তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য আসন্ন বৈঠকের জন্য তুরস্ক একটি আদর্শ আয়োজক হতে পারে।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় সফররত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

এরদোগান বলেন, “আঙ্কারার দৃষ্টিতে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অপরিহার্য।”

আরো পড়ুন:

তুরস্কে অস্ত্রের কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ১৩

সিরাজগঞ্জের মেয়েকে বিয়ে করলেন তুরস্কের যুবক

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আঙ্কারা স্থায়ী শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়াকে সফল করতে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।” 

তিনি আরো বলেন, “যুদ্ধ- যা অনেক ‘নিরপরাধ মৃত্যু’ ও বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়েছে, ‘এখনই শেষ হওয়া উচিত’। একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তি সম্ভব করার জন্য, আমরা যে দেশগুলোকে শক্তিশালী বলে জানি শান্তির পক্ষে তাদের মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।”

এরদোগান উল্লেখ করেন, আমরা ২০২২ সালের মার্চে ইস্তাম্বুলে দুই দেশের (রাশিয়া ও ইউক্রেন) মধ্যে সরাসরি আলোচনার আয়োজন করেছিলাম। পক্ষগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ফলে আমরা কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলাম।” 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “গত তিন বছরে, আমরা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সঙ্গে সকল স্তরে সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছি। এসব প্রচেষ্টায়, আমরা আন্তরিকভাবে উভয় পক্ষের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং আমরা সুনির্দিষ্ট ফলাফলও অর্জন করেছি।

তিনি জানান, শান্তি আলোচনায় কোনো ক্ষতি নেই। পুরো বিশ্ব এখন যুদ্ধ অবসানের জন্য অপেক্ষা করছে। এই কারণে আমরা শস্য করিডোর প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলাম। এক্ষেত্রে আমরা বাস্তব ফলাফলও অর্জন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারিনি। চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে ৩০ হাজার টন শস্য রপ্তানি হয়েছিল।”

রাশিয়ার শস্য রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে মস্কো ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পরে চুক্তিটি আর বাড়ায়নি।

এরদোগান বলেন, “আমরা চাই পরবর্তী প্রক্রিয়ায়ও এটি অব্যাহত থাকুক। ইতিমধ্যে, আমি জেলেনস্কির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই সিরিয়ায় শস্য পাঠানোর জন্য। তারা আমাদের কাছে যে শস্য পাঠিয়েছিল, আমরা আমাদের মিলগুলোতে আটায় পরিণত করে এই শস্য সিরিয়ায় পৌঁছে দিয়েছি এবং পৌঁছে দিচ্ছি।”

“এটি অবশ্যই সিরিয়ার প্রশাসনকে খুব খুশি ও সন্তুষ্ট করেছে। আমি সিরিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ সিরিয়ার পরিস্থিতিতে এটি একটি মানবিক ও বিবেকপূর্ণ কর্তব্য।” 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “যুদ্ধ দ্রুত ও আলোচনার মাধ্যমে শেষ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছেন, তা তুরস্কের গত তিন বছরের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্কের অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, “কিয়েভ আঙ্কারার নীতির জন্য কৃতজ্ঞ।” 

তিনি বলেন, “তুরস্ক বরাবরই ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞ। তবে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেন এবং ইউরোপের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত রস ক ইউক র ন ইউক র ন র এরদ গ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