানি অতটা গভীর না হলেও পানি পতনের স্থানে বেশ গভীর। যাহোক, ২ ঘণ্টা অবস্থান করার পর এবার ফেরার পালা। আবার দুর্গম পথ বেয়ে যেতে হবে। এতক্ষণ ছিল ঝরনা দেখার ইচ্ছে। এখন চিন্তা বাড়ি ফেরার। 
ফেরার পথও অতটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে ঝরনা ঝিরে থেকে পাহাড়ে উঠতে প্রথম ধাক্কাটা ছিল স্মরণীয়। উঠেই পাহাড়ের ওপর বিশ্রাম নিতে হলো অনেকক্ষণ। এরপর হাঁটা। ফেরার পথ কিছু পরিচিতই মনে হলো। তারপরও পরিশ্রম কম হলো না। সময়ও লাগল প্রায় ২ ঘণ্টা। তারপরও হামহাম ঝরনা দেখে পরিশ্রম উসুলই বলতে হবে। এটি সত্যিই এক অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। 
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল। বাস কিংবা ট্রেনে আসা যায়। সেখান থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারেন। হামহাম ঝরনার আশপাশে থাকার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সে জন্য সকালে রওনা দিয়ে দিনে দিনে শ্রীমঙ্গল বা মৌলভীবাজার চলে আসা ভালো। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও