যখন-তখন কাঁপন ধরায় ক্ষুধায় কাতর হাতি
Published: 19th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গুয়াপঞ্চক গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আবছার। পেশায় মুদি দোকানি। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে ঘরের দরজা খুলতেই দেখেন, সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক হাতি! ঘরের দরজায় এভাবে হাতি দেখেই মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা তাঁর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আবছারকে কিছুদূর টেনে নিয়ে যায়। শুঁড় থেকে ফেলে হাতিটির একটা পা তাঁর পায়ে রাখতেই ভেঙে যায় সেই পা। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। এক পর্যায়ে পালিয়ে যায় হাতি, প্রাণে বেঁচে যান নুরুল আবছার। তাঁকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নুরুল আবছারের ভাগনে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাতে হঠাৎ কোনো সাড়াশব্দ ছাড়াই বন্যহাতিটি ঘরের সামনে চলে আসে। এ সময় মামা দরজা খুলতেই হাতিটি শুঁড় দিয়ে তাঁকে টেনে নিয়ে যায়। এভাবে রাতের পাশাপাশি দিনেও হাতি নেমে আসছে লোকালয়ে। ফলে হাতি-আতঙ্ক এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।’
একসময় গাছগাছালি আর ঘন বন-জঙ্গলে ভরপুর ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো। যেখানে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। ছিল আশ্রয়, আর পর্যাপ্ত খাবারও। গাছপালা কেটে সাফ করে ফেলায় ধ্বংস হয়ে গেছে পশুপাখির আবাসভূমি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আশ্রয় হারিয়ে, খাবার না পেয়ে হাতির পাল যখন-তখন নেমে আসছে লোকালয়ে। এতে হাতির হানায় মানুষ যেমন মারা যাচ্ছে, তেমনি মানুষের রোষানলে পড়ে মারা যাচ্ছে হাতিও।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায়ই দিনে বা রাতে লোকালয়ে হাতি নেমে আসার ঘটনা ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলায় ২০১২ সালের ১ মার্চ আনোয়ারায় হাতির হামলায় শাহ মীরপুরের জুয়েল দাশ নামে এক শিশু নিহত হয়। এর পর বিভিন্ন সময় আরও হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন হাতির আক্রমণে। এ ছাড়া আহত হন অনেকে। একইভাবে গত ১০ বছরে মানুষের হাতে মারা পড়েছে ১৯টি হাতি।
কেইপিইজেডে আতঙ্ক
আনোয়ারা উপজেলার পাহাড়ে হাতির ডেরায় গড়ে তোলা হয়েছে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড)। প্রায় সময় হাতি হাজির হচ্ছে কলকারখানার সামনে। এখানেও হাতির হানায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। হাতির আক্রমণে কেইপিজেডের আশপাশের গ্রামে কয়েক বছরে অন্তুত ২০ নারী-পুরুষের প্রাণহানি হয়েছে।
কেইপিজেডে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। সম্প্রতি এখানে মো.
কেইপিজেডের একটি কারখানায় কাজ করেন শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘কেইপিজেডে কয়েকটি হাতি সব সময় ঘোরাফেরা করে থাকে। কারখানা থেকেও এগুলোকে দেখা যায়। দেখে ভয়ে গা শিউরে ওঠে। অনেক সময় আমরা হাতির সামনে পড়ে যাই। তখন কোনো না কোনো কারখানায় ঢুকে পড়ি।’
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। করণীয় নির্ধারণে উচ্চ পর্যায় থেকে কমিটিও হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বর্তমানে ৪৭টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার কর্মচারীদের অনেকেই হেঁটে কারখানায় যাতায়াত করেন। তারা সব সময় হাতির ভয়ে থাকেন।
কেপিইজেড সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে কেইপিজেডে মানুষ আর হাতির দ্বন্দ্ব নিরসনে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ইপিজেড এলাকাকে হাতির আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে হাতি রেখেই সংকট নিরসনের সুপারিশ করেছে। হাতির আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্যামেরা ও জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে হাতিগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হয়।
কোরিয়ান ইপিজেডের উপমহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘বন্যহাতির সুরক্ষায় যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়, তারা কীভাবে কেইপিজেড থেকে হাতি অপসারণ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন। তবে হাতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে না আনা পর্যন্ত কেইপিজেডে যে ৩২ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন, তাদের হাতি-আতঙ্ক কাটবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা হাতির দৈনিক ২৫ কিলোমিটার হাঁটাচলা করতে হয়। কেইপিজেডে এক কিলোমিটার জায়গাও হবে না। তার মধ্যে হাতি রাখলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটবে। তাই কেইপিজেডের বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শ্রমিক-কর্মচারীসহ স্থানীয়দের কথা চিন্তা করে দ্রুত হাতি অপসারণ করা উচিত।’
হাতির অভয়ারণ্য না রেখে ইপিজেড
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পূর্ব আনোয়ারা উপজেলার ২ হাজার ৪৯২ একর পাহাড়ি বনের বাঁশখালী থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত হাতি চলাচলের করিডোর। এই করিডোরেই গড়ে তোলা হয়েছে ইপিজেড। কথা ছিল, এই বনাঞ্চলের ৫২ ভাগ বন্যপ্রাণীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু সেটি মানা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ জামান বলেন, হাতির আবাসস্থলে ইপিজেড গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে হাতি চলাচলের পথ হারিয়ে ফেলেছে। পাশাপাশি গা-ঢাকা দেওয়ার মতো স্থান ও খাবারের উৎসগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। হাতির জন্য বনাঞ্চল ও যেসব খাবার খায় সেগুলো ব্যবস্থা করা গেলে ভারসাম্য ফিরে আসবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ উপজ ল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত