রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনার জন্য তুরস্ক আদর্শ স্থান: এরদোগান
Published: 19th, February 2025 GMT
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য আসন্ন বৈঠকের জন্য তুরস্ক একটি আদর্শ আয়োজক হতে পারে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় সফররত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
এরদোগান বলেন, “আঙ্কারার দৃষ্টিতে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অপরিহার্য।”
আরো পড়ুন:
তুরস্কে অস্ত্রের কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ১৩
সিরাজগঞ্জের মেয়েকে বিয়ে করলেন তুরস্কের যুবক
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আঙ্কারা স্থায়ী শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়াকে সফল করতে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
তিনি আরো বলেন, “যুদ্ধ- যা অনেক ‘নিরপরাধ মৃত্যু’ ও বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়েছে, ‘এখনই শেষ হওয়া উচিত’। একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তি সম্ভব করার জন্য, আমরা যে দেশগুলোকে শক্তিশালী বলে জানি শান্তির পক্ষে তাদের মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।”
এরদোগান উল্লেখ করেন, আমরা ২০২২ সালের মার্চে ইস্তাম্বুলে দুই দেশের (রাশিয়া ও ইউক্রেন) মধ্যে সরাসরি আলোচনার আয়োজন করেছিলাম। পক্ষগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ফলে আমরা কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলাম।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “গত তিন বছরে, আমরা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সঙ্গে সকল স্তরে সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছি। এসব প্রচেষ্টায়, আমরা আন্তরিকভাবে উভয় পক্ষের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং আমরা সুনির্দিষ্ট ফলাফলও অর্জন করেছি।
তিনি জানান, শান্তি আলোচনায় কোনো ক্ষতি নেই। পুরো বিশ্ব এখন যুদ্ধ অবসানের জন্য অপেক্ষা করছে। এই কারণে আমরা শস্য করিডোর প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলাম। এক্ষেত্রে আমরা বাস্তব ফলাফলও অর্জন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারিনি। চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে ৩০ হাজার টন শস্য রপ্তানি হয়েছিল।”
রাশিয়ার শস্য রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে মস্কো ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পরে চুক্তিটি আর বাড়ায়নি।
এরদোগান বলেন, “আমরা চাই পরবর্তী প্রক্রিয়ায়ও এটি অব্যাহত থাকুক। ইতিমধ্যে, আমি জেলেনস্কির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই সিরিয়ায় শস্য পাঠানোর জন্য। তারা আমাদের কাছে যে শস্য পাঠিয়েছিল, আমরা আমাদের মিলগুলোতে আটায় পরিণত করে এই শস্য সিরিয়ায় পৌঁছে দিয়েছি এবং পৌঁছে দিচ্ছি।”
“এটি অবশ্যই সিরিয়ার প্রশাসনকে খুব খুশি ও সন্তুষ্ট করেছে। আমি সিরিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ সিরিয়ার পরিস্থিতিতে এটি একটি মানবিক ও বিবেকপূর্ণ কর্তব্য।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “যুদ্ধ দ্রুত ও আলোচনার মাধ্যমে শেষ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছেন, তা তুরস্কের গত তিন বছরের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তুরস্কের অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, “কিয়েভ আঙ্কারার নীতির জন্য কৃতজ্ঞ।”
তিনি বলেন, “তুরস্ক বরাবরই ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞ। তবে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেন এবং ইউরোপের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত রস ক ইউক র ন ইউক র ন র এরদ গ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।