শেয়ার কারসাজি: আমিনুল-হিরু চক্রকে ১০.১৩ কোটি অর্থদণ্ড
Published: 19th, February 2025 GMT
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ ব্যক্তি ও ৪ প্রতিষ্ঠানকে মোট ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানি দুটির মধ্যে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার নিয়ে নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম এবং এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু কারসাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এভাবে কোম্পানি দুইটির শেয়ার অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে তারা কোটি কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। ওই একই বছরের ৭ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
শেয়ার কারসাজি, ২৮ বিওধারীকে ১.
ডিএসইতে লেনদেন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে
ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিডিমটেড, আকিজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বিও হিসাব পরিচালনা করতেন। আর এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড এবং কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বিও হিসাব পরিচালনা করতেন।
ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামকে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান নাবিল ফিড মিলসকে ১০ লাখ টাকা ও আরেক প্রতিষ্ঠান নাবিল নাবা ফুডসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে, এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরুকে ২.৩০ কোটি টাকা, তার বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ৪.১৫ কোটি টাকা, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ টাকা, তার বোন কনিকা আফরোজকে ১ লাখ টাকা, তার মা আলেয়া বেগমকে ১ লাখ টাকা, তার ভাই মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ টাকা, ভাই সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ টাকা এবং তার আরেক প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তদন্ত কার্যক্রম
নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম এবং তার দুইটি প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন করে। কাসজাজিকারীরা ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬৮.২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৫.২০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪৭ টাকা বা ৬৮.৯১ শতাংশ বেড়ে যায়।
সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু এবং তার পরিবারের সাত সদস্য ও দুইটি প্রতিষ্ঠান যোগসাজস করে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন করে। কাসজাজিকারীরা ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৩.৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৮.৩০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬০.৯২ শতাংশ বাড়ে যায়।
কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসে ও এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী, সেহেতু এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যেহেতু অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং সেকশন ১৭(ই)(২) লংঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। যেহেতু অভিযুক্তরা উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ: যেহেতু, কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আলোচ্য ব্যক্তিদের জরিমানা করা প্রয়োজন ও সমীচীন। অতএব, সেহেতু, কমিশন উল্লিখিত যাবতীয় বিষয় বিবেচনাপূর্বক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অভিযুক্তদের অর্থদন্ড ধার্য করল যা অত্র আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ এর অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এনআরব স ব যবস থ আল চ য আম ন ল র পর প স কশন
এছাড়াও পড়ুন:
নাসির-তামিমার মামলার শুনানি বিব্রত আদালত, বদলির আদেশ
অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করেছেন আদালত। মামলাটি অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।
সোমবার এ মামলায় নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা আদালতে হাজির হন।
তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু আদালতে দুটি আবেদন করেন। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি আবেদন করা হয়। কারণ হিসেবে আজিজুর রহমান দুলু বলেন, “এ মামলার বিচার চলছে। এ অবস্থায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়াতে বলেন, নাসির হোসেন ব্যাভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। বিচার শেষে আদালত নির্ধারণ করবেন, নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কি না এবং ব্যাভিচার করেছেন কি না।”
একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন নাসির ও তামিমার আইনজীবী।
এদিকে, বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি এখন আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা বিজি কোর্ট। একটা মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার, এত সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় ইফেক্ট পড়ে। আমি বিব্রত বোধ করে মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দিই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন?
তখন আইনজীবীরা জানান, এতে তাদের আপত্তি নেই। তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে সিএমএম বরাবর পাঠিয়ে দিই। সিএমএম মামলাটি একটা কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা সুলতানা তাম্মির স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শেখ মো. মিজানুর রহমান তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালত নাসির-তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে, এ মামলার অপর আসামি তামিমার মা সুমি আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঢাকা/এম/রফিক