স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কৌশলে বোকা বানিয়ে ব্যক্তিগত বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে থাকে সাইবার অপরাধীরা। এ ক্ষেত্রে টেলিফোন ওরিয়েন্টেড অ্যাটাক ডেলিভারি (টিওএডি) কৌশল বেশ ভয়ংকর। কারণ, এই কৌশল কাজে লাগিয়ে ফোনে কথা বলার সময় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষতিকর অ্যাপ ইনস্টল করতে প্রলুব্ধ করা হয়ে থাকে। আর তাই টেলিফোন ওরিয়েন্টেড অ্যাটাক থেকে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখতে ফোনে কথা বলার সময় স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস পরিবর্তনের সুযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সীমিত করার সুবিধা চালু করছে গুগল।

টেলিফোন ওরিয়েন্টেড অ্যাটাকের মাধ্যমে সাইবার হামলা চালানোর জন্য প্রথমে বিভিন্ন প্রলোভনযুক্ত এসএমএস পাঠিয়ে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোনকল করতে বলা হয়। কেউ সেই নম্বরে ফোনকল করলে বিভিন্ন কৌশলে ভুয়া নির্দেশনা দিয়ে বিপজ্জনক অ্যাপ ইনস্টল করানো হয়। এর ফলে অ্যাপটির মাধ্যমে স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে এবং নিয়মিত তথ্য চুরি করে পাঠাতে থাকে। অ্যান্ড্রয়েডের নতুন নিরাপত্তা সুবিধাটি ফোনকল চলাকালীন ব্যবহারকারীদের গুরুত্বপূর্ণ সেটিং পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করবে। বিশেষভাবে, এই সুরক্ষা ব্যবস্থা ‘অজানা উৎস থেকে অ্যাপ ইনস্টল’ এবং ‘অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যাকসেস’ চালুর মতো সংবেদনশীল কার্যক্রম প্রতিরোধ করবে।

আরও পড়ুন‘পিগ বুচারিং’ প্রতারণায় যুক্ত ২০ লাখ অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলল মেটা: কী এই প্রতারণা, কীভাবে নিরাপদ থাকবেন২৪ নভেম্বর ২০২৪

গুগলের তথ্যমতে, নতুন এ সুবিধার মাধ্যমে ফোনকলে কথা বলার সময় কেউ যদি স্মার্টফোনের সেটিংস পরিবর্তনের চেষ্টা করেন, তবে অ্যান্ড্রয়েড স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা আটকে দেবে এবং একটি সতর্কবার্তা দেখাবে। এ ছাড়া, ফোনকল চলাকালীন কোনো অ্যাপকে ‘অ্যাকসেসিবিলিটি সার্ভিস’ ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া যাবে না। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ১৬ বেটা ২ সংস্করণে পরীক্ষামূলকভাবে সুবিধাটি চালু করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঅনলাইনে চাকরির কথা বলে প্রতারণা, যেভাবে বোঝা যাবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এনসিসি গ্রুপ ও ফিনল্যান্ডের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের (এনসিএসসি-এফআই) তথ্যমতে, এসএমএস ও ফোনকলের মাধ্যমে স্মার্টফোনে ক্ষতিকর সফটওয়্যার ইনস্টল করাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। এসব অ্যাপের মধ্যে ভাল্টার নামের একটি ড্রপার অ্যাপও রয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে।

সূত্র: দ্য হ্যাকার নিউজ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ফ নকল

এছাড়াও পড়ুন:

১০টির বেশি সিম থাকলে এসএমএস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ হবে ধাপে ধাপে

সরকারের নতুন নিয়ম হলো, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করা যাবে। যাঁদের কাছে ১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম আছে, তাঁদের অতিরিক্ত সিম ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তবে তার আগে নিজের অপ্রয়োজনীয় সিমের নিবন্ধন বাতিল করার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা। পুরো প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত মে মাসে একজন ব্যবহারকারীর সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলন চর্চা বিবেচনায় নিয়ে একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সিমের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি বলছে, সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ বেঁধে দিলে ২৬ লাখ ব্যবহারকারীর ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ ব্যবহারকারীর নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছে। ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহারকারী মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি বলছে, সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ বেঁধে দিলে ২৬ লাখ ব্যবহারকারীর ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে।

