পালিয়ে যেতে পুলিশকে ১ কি.মি. ঝুলিয়ে রাখলেন অটোচালক
Published: 19th, February 2025 GMT
অবৈধ অটোরিকশা জব্দ করতে গেলে পুলিশকে ঝুলিয়ে এক কিলোমিটার নিয়ে গেলেন চালক। ভেতরে থাকা যাত্রীরা চিৎকার করেও থামাতে পারেননি অটোরিকশা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার এলাকায়।
৩ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ সদস্য ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় চলন্ত অটোরিকশার রড ধরে ঝুলে আছেন। পেছনে কয়েক যাত্রী চালককে অনুরোধ করছেন অটোরিকশা থামানোর জন্য কিন্তু চালক থামাচ্ছেন না। অটোরিকশার পাশ দিয়ে বিভিন্ন পরিবহন যাচ্ছে। পরবর্তীকালে একটি স্থানে পৌঁছালে জ্যামে আটকা অবস্থায় উপস্থিত স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ সদস্য মিলে চালককে আটক করে।
আরো পড়ুন:
সড়কে আলু ফেলে কৃষকের বিক্ষোভ
কুমিল্লায় ঘন কুয়াশায় ২টি সড়ক দুর্ঘটনা, আহত ১৫
আটক চালকের নাম জনি আহমেদ (২৪), তিনি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি গ্রামের মো.
ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য মাওনা হাইওয়ে থানার কনস্টেবল কমল দাস বলেন, ‘‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়মিত অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। সেই অংশ হিসেবে জৈনা বাজার এলাকায় অভিযান চলাকালে একটি অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে আসে। সেটি থামানোর জন্য সিগন্যাল দিই। থামানোর পর চাবি নেওয়ার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন চালক। আমি অটোরিকশায় উঠার চেষ্টা করি কিন্তু চালক অটোরিকশার গতি আরো বাড়িয়ে দেন। এরপর আমি অটোরিকশায় ঝুলে থাকি। চালককে অনুরোধ করলে গতি আরো বাড়িয়ে আমাকে ফেলে দিতে চেষ্টা করেন। আমাকে ঝুলিয়ে কমপক্ষে এক কিলোমিটার নিয়ে যাওয়া হয়।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এ সময় রিকশায় থাকা অন্য যাত্রীরা চালকে অনুরোধ করলেও তিনি অটোরিকশা থামাননি। তার উদ্দেশ্য ছিল আমাকে চাপা দিয়ে হলেও অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হই। সম্ভবত এ সময় অটোরিকশার এক যাত্রী মোবাইল ফোনে ভিডিওটা ধারণ করেছেন।’’
মাওনা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক জুয়েল বলেন, ‘‘আমরা জৈনা বাজার এলাকায় ডিউটি করছিলাম। এ সময় কয়েক যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা এলে পুলিশ কনস্টেবল কমল দাস সিগন্যাল দেন। এরপর অটোরিকশাচালক একটু গতি কমান। কনস্টেবল যখন চাবি নিতে হাত দেন, তখনই অটোরিকশা চলা শুরু করে। কনস্টেবল কমল দাস অটোরিকশায় ঝুলে যান।’’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আয়ুব আলী বলেন, ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে ভালুকা উপজেলা জামিরদিয়া এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে অভিযুক্ত চালককে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অটোরিকশা। পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/রফিক/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন প ল শ সদস য চ লকক
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’