বিটিআরসি শুরুতে জানিয়েছিল, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে মোবাইল অপারেটররা জানায়, তারা এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি।

যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, শুরুতে তাঁদের নামের তালিকা করা হবে। এ কাজ করবে বিটিআরসির নিয়োগ করা সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান। পরে এসব ব্যবহারকারীর নিবন্ধিত সিমের নম্বরগুলো নিজ নিজ অপারেটরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

অপারেটররা এ তালিকা অনুযায়ী গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তাঁর নামে নিবন্ধিত সিম ১০টিতে নামিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে অপারেটররা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে এসএমএস দিয়ে সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে।

পাশাপাশি অপারেটররা তাদের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করবে। এ ছাড়া বিটিআরসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক বা অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে গ্রাহকদের অবহিত করা হবে।

১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম থাকা ব্যবহারকারীদের তালিকা অপারেটররা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে।

ব্যবহারকারীরা *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত আছে, সেটার সংখ্যা ও নম্বর জানতে পারবেন। অতিরিক্ত সিম থাকলে তা ‘ট্রান্সফার অব ওনারশিপ’ করতে পারবেন।

এ ধাপের কার্যক্রম ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা শুরুতে জানানো হয়েছিল। অবশ্য বিটিআরসির সূত্র জানায়, এ সময়সীমা ১৫ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ৩০ অক্টোবর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সময়ের পরও যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম থাকবে, ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের তালিকা করে অপারেটরদের জানিয়ে দেওয়া হবে। অপারেটররা সেই তালিকার ভিত্তিতে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে।

সে ক্ষেত্রে সিমগুলো থেকে রাজস্ব আহরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। সর্বশেষ ছয় মাসে সর্বোচ্চ রাজস্বের সিমটি শুরুতে থাকবে এবং কম রাজস্বের সিমটি শেষে থাকবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর যে সিম নিয়মিত সচল থাকে এবং বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটাকে প্রথমে রাখা হবে। পাশাপাশি এমএফএসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকলে সেসব সিমের কথা তালিকায় উল্লেখ করতে হবে।

আরও পড়ুনব্যক্তি পর্যায়ে মুঠোফোন সিমের ব্যবহার আরও কমাচ্ছে সরকার২৪ জুন ২০২৫

অপারটেরদের কাছ থেকে পাওয়া এই তালিকার ভিত্তিতে বিটিআরসির ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর জন্য ১০টি সিম নির্ধারণ করবে। ব্যবহারকারীর যতগুলো অপারেটরের সিম রয়েছে, তাদের সবার যেন অন্তত একটি সিম থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। নিজ নিজ অপারেটরের জন্য ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণের সিম হতে হবে। প্রয়োজনে অপারেটরদের বিশেষ পছন্দের দুটি সিম প্রাধান্য পেতে পারে।

ব্যবহারকারীদের ১০টি সিমের তালিকা তৈরি হয়ে গেলে বাকি সিমগুলোর নিবন্ধন বাতিলের জন্য অপারেটরদের পাঠানো হবে। এ প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।

আরও পড়ুনএক ব্যক্তির নামে ১০টির বেশি মুঠােফোন সিম দেওয়া হবে না২৫ মে ২০২৫

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ১০টির বেশি সিম বন্ধের এ প্রক্রিয়ায় কোনো গ্রাহকের প্রয়োজনীয় সিম যদি বাতিল হয়ে যায়, তবে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনরায় তা নিবন্ধন করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের ভোগান্তি যেন না হয়, তাই সময় নিয়ে কাজটি করতে হবে। আগামী ১ আগস্ট থেকে গ্রাহকদের ৩ মাসের জন্য সময় দেওয়া হবে নিজ উদ্যোগে ১০টির বেশি সিম থাকলে তা বাতিল করার জন্য। এরপর বিটিআরসি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি সিমগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে।

আরও পড়ুনদেশে নিবন্ধিত মোবাইল সিমের ৪২% নিষ্ক্রিয়২৪ জুন ২০২৪আরও পড়ুনমুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ, কিন্তু জনপ্রিয় হয়নি কেন৩১ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০টির বেশি সিম থাকলে এসএমএস-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ হবে ধাপে ধাপে